কালিজিরা তেলে আছে প্রচুর অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট। গবেষণা বলছে, রক্তচাপ ও রক্তের চর্বি নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করতে পারে এই তেল; অ্যাজমা ও ডায়াবেটিস রোগীরাও উপকার পেতে পারেন; ওজন কমাতে ও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ঠিক রাখতেও এই তেল সহায়তা করে। অন্যদিকে সৌন্দর্যচর্চায় দারুণ উপকারী এই তেল।
হারমনি স্পার আয়ুর্বেদিক রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা জানান, কালিজিরার তেল সরাসরি ত্বক ও চুলে ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ, এটি বেশ অম্লীয়। তাহলে ত্বক ও চুলের যত্নে কীভাবে কালিজিরার তেল কাজে লাগানো যায়, তা–ও বিস্তারিত জানান তিনি।
চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে ও কম বয়সে চুল পাকা ঠেকাতে সমপরিমাণ কালিজিরার তেল, ক্যাস্টর অয়েল ও নারকেল তেল নিন। তিন রকমের তেল একসঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে মাথার ত্বক ও চুলে লাগান। অন্তত আধা ঘণ্টা রাখুন। সারা রাত রেখে দিলেও ক্ষতি নেই। সপ্তাহে দু–তিনবার করে একটানা অন্তত দুই থেকে তিন মাস ব্যবহার করুন। সারা বছর ব্যবহার করলেও ক্ষতি নেই।
ত্বকের দাগছোপ কমাতে কালিজিরার তেল ও কাঠবাদামের তেল সমপরিমাণে নিন। এই দুটি তেল একসঙ্গে ভালোভাবে মেশালে ক্রিমের মতো হয়ে যাবে। এই ক্রিম তিন বেলা ব্যবহার করতে পারেন। একবার তৈরি করে বছরজুড়েই ব্যবহার করতে পারবেন এই ক্রিম। কাচের কৌটায় করে ফ্রিজে রাখলেই হবে। শীতে বাইরে রাখলেও ক্ষতি নেই। তবে দাগছোপ চলে গেলে এই ক্রিমের আর প্রয়োজন হয় না। আপনার ত্বক যদি তৈলাক্ত প্রকৃতির হয় কিংবা দাগছোপ খুব বেশি থাকে, তাহলে কাঠবাদাম তেলের দ্বিগুণ পরিমাণ কালিজিরা তেল দিয়ে ক্রিম তৈরি করতে পারেন।
ব্রণ দূর করতে সমপরিমাণ কালিজিরার তেল ও মধু নিন। হাত দিয়ে মিশিয়ে ব্রণের জায়গায় লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। চাইলে সারা রাত লাগিয়ে রেখে সকালেও ধোয়া যায়। ব্রণ সেরে যাওয়া অবধি রোজ প্রয়োগ করুন। মিশ্রণ তৈরির পর রোজ ব্যবহারের জন্য কাচের কৌটায় করে রেখে দিতে পারেন।
ত্বকের ময়েশ্চারাইজারের জন্য ব্যবহার করতে চাইলে কালিজিরার তেল আর গ্লিসারিন সমপরিমাণে নিয়ে ভালোভাবে বিট করে ক্রিম বানিয়ে নিন। ত্বক তৈলাক্ত প্রকৃতির হলে কিংবা একটু বেশি দাগছোপ থাকলে গ্লিসারিনের দ্বিগুণ পরিমাণ তেল নিন। তেলের সঙ্গে চাইলে অ্যালোভেরা জেলও মিশিয়ে নিতে পারেন। যতটা গ্লিসারিন নেওয়া হয়েছে, ততটাই জেল নিতে হবে। এই ক্রিম রোজ রাতে ত্বকে লাগাতে হবে। চাইলে দিনেও লাগাতে পারেন। সারা বছরের জন্য কাচের কৌটায় করে ফ্রিজে রেখে দিন। শীতকালে বাইরেও রাখতে পারেন। এই ক্রিম বলিরেখার জন্যও উপকারী।
কালিজিরার তেল খেতে চাইলে
কালিজিরার তেল খাওয়ার উপায় জানালেন রন্ধনশিল্পী সিতারা ফেরদৌস
এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ১ চা–চামচ কালিজিরার তেল মিশিয়ে খেয়ে নিতে পারেন।
মধু কিংবা তুলসী পাতার রসের সঙ্গে মিশিয়েও কালিজিরার তেল খেতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ১ চা–চামচ কালিজিরার তেলের সঙ্গে মধু কিংবা তুলসী পাতার রস নেবেন ৪ চা–চামচ।
কমলার রস কিংবা পুদিনা পাতার রসের সঙ্গেও কালিজিরার তেল মিশিয়ে নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রেও কমলার রস বা পুদিনা পাতার রস নিতে হবে ৩ চা–চামচ আর কালিজিরার তেল ১ চা–চামচ।
রান্নায় ফোড়ন দেওয়ার পরিবর্তে পদটি চুলা থেকে নামানোর আগে কালিজিরা তেল দিয়ে নিতে পারেন।
সেদ্ধ খাবার চুলা থেকে নামানোর আগেও কালিজিরা তেল যোগ করতে পারেন।
নানা রকম ভর্তা ও সালাদ বানাতে কিংবা মুড়ি মাখাতে শর্ষের তেল বা অন্যান্য তেলের বিকল্প হিসেবে কালিজিরা তেল কাজে লাগাতে পারেন।