যে কারণে আয়েশ করা জরুরি

চাপে থাকলে বাড়ে রক্তের শর্করা আর হৃৎপিণ্ডের গতি। শ্বাসপ্রশ্বাসের হার বেড়ে যায়। ঘন ঘন শ্বাসপ্রশ্বাসের ফলে শরীর থেকে কার্বন ডাই–অক্সাইড বের হতে পারে না। চাপ কমাতে পারলে রক্তের শর্করা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকে। এ কারণেই জীবনে প্রয়োজন আয়েশি সময়।

আধুনিক গতিময় জীবনের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে মানসিক পীড়ায় ভোগেন বহু মানুষ। কাজ, কাজ আর কাজ—এই চক্রে ঢুকে পড়লে নিজের জন্য আয়েশি একটু সময় খুঁজে পাওয়াটাই দুষ্কর হয়ে পড়ে। নানা কারণে বাড়ে দুশ্চিন্তা আর মানসিক চাপ। যুগের সঙ্গে তাল মেলানোর চাপ, কম সময়ের মধ্যে নিখুঁতভাবে অনেক কাজ শেষ করার চ্যালেঞ্জ—এসবই আজ আমাদের নিত্যসঙ্গী। কিন্তু সুস্বাস্থ্য সুনিশ্চিত করতে আয়েশি সময় কাটানোর বিকল্প নেই।

রক্তচাপ ও হৃৎপিণ্ডের গতি নিয়ন্ত্রণ

শরীর ও মন যখন চাপে থাকে, তখন রক্তচাপ বাড়ে, বাড়ে হৃৎপিণ্ডের গতি। এমন পরিস্থিতিতে ধড়ফড় করতে পারে বুক। আয়েশি সময়ে ঘটে ঠিক এর উল্টোটা। রক্তচাপ ও হৃৎপিণ্ডের গতি থাকে সুনিয়ন্ত্রিত। চাপমুক্ত জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে পারলে হৃদ্‌রোগ এবং স্ট্রোকের মতো রোগের ঝুঁকি কমে।

সুস্বাস্থ্য সুনিশ্চিত করতে আয়েশি সময় কাটানোর বিকল্প নেই

ফুসফুসের ওপর ইতিবাচক প্রভাবে

চাপে থাকলে শ্বাসপ্রশ্বাসের হার বেড়ে যায়। ঘন ঘন শ্বাসপ্রশ্বাসের ফলে শরীর থেকে কার্বন ডাই–অক্সাইড বের হতে পারে না। কার্বন ডাই–অক্সাইড জমতে থাকলে চেপে ধরে ক্লান্তি, চিন্তা হয়ে যায় এলোমেলো, মাথাব্যথাও হতে পারে। কিন্তু চাপমুক্ত থাকলে শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি থাকে স্বাভাবিক। তখন অতিরিক্ত ক্লান্তিও অনুভূত হয় না, চিন্তাও থাকে পরিচ্ছন্ন।

রক্তের শর্করা থাকবে নিয়ন্ত্রণে

চাপে থাকলে রক্তের শর্করা বাড়ে। যাঁদের বহুমূত্র রোগ আছে, কেবল তাঁরাই নয়, বাকিদেরও রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন। অনেকেই প্রি-ডায়াবেটিস কিংবা শর্করার বিপাকজনিত সমস্যায় ভোগেন, যা থেকে পরে ডায়াবেটিস হতে পারে। চাপ কমাতে পারলে রক্তের শর্করা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকে।

হজম হবে ঠিকঠাক

আয়েশি সময়ে পরিপাক প্রক্রিয়া ঠিকঠাক চলে। পাশাপাশি ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোমে (আইবিএস) ভোগা ব্যক্তিও চাপমুক্ত থাকলে পেটের সমস্যায় কম ভোগেন।

ব্যথা, ঘুম এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকের মধ্যেই শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। অতিরিক্ত চাপে থাকলে পেশি টান টান হয়ে থাকে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত। এ থেকেই হতে পারে ব্যথার সূত্রপাত। তাই চাপ কমান।

চাপ কমাতে পারলে ঘুমও হবে ঠিকঠাক। দেহ-মন থাকবে সতেজ।

চাপমুক্ত থাকতে পারলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও থাকে ঠিকঠাক।

শেষ কথা

জীবনে যা-ই আসুক, পেরিয়ে যাবেনই—এ বিশ্বাস রাখুন। তবে দিন শেষে জীবনের চাওয়া-পাওয়ার হিসাব মেলালে ফলাফলটা মনের মতো না-ও হতে পারে। তাতে কি! জীবনটা হোক মনের মতো। জীবনযাপন হোক চাপমুক্ত। অযথা দুশ্চিন্তা করবেন না। জীবনকে সহজভাবে নিন। নিয়ন্ত্রিত শ্বাসপ্রশ্বাস, ধ্যান কিংবা মনের মতো সময় কাটানো—নানা উপায়েই নিজের ওপর থেকে চাপ কমানো যায়। মনোবিদের সহায়তাও নিতে পারেন।