ইনজেকশনের ভীতি কমবেশি সবারই আছে। এ ভয় থেকেই অনেকে ইনসুলিন ব্যবহারের কথা শুনলে ভয় পান, ইনসুলিন নিতে অনীহা প্রকাশ করেন। কিন্তু মনে রাখা দরকার, ইনসুলিন জীবন রক্ষাকারী ওষুধ।
টাইপ-১ ডায়াবেটিস তো বটেই, টাইপ-২ ডায়াবেটিসে অনেক সময় ইনসুলিন ছাড়া গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব হয়ে পড়ে। তা ছাড়া অন্তঃসত্ত্বা, স্তন্যদায়ী মা, কাটাছেঁড়া বা কোনো সংক্রমণ হলে ইনসুলিনের বিকল্প নেই। সে জন্য ভয়কে জয় করে ইনসুলিন নিতে হয়।
চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্রে ইনসুলিন ইনজেকশন দিলে ইনসুলিনের ইতিবাচক দিক নিয়ে ভাবুন। এটি যে জীবন ও স্বাস্থ্য রক্ষায় জরুরি এবং বিভিন্ন অঙ্গের রক্ষাকবচ—এটা বুঝতে হবে। এরপর দরকার এ সম্পর্কে সঠিক প্রায়োগিক শিক্ষা—
ইনজেকশনের জন্য যথাযথ স্থান নির্ধারণ এবং প্রস্তুতি জরুরি। ইনজেকশনের যথাযথ সরঞ্জাম ঠিক করা দরকার। ব্যথা ও ঝামেলামুক্ত করতে বর্তমানে কলম বা পেন ডিভাইস ব্যবহার করা হয়। তবে সিরিঞ্জও ব্যবহার করা হয়।
ইনসুলিনের সুই রয়েছে বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের। চার, পাঁচ, ছয়, আট মিলিমিটার দীর্ঘ সুই রয়েছে সিরিঞ্জ ও কলমে ব্যবহারের জন্য। ছোট সুই মাংসে ঢুকে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। এ কারণে বর্তমানে ছোট মাপের সুইয়ের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে। শিশু ও কিশোরদের ক্ষেত্রে কলমে ৪ মিলিমিটার এবং সিরিঞ্জে সর্বনিম্ন মাপের সুই ব্যবহার করা উত্তম।
হালকা–পাতলা গড়নের শিশু–কিশোরদের ৫-৬ মিলিমিটার মাপের সুই দিয়ে ইনজেকশন দেওয়ার প্রয়োজন হলে চামড়া দুই আঙুল দিয়ে চেপে উঁচু করে ধরে ৪৫ ডিগ্রি কোনায় তা প্রয়োগ করতে হবে।
যাঁদের বেশি মাত্রার ইনসুলিন লাগে, তাদের জন্য ইউনিট ১০০–এর পরিবর্তে ইউনিট ২০০ বা তারও বেশি শক্তির ইনসুলিন ব্যবহার করা দরকার। এতে ইনসুলিনের পরিমাণ কমানো যায়, ফলে ব্যথার অনুভব কমে যায়। অম্লীয় মাধ্যমের ইনসুলিনের পরিবর্তে নিরপেক্ষ মাধ্যমের ইনসুলিনের ব্যবহার ব্যথা কমিয়ে দিতে পারে।
ইনজেকশন দেওয়ার আগে ইনসুলিন ঘরের তাপমাত্রায় নিয়ে আসতে হবে। অ্যালকোহল প্যাড দিয়ে ইনজেকশন দেওয়ার স্থান পরিষ্কার করার পর তা শুকাতে সময় দিতে হবে। চামড়া উঁচিয়ে ধরার সময় শক্তভাবে চাপ দেওয়া যাবে না। ইনজেকশন আস্তে–ধীরে দিতে হবে। রোমকূপের গোড়ায় যাতে ইনজেকশন না পড়ে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। আঘাতপ্রাপ্ত বা লালবর্ণ হয়ে আছে—এমন জায়গায় এটি দেওয়া যাবে না।
একই জায়গায় বারবার ইনজেকশন দিলে চামড়ার পুরুত্ব হ্রাস–বৃদ্ধি পেতে পারে। এতে ইনসুলিনের কার্যকারিতায় নেতিবাচক প্রভাবের পাশাপাশি ব্যথা বাড়তে পারে। ইনজেকশন দেওয়ার সময় টেনে ধরা চামড়া ধীরে ধীরে ছাড়তে হবে। ইনজেকশন প্রয়োগের পর ম্যাসাজ করবেন না।
লে. কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, আল–রাজি হাসপাতাল, ফার্মগেট, ঢাকা