শিশু গায়ে গরম কাপড় রাখতে চায় না?

লেপ-কাঁথা যা-ই দেওয়া হোক, ঘুমের মধ্যেই সরিয়ে দেয় শিশু
ছবি: নকশা

ছটফটে শিশু। ছুটে বেড়াচ্ছে ঘরময়। সবই ঠিকঠাক। কেবল শীতপোশাকটাই পরনে নেই। ঘুমের সময়ও একই ব্যাপার। লেপ-কম্বল যা-ই দেওয়া হোক, ঘুমের মধ্যেই সরিয়ে দিচ্ছে। অনেক বাড়িতেই এই দৃশ্য দেখা যায়। শিশু একটু ‘বড়’ হলেই এমন সমস্যার সূত্রপাত হতে পারে। আর এ নিয়ে বড়দের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। সাবধানী কোনো অভিভাবক হয়তো নিজের ঘুমের বারোটা বাজিয়ে বারবার শিশুর গায়ে গরম কাপড় দিয়ে দিচ্ছেন। কেউ হয়তো শীতপোশাক পরানোর জন্য চঞ্চল শিশুর পেছনে ছুটে বেড়াচ্ছেন ঘরময়। কেউ আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ‘সমস্যা’র সমাধানও খুঁজছেন।

এ এক অদ্ভুত ব্যাপারই বটে। বড়রা শীতে কাবু, আর শিশুরা শীতকে ‘পাত্তা’ই দিচ্ছে না! তীব্র শীতের এই সময়েও কেমন করে শীতের অনুষঙ্গ ছাড়াই দিব্যি খেলে বেড়াচ্ছে এসব শিশু? এ কারণেই কি অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে শিশু? অভিভাবকদের মনে জাগা এমন সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. তাসনুভা খান।

বাড়ন্ত শিশুর বিপাকক্রিয়ার হার বেশি হওয়ায় শীতের অনুভূতি একটু কম হয়

তিনি বলেন, ‘বাড়ন্ত শিশুর বিপাক ক্রিয়ার হার বেশি। তাই তাদের শীতের অনুভূতি একটু কম হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। তা ছাড়া শিশুদের চঞ্চলতা আর ছটফটানির জন্যও তাদের ঠান্ডা কম লাগে। ঘুমের সময়ও নড়াচড়ার ফলে লেপ-কম্বল সরে যেতে পারে। কোনো কোনো শিশু আবার ইচ্ছা করেও সরিয়ে দেয় গরম কাপড়। এসব নিয়ে দুশ্চিন্তার তেমন কিছু নেই।’

ফ্লানেলের শার্ট-প্যান্টে শিশু অনেকটাই স্বস্তিতে থাকবে

শিশু ভারী সোয়েটার বা গরম কাপড় পরতে না চাইলে সুতি আর ফ্লানেলের দুই সেট পোশাক দিয়েই শিশুকে শীতে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব, জানালেন তাসনুভা খান। ছেলে শিশু ও মেয়ে শিশু উভয়ের জন্যই সুতি এবং ফ্লানেল কাপড় দিয়ে ফুলহাতা শার্ট ও ফুলপ্যান্ট বানিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিলেন তিনি। পোশাকগুলো শিশুর মাপের চেয়ে একটু ঢিলে করে তৈরি করতে হবে। সুতির শার্ট-প্যান্ট পরিয়ে ওপরে পরিয়ে দিন ফ্লানেলের শার্ট-প্যান্ট। শিশু অনেকটাই স্বস্তিতে থাকবে। ভেতরে পাতলা সুতি কাপড়ে তৈরি শার্ট-প্যান্টের বদলে গেঞ্জি এবং লেগিংসও পরাতে পারেন। আর ফ্লানেলের বদলে অন্য কোনো আরামদায়ক, মোটা কাপড়ের পোশাকও পরানো যেতে পারে। তবে সে এসব কিছুই যদি রাখতে না চায় কিংবা এটুকুতেই যদি সে ঘেমে যায়, তাহলে সুতির শার্ট-প্যান্টই পরিয়ে দিন দুই সেট। ভেতরের শার্টটা হতে পারে হাতকাটা, ভেতরের প্যান্টটা হাফপ্যান্ট। যেসব শিশু অল্পতেই ঘেমে যায়, তাদের কৃত্রিম তন্তুর পোশাক পরাবেন না।

আরও পড়ুনঃ

শিশুদের চঞ্চলতা আর ছটফটানির জন্যও তাদের ঠান্ডা কম লাগে

কেউ কেউ অবশ্য সোয়েটার, টুপি, মোজা পরে ফুলবাবুটি সেজে বসে থাকতেও পছন্দ করে। সেটাও শিশুর জন্য স্বাভাবিক আচরণ। তবে যেসব শিশু এসব অনুষঙ্গ ব্যবহার করতেই চায় না, তাদের ঘরে পরার জন্য হালকা জুতার ব্যবস্থা রাখতে পারেন। শীতের অনুষঙ্গ না পরলে খুব শীতে সে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে, সেটিও বোঝাতে চেষ্টা করতে পারেন। ঘুমের সময়ও দুই স্তরের পোশাক পরিয়ে দিন, যাতে লেপ-কম্বল সরে গেলেও অসুবিধা না হয়। যেসব শিশু রাতে গায়ে লেপ-কম্বল রাখে না, তাদের ছোট মশারির ওপর কাঁথা বিছিয়ে দিতে পারেন। তবে মশারির ওপর কাঁথা বিছানোর সময় বিশেষ সতর্কতা রাখুন, যেন শিশুর মাথার দিকটা ফাঁকা থাকে। না হলে শিশুর নিশ্বাস নিতে সমস্যা হবে। এভাবে কিছুটা হলেও ঠান্ডা হাওয়া থেকে নিরাপত্তা পাবে। শিশু বাইরে যাওয়ার সময় তাকে বুঝিয়ে বলুন, ঠান্ডা আবহাওয়ায় কেন শীতের অনুষঙ্গ ব্যবহার করা জরুরি। তার পছন্দের রং এবং ডিজাইনের টুপি ও মোজা পরিয়ে দিন ওই সময়টুকুর জন্য। বাজারে শিশুদের পছন্দসই কার্টুনের নকশা করা শীতের অনুষঙ্গ পাওয়া যায়। হেডফোনের মতো কানটুপিও পরাতে পারেন বাইরে যাওয়ার সময়।