গরম এবং রোদের তাপ বাড়তে শুরু করেছে। গরমে সব সময়ই ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যায়। এদিকে রমজান মাসও চলছে। দীর্ঘ সময় রোজা রেখে এমনিতেই পানিশূন্যতা দেখা দেয়। তার সঙ্গে আবার ডায়রিয়া হলে রোগীর শারীরিক অবস্থা দ্রুত খারাপ হয়ে যেতে পারে। তাই এই রোজায় সুস্থ থাকতে হলে বেশ কিছু বিষয়ে, বিশেষ করে ইফতারে কী কী খাবেন, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। ডায়রিয়া শুধু প্রতিকার নয়, প্রতিরোধ করাটাই বেশি জরুরি।
ইফতারের সময় অনেক রকম খাবার একসঙ্গে খাওয়া উচিত নয়। পরিমিত পরিমাণ খাবার কয়েকবারে খেলে হজমে সুবিধা হয়, শরীরও সুস্থ থাকে।
ডায়রিয়ার জীবাণু (ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, প্রটোজোয়া) সাধারণত পানি এবং খাবারবাহিত। তাই খাবার তৈরির আগে ভালো করে সাবান দিইফতারের সময় অনেক রকম খাবার একসঙ্গে খাওয়া উচিত নয়। পরিমিত পরিমাণ খাবার কয়েকবারে খেলে হজমে সুবিধা হয়, শরীরও সুস্থ থাকে।
ডায়রিয়ার জীবাণু (ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, প্রটোজোয়া) সাধারণত পানি এবং খাবারবাহিত। তাই খাবার তৈরির আগে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। খাবার অবশ্যই ভালোভাবে ঢেকে রাখতে হবে। বাসি বা পুরোনো খাবার না খাওয়াই ভালো।য়ে হাত ধুতে হবে। খাবার অবশ্যই ভালোভাবে ঢেকে রাখতে হবে। বাসি বা পুরোনো খাবার না খাওয়াই ভালো।
ইফতারে খোলাবাজার থেকে খাবার না কেনাই উত্তম। রাস্তার পাশের খাবারে মাছি-কীটপতঙ্গ বসে, খাবার একই তেলে বারবার ভাজা হয়, আবার খালি হাতেই খাবারগুলো প্যাকেট করা হয়। ফলে রোগজীবাণু বেশি থাকে। মেয়াদোত্তীর্ণ বা বাসি খাবার, খাবারে যদি মাছি বসে, দূষিত পানি এবং নোংরা হাতে শরবত বানানো হয়, তাহলে সেই খাবারগুলোই ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ। এ ধরনের খাবার সব সময়ই এড়িয়ে চলতে হবে।
নিজের ঘরের খাবারও যদি ৬-৭ ঘণ্টা ফ্রিজের বাইরে থাকে, তাহলে গরমে নষ্ট হয়ে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ বেড়ে গিয়ে দ্রুত ডায়রিয়া বা বমি হতে পারে।
খাবার খাওয়ার আগে সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত না ধোয়া, থালাবাটি পরিষ্কার পানিতে না ধুয়ে খেলে, কাঁচা ফলমূল-সালাদ-শাকসবজি ঠিকমতো না ধুয়ে খেলে, মাছ-মাংস সঠিক তাপমাত্রায় রান্না না করে খেলে রোগজীবাণু থেকে যায়। এসব খাবার থেকে ডায়রিয়া হতে পারে। পচা বা বাসি খাবার গরম করে খেলেও বমি বা ডায়রিয়া হতে পারে।
ডায়রিয়া হলে পানিশূন্যতা হয়ে জটিলতা দেখা দেয়। তাই বেশি বেশি তরলজাতীয় খাবার বা পানি খেতে হবে। এ সময়ে বিশুদ্ধ পানি, স্যালাইন, ডাব, ফলের জুস বা শরবত পান করা খুব জরুরি। ডায়াবেটিস হলে অবশ্যই চিনি ছাড়া ফলের জুস খাবেন।
এ সময়ে ডায়রিয়া হলে সাধারণত তরল এবং সহজেই হজম হয় এমন তরলজাতীয় খাবার যা আবার পানি ও প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে, এমন সব খাবার খেতে হবে। স্যুপ, চিড়া বা চিড়া ভিজানো পানি, ভিজানো নরম সাগুদানা, ঘরে পাতা দই, নরম ভাত বা জাউভাত, আলু-পেঁপে-কাঁচকলা সেদ্ধ, মাছের ঝোল, কম মসলায় মুরগির মাংস, সালাদ, ফল এবং কম তেল-মসলায় রান্না করা খাবার ডায়রিয়া হলে খাওয়া উচিত।
তবে রোগী যদি মুখে খেতে না পারে, পানিশূন্যতা বেশি হয়, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়, ব্লাডপ্রেশার কমে যায়, প্রস্রাব কমে যায় বা বন্ধ হয়ে যায়, বারবার বমি হয়, প্রচণ্ড পেটব্যথা হয়, পায়খানার সঙ্গে রক্ত যায় বা অনেক পরিমাণে তরল যায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। সে ক্ষেত্রে রোগীকে শিরায় স্যালাইন দিতে হবে।
অনেকেই দ্রুত পায়খানা বা বমি বন্ধ করার জন্য ফার্মেসি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খান। আবার একটু ভালো হলেই ওষুধের ডোজ সম্পূর্ণ না করে বন্ধ করে দেন। এটা একদমই করা যাবে না। অ্যান্টিবায়োটিকে সব ডায়রিয়া ভালো হয় না; বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি করে। তাই দেহের পানিশূন্যতা দূর করার চেষ্টা করতে হবে, প্রতিবার টয়লেট শেষে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেতে হবে।
রোজা রেখে দিনের বেলা ডায়রিয়া হলে রোজা ভেঙে মুখে খাওয়ার স্যালাইন খাওয়া উচিত। নয়তো পানি ও লবণশূন্যতার ঝুঁকি থাকে।
ডা. কাকলী হালদার, সহকারী অধ্যাপক, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ