শিশুরা ছাড়াও কোনো কোনো বয়স্কদের মধ্যে ঘুমিয়ে দাঁতে দাঁত ঘষা বা দাঁত কিড়মিড় করার প্রবণতা দেখা যায়। চিকিৎসাশাস্ত্রে এটিকে বলা হয় ব্রুক্সিজম। যাদের এই সমস্যা আছে, তাদের ঘুমের অন্যান্য সমস্যা (নাক ডাকা, শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি) দেখা যায়। অনেকেরই ধারণা, শিশুদের দাঁত কিড়মিড় করার কারণ কৃমি। আসলে কি কথাটি সত্য?
দৈনন্দিন জীবনে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, রাগ ও হতাশা জন্ম দিতে পারে এই দাঁত কিড়মিড়ের সমস্যা।
দুঃস্বপ্ন দেখলেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
যাঁদের মধ্যে ধূমপান, মদ্যপান, ক্যাফিনেটেড ড্রিংকস খাওয়ার প্রবণতা রয়েছে এবং যাঁরা মাদকাসক্ত, তাঁদের মধ্যে এ সমস্যাটি বেশি দেখা যায়।
কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণেও হতে পারে দাঁত কামড়ানোর সমস্যা। যেমন অ্যান্টিসাইকোটিক সেবনে এই সমস্যা হতে পারে।
একই পরিবারের অনেক সদস্যদের মধ্যে সমস্যাটি দেখা দিতে পারে। মানে পরিবারে একজনের থাকলে, অন্যদেরও হতে পারে।
এ ছাড়া ব্রুক্সিজমের সঙ্গে সম্পর্ক থাকতে পারে আরও কিছু শারীরিক সমস্যার। যেমন পারকিনসন ডিজিজ, স্মৃতিশক্তির সমস্যা, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা, খিচুনির সমস্যা ও স্লিপ অ্যাপনিয়া।
এই সমস্যা যাদের আছে, তাদের মধ্যে কী ধরনের জটিলতা হতে পারে, এবার সেটা জেনে নিন—
দাঁত ক্ষয় হয়ে যাওয়া, মাড়িতে আঘাত ও লাল হয়ে যাওয়ার সমস্যা হতে পারে।
মাথাব্যথা হতে পারে।
ঘুম থেকে জাগার পর মুখে ও চোয়ালে ব্যথা হতে পারে।
কানের সামনে যে অস্থিসন্ধি আছে, টেম্পোরোম্যান্ডিবুলার জয়েন্ট; সেখানে ব্যথা অথবা অস্বস্তি হতে পারে।
দাঁতের ক্লিপ: রাতে ঘুমানোর সময় দাঁতের পাটি যেন একটির সঙ্গে আরেকটি লেগে না যায়, সে জন্য বিশেষ ধরনের ক্লিপ পাওয়া যায়। ডেন্টিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী এই ক্লিপ ব্যবহার করতে পারেন।
মুখের ব্যায়াম: মুখের মাংসপেশিকে শক্ত করার জন্য কিছু ব্যায়াম রয়েছে, সেগুলো নিয়মিত অভ্যাস করলে মুখের চোয়াল মজবুত হবে। এতে আপনার এই দাঁত কিড়মিড়ের সমস্যা অনেকাংশ কমে যাবে।
অতিরিক্ত চিবানোর অভ্যাস: অনেকেই আছে সারা দিন ধরে কিছু না কিছু চিবান; যেমন পান, জর্দা, চুইংগাম ও মুখশুদ্ধি। এই অভ্যাস বাদ দিতে হবে।
শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য: যেহেতু দুশ্চিন্তা ও স্ট্রেস এগুলোর সঙ্গে এ সমস্যাটির সম্পর্ক রয়েছে, সে জন্য মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। আপনি যদি দীর্ঘমেয়াদি কোনো শারীরিক অসুস্থতায় ভুগে থাকেন, সেগুলোর চিকিৎসা প্রয়োজন।
ডা. নওসাবাহ্ নূর, সহকারী অধ্যাপক, মেডিসিন, পপুলার মেডিকেল কলেজ।