শিশুদের মাথার ত্বকে ছত্রাকের সংক্রমণ হলে লাল লাল পোঁচ দেখা যায়, প্রচণ্ড চুলকানি হতে পারে এবং চুল পড়ে যেতে পারে। সাধারণত রিং ওয়ার্ম ছত্রাকের সংক্রমণে এমনটা ঘটে। একে বলে টিনিয়া ক্যাপিটিস।
এ ছত্রাক চুলের গোড়া বা ফলিকল এবং চুলের শরীর বা শাফটকে আক্রমণ করে। কখনো কখনো ভ্রু বা চোখের পাঁপড়িকে আক্রমণ করে। সংক্রমণের ফলে প্রদাহ হয়, কখনো লালচে, আবার কখনো পুঁজভর্তি ছোপ দেখা যায়। এ প্রদাহ চুলের ক্ষতি করে এবং শিশুদের চুল ভেঙে পড়ে যায়। কখনো মাথার একটি অংশ খালি হয়ে যায়।
শিশুদের তোয়ালে, বালিশ, চিরুনি, হেয়ার ব্রাশ আলাদা রাখা উচিত।
একধরনের ছত্রাক বা ডার্মাটোফাইট এই টিনিয়া ক্যাপিটিসের জন্য দায়ী। বাংলাদেশের মতো উষ্ণ–আর্দ্র এলাকায় এ ছত্রাক বেশি আক্রমণ করে। ছত্রাক ছোঁয়াচে। তাই শিশুরা খেলতে গিয়ে বা একে অপরের সঙ্গে মেলামেশার কারণে সংক্রমিত হয়।
অনেক সময় পোষা প্রাণী যেমন কুকুর–বিড়াল থেকেও সংক্রমিত হতে পারে। যেসব শিশুর মাথা ও চুল অতিরিক্ত ঘামে, তারা বেশি ঝুঁকিতে থাকে। অন্যের ব্যবহৃত চিরুনি, টুপি, হ্যাট, হেলমেট থেকেও রোগ ছড়াতে পারে। যাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, যারা অপরিচ্ছন্ন ও আর্দ্র–অন্ধকার–স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে থাকে তারাও ভোগে বেশি।
টিনিয়া ক্যাপিটিসের চিকিৎসায় মুখে খাবার ছত্রাকরোধী ওষুধ দেওয়া হয়। অবশ্যই এ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ, সব অ্যান্টি–ফাঙ্গাল ওষুধ শিশুদের জন্য নিরাপদ নয় এবং শিশুদের ওষুধের মাত্রাও ভিন্ন। ডার্মাটোলজিস্টরা ছত্রাকরোধী শ্যাম্পু যেমন সেলেনিয়াম সালফাইড সপ্তাহে দুদিন করে ব্যবহার করতে দেন। মনে রাখবেন এটি ছত্রাক প্রতিরোধী, কিন্তু মূল চিকিৎসা নয়।
শিশুর মাথার ত্বক নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে ও ধোয়ার পর বা ঘেমে গেলে শুষ্ক করতে হবে। নিয়মিত গোসল করা ও শিশুদের উপযোগী শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ঘষে পরিষ্কার করা উচিত।
শিশুদের তোয়ালে, বালিশ, চিরুনি, হেয়ার ব্রাশ আলাদা রাখা উচিত। অন্য কারওটা ব্যবহার করা উচিত নয়।
শিশুর বালিশের কাভার, তোয়ালে, জামাকাপড় ইত্যাদি নিয়মিত ধুতে হবে।
বাড়িতে পোষা প্রাণী থাকলে তাদের নিয়মিত শ্যাম্পু ও গোসল করিয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে এবং প্রাণীর ত্বকে সংক্রমণ দেখা দিলে আলাদা রেখে চিকিৎসা দিতে হবে। পোষা প্রাণী নিয়ে খেলা বা ধরার পর হাত ভালো করে ধুয়ে দিতে হবে।
অনেক সময় খুশকি বা সেবোরিক ডার্মাটাইটিসের কারণেও শিশুদের মাথার ত্বক চুলকায় ও চুল পড়ে। এ দুটি ভিন্ন রোগ। চিকিৎসাও ভিন্ন। তাই শিশুর মাথার ত্বকে কোনো সংক্রমণ দেখা দিলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
লেখক: বিভাগীয় প্রধান, চর্মরোগ বিভাগ, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা