তেমন উপসর্গ ছাড়াই দীর্ঘদিন কারও উচ্চ রক্তচাপ থাকতে পারে। নীরবে ক্ষতি করতে পারে হৃৎপিণ্ড, কিডনি, মস্তিষ্ক, রক্তনালি ও চোখের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর। উচ্চ রক্তচাপ থাকলে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের (মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ) ঝুঁকিও বেশি। তাই উচ্চ রক্তচাপ থাকুক বা না থাকুক, আমাদের সঠিকভাবে নিয়মিত রক্তচাপ মাপতে হবে
রক্তচাপ মাপার যন্ত্র
হাসপাতাল, ক্লিনিক বা চেম্বারে সচরাচর যে ম্যানোমিটার দেখা যায়, সেটি ব্যবহার করতে পারলে সবচেয়ে ভালো। সে ক্ষেত্রে পদ্ধতিটি ভালো করে শিখে নেওয়া প্রয়োজন। বর্তমানে অটোমেটেড যন্ত্র পাওয়া যায়। বাড়িতে এটির ব্যবহার সহজ। তবে অটোমেটেড যন্ত্র নিখুঁত কি না, যাচাই করে নিতে হবে।
সঠিকভাবে রক্তচাপ মাপা
মাপার আগে অন্তত আধা ঘণ্টা চা, কফি বা ধূমপান করা যাবে না। কমপক্ষে পাঁচ মিনিট বিশ্রাম নিয়ে নিতে হবে। মাপার সময় কথা না বলা ভালো।
বাসায় মাপার ক্ষেত্রে চেয়ারে বসে মাপা ভালো। দুই পা মেঝেতে রেখে দুই হাত সামনের টেবিলে অথবা চেয়ারের হাতলে রাখুন। রক্তচাপ মাপার যন্ত্রের কাফ কনুইয়ের ভাঁজের কমপক্ষে এক ইঞ্চি ওপরে বাঁধবেন। ঢিলা করে বাঁধবেন না। স্টেথোস্কোপের ইয়ার পিস কানে লাগিয়ে ডায়াফ্রাম কনুইয়ের ভাঁজ থেকে একটু ওপরে স্থাপন করুন।
কবজির সামান্য ওপরের ধমনি আঙুলে অনুভব করে (সাধারণত যেখানে নাড়ির গতি পরীক্ষা করা হয়) কাফটি ফুলানো শুরু করতে হবে এবং মিটারের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। ফুলাতে ফুলাতে মিটারের যে দাগে গেলে আঙুলে ধমনির পালস্ আর অনুভূত হবে না, সেখান থেকে আরও ৩০ মিলিমিটার ওপরের দাগে মিটারের কাঁটা তুলতে হবে। তারপর ধীরে ধীরে এমনভাবে কাফের চাপ কমাতে হবে, যেন মিটারের কাঁটা প্রতি সেকেন্ডে ২ থেকে ৩ মিলিমিটারের বেশি না নামে।
স্টেথোস্কোপে মনোযোগ দিয়ে শব্দ শুনতে হবে। যে দাগে প্রথম শব্দ শোনা যাবে, সে দাগই হলো সিস্টোলিক রক্তচাপের মাত্রা। আর যেখানে এসে শব্দ আর শোনা যাবে না, সেটি হলো ডায়াস্টোলিক রক্তচাপের মাত্রা।
কখন বলি উচ্চ রক্তচাপ
স্বাভাবিক রক্তচাপ হলো ১২০/৮০ মিলিমিটার পারদের নিচে। রক্তচাপ ১৪০/৯০ মিলিমিটার পারদ বা এর বেশি হলে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বলে বিবেচনা করা যায়। এ দুটির মাঝামাঝি রক্তচাপ পাওয়া গেলে, একে প্রাক্-উচ্চ রক্তচাপ বলে। তবে রক্তচাপের মাত্রা বেশি পেলে উদ্বিগ্ন হবেন না। দুই মিনিট পর আবার মাপুন। পরপর অন্তত দুই দিন মেপে উচ্চ রক্তচাপ পেলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। প্রতিদিন বা বারবার রক্তচাপ মাপার দরকার নেই। তবে মাথাঘোরা, মাথাব্যথা, ঝাপসা দেখা, দম আটকে আসা ইত্যাদি সমস্যা হলে রক্তচাপ পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।
ডা. শরদিন্দু শেখর রায়, সহকারী অধ্যাপক, হৃদরোগ বিভাগ, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, ঢাকা