অনেক মায়ের অভিযোগ—বাচ্চা একদম মাছ খেতে চায় না, প্রতিদিন মাংস রাঁধতে হয়।
অথচ মাছে আছে ভালো প্রোটিন বা আমিষ যা কি না মাংসপেশি এবং হাড় গঠনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আমিষ ছাড়াও মাছে রয়েছে শরীরের জন্য অতি প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেল। যা বিপাকীয় কাজে, রোগ প্রতিরোধে, বুদ্ধি বিকাশে ভূমিকা রাখে। শুধু তা–ই নয়, ক্যানসার প্রতিরোধেও সুরক্ষা দেয়। তাই মাছ না খেলে শিশু বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি অপুষ্টিজনিত রোগে ভুগতে পারে।
আমিষের অভাবে শিশুদের মধ্যে ‘কোয়াশিয়রকর’ নামক অপুষ্টিজনিত রোগ হয়। যদিও দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির ফলে এই হার এখন কম। পরিবারের আর্থিক উন্নতির সঙ্গে শিশুর খাদ্যতালিকায় মাছ, মাংস আর ডিমের অনুপাত বেড়েছে। কিন্তু আর্থিক উন্নতির সঙ্গে মাছের অনুপাত শিশুর খাদ্যে প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়েনি।
শিশুদের মাছ খাওয়ার প্রবণতা কমে যাওয়ার একটা কারণ হলো খাদ্যাভ্যাস তৈরির সময় অনেক মা-বাবা গলায় কাঁটা আটকানোর ভয়ে মাছ দিতে চান না। আবার অনেক অভিভাবক মনে করেন মাছের চেয়ে দুধ, ডিম, মাংস বেশি ভালো। এসব কারণে দেখা যায় শুরুর খাদ্যতালিকা থেকে বাদ পড়ে যায় মাছ, শিশুর মাছ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে ওঠে না। ছোটবেলা থেকে মাছ খাওয়ার অভ্যাস না তৈরি হলে, হঠাৎ করে এই অভ্যাস গড়ে তোলা কঠিন। তাই শিশুকে একটু একটু করে মাছ খাওয়ানোর অভ্যাস করাতে হবে। সপ্তাহের খাদ্যতালিকায় পাঁচ দিন কমপক্ষে এক বেলা মাছ রাখা উচিত।
কীভাবে শিশুকে মাছ খাওয়ানোর অভ্যাস করানো যায়—
শিশুকে পরিবারের সবার সঙ্গে খেতে বসানোর অভ্যাস করাতে হবে। শিশুরা অনুকরণপ্রিয়, অন্য সদস্যদের মাছ খেতে দেখে তার মধ্যে মাছ খাওয়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি হবে।
প্রথম দিকে শিশুকে মাছের কাঁটা বেছে আস্তে আস্তে খাওয়ানোর অভ্যাস করতে হবে। নরম এবং কম কাঁটাযুক্ত মাছ দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। শিশুর অভ্যাস তৈরি হতে সময় লাগবে। কখনো কখনো ছয় সপ্তাহও লেগে যেতে পারে।
সরাসরি মাছ রান্না খেতে অনেক শিশু অনীহা প্রকাশ করে থাকে, সে ক্ষেত্রে মাছ ভেজে, কাটলেট, চপ, ফিশ ফিঙ্গার, স্যান্ডউইচ অথবা ফিশ বল তৈরি করে খাওয়ানো যেতে পারে।
শিশুরা একই ধরনের খাবার প্রতিদিন খেতে পছন্দ করে না, তাই ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে বিভিন্নভাবে মাছ রান্না করে খাওয়ানো যেতে পারে।
মাছ, মাংস, ডিম একসঙ্গে মেনুতে না রেখে একেক বেলা একেক পদ রাখলে শিশু বাধ্য হয়েও মাছ খেতে শুরু করবে।
শিশু একটু বড় হলে মাছ রান্নার সময় তাকে সঙ্গে রাখলেও মাছের প্রতি তার আগ্রহ জন্মাবে।
তবে জোর করে না খাইয়ে আস্তে আস্তে অভ্যাস করলে শিশুও আগ্রহ করে মাছ খাবে। কোনো মাছে শিশুর অ্যালার্জি আছে কি না খেয়াল রাখতে হবে।
ডা. ফারাহ দোলা: বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর