ভালো থাকুন

সন্তান জন্মে কখন অস্ত্রোপচার

স্বাভাবিক সন্তান প্রসব হচ্ছে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। যুগে যুগে নারীরা এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সন্তান প্রসব করে আসছেন। বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এর বিকল্প পদ্ধতিও আবিষ্কৃত হয়েছে; যা সিজারিয়ান বা সি-সেকশন নামে পরিচিত। তবে এখনো লাখ লাখ নারী স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই সন্তান জন্ম দেন।

কখন স্বাভাবিক প্রসব সম্ভব নয়

প্রথম সন্তান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্মানোর পরও দ্বিতীয় সন্তান স্বাভাবিক প্রসব হয়—উন্নত বিশ্বে এমনটি দেখা যায়। স্বাভাবিক প্রসব সবারই কাম্য। সফল স্বাভাবিক প্রসব মানে মা ও সন্তান উভয়েই সুস্থ থাকবে। চিকিৎসকের জন্যও এটি অনেক বেশি কৃতিত্বের।

তবে মনে রাখতে হবে, গর্ভকালে নানা জটিলতা যেমন মায়ের অতিরিক্ত ওজন, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, থাইরয়েডের সমস্যা, প্রি-একলাম্পসিয়া, একলাম্পসিয়াসহ নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। এসব জটিলতার কারণে অস্ত্রোপচার বাড়ছে। আবার সন্তান জন্মের সময় মা–বাবাও ঝুঁকি নিতে চান না।

আবার স্বাভাবিক প্রসবের ট্রায়ালের ক্ষেত্রে নেই কোনো জাতীয় প্রটোকল বা নির্দিষ্ট নীতিমালা। উন্নত বিশ্বে যেকোনো রোগের চিকিৎসায় রয়েছে নির্দিষ্ট জাতীয় নীতিমালা। এই নীতিমালা অনুসরণ করতে গিয়ে কখনো রোগীর মৃত্যু হলেও রোগীর পরিবারের কোনো অভিযোগ থাকে না। আর চিকিৎসকেরও দায় থাকে না।

অস্ত্রোপচারের কারণ দুই ভাগ করা যায়। একটি হচ্ছে অ্যাবসলিউট অর্থাৎ অস্ত্রোপচার ছাড়া আর কোনো উপায়ই নেই। অন্যটি হলো রিলেটিভ অর্থাৎ বিকল্প থাকলেও মা ও শিশুর জন্য অস্ত্রোপচার সবচেয়ে ভালো ভেবে তা করা হয়। অ্যাবসলিউট লক্ষণগুলো হচ্ছে, যদি মায়ের শ্রোণিচক্র বা পেলভিস খুব ছোট থাকে, গর্ভস্থ শিশু অতিরিক্ত বড় থাকে, প্রসবের পথে কোনো ফাইব্রয়েড, টিউমার বা সিস্ট থাকলে স্বাভাবিক প্রসব অসম্ভব। অস্ত্রোপচারই একমাত্র সমাধান।

এর বাইরে লেবার বা প্রসব দীর্ঘতম হলে, প্রসবের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে মাঝপথে আটকে গেলে, গর্ভে শিশুর মাথা নিচের দিকে না থাকলে, অতিরিক্ত রক্তপাতের আশঙ্কা, যমজ শিশু, ফিটাল ডিসট্রেস, প্রি–একলাম্পশিয়া, একলাম্পশিয়া ইত্যাদি। অনেক সময় প্রসবকালে দ্রুত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে রোগীর অস্ত্রোপচার দরকার পড়ে, বিশেষ করে যদি মা ও শিশুর জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ে। অকারণে অস্ত্রোপচার যেমন কাম্য নয়, তেমনি ঝুঁকিপূর্ণ স্বাভাবিক প্রসবে কালক্ষেপণও ঠিক নয়। এ জন্য বর্তমানে এ–বিষয়ক একটি জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি হয়ে উঠেছে।

  • ডা. নাজিয়া সুলতানা, সিনিয়র কনসালট্যান্ট, ইমপালস ফার্টিলিটি সেন্টার, ইমপালস হাসপাতাল, তেজগাঁও,ঢাকা