বিশ্বখ্যাত মনোবিশ্লেষক সিগমুন্ড ফ্রয়েডের মতে, মানুষের অবচেতনেই থাকে ‘মৃত্যুপ্রবৃত্তি’। পরিবেশ–পরিস্থিতির প্রভাবে এই মৃত্যুপ্রবৃত্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, আর তখনই হয় তার ‘মরিবার সাধ’। কখন চরম হয়ে ওঠে এ সাধ, কী তার লক্ষণ, আর কীভাবেই–বা তাকে ফিরিয়ে আনা যাবে, এসব নিয়েই এ লেখা
বেশির ভাগ আত্মহত্যার সঙ্গেই মানসিক রোগের সম্পর্ক রয়েছে। বিষণ্নতা, ব্যক্তিত্বের সমস্যা, সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার ডিজঅর্ডার, মাদকাসক্তি ইত্যাদি মানসিক রোগের যথাযথ চিকিৎসা না করালে এবং সম্পর্কজনিত জটিলতা, ব্যর্থতা ইত্যাদি কারণে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি ঘটে থাকে।
পাশ্চাত্যে মধ্য বা শেষ বয়সী মানুষেরা একাকিত্বে ভোগেন। এ কারণে সেখানে ৪০-৫০ বছর বয়সী একাকী পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। আর বাংলাদেশে তরুণীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি।
বাংলাদেশে যৌতুক ও পারিবারিক নির্যাতন, অভিমান-আবেগ নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতা, দাম্পত্য কলহ, উত্ত্যক্ততা, প্রেম ও পরীক্ষায় ব্যর্থতা, দারিদ্র্য ও বেকারত্ব, আত্মহত্যার উপকরণের সহজপ্রাপ্যতা, মানসিক অসুস্থতা ইত্যাদি কারণে বেশির ভাগ আত্মহত্যার ঘটনাগুলো ঘটে থাকে।
‘আমেরিকান ফাউন্ডেশন ফর সুইসাইড প্রিভেনশন’–এর মেডিকেল ডিরেক্টর মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হার্বার্ট হেনডিন বলেন, নান্দনিকতার আবরণে আত্মহত্যাকে শৈল্পিক করে দর্শক বা পাঠকের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলা হলেও বেড়ে যায় আত্মহত্যার প্রবণতা। উদাহরণ হিসেবে নিউইয়র্ক টাইমস–এর একটি প্রতিবেদনের কথা তিনি বলেন, যেখানে স্কুলপড়ুয়া দুই কিশোর-কিশোরীর আত্মহত্যাকে রোমিও-জুলিয়েটের কাহিনির সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এভাবে ‘রোমান্টিক ফ্লেভার’ দেওয়ায় কিশোর-কিশোরীদের কাছে আত্মহত্যা মহৎ বা অনুকরণীয় কোনো দৃষ্টান্ত বলে ভুলভাবে উপস্থাপিত হতে পারে।
প্রচারমাধ্যমগুলোতে আত্মহত্যার সংবাদের অতিপ্রচার, অপপ্রচার বা দায়িত্বহীন পরিবেশনের কারণেও কোনো কোনো সময় আত্মহত্যার ঘটনা বাড়তে পারে। ইয়োহান ভলফগাং ফন গ্যেটের দ্য সরোজ অব ইয়াং ভার্থার উপন্যাসে আত্মহত্যাকে মহিমান্বিত করে দেখানোর পর ইউরোপে আত্মহত্যা হঠাৎ বেড়ে গিয়েছিল।
পরিবারে যদি আত্মহত্যা বা এর চেষ্টার ইতিহাস থাকে, তবে পরিবারের অন্য সদস্যদেরও আত্মহত্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়। মাদক গ্রহণ, যৌন নিপীড়নের শিকার, বয়ঃসন্ধিকালে দেহ ও মনের পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পারা, আবেগ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, ঝামেলাযুক্ত পরিবার আর নিজের যৌন–পরিচিতি নিয়ে সন্দিহান থাকা কিশোর আর তরুণদের মধ্যেও আত্মহত্যার প্রবণতা থাকে।
যারা আত্মহত্যা করে বা করতে চায়, তাদের চারটি ভাগে ভাগ করেছেন ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী এমিল দুর্খেইম। ভাগ চারটি হচ্ছে—
১. আত্মশ্লাঘাবাদী (ইগোস্টিক): সব সময় যারা নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে, সামাজিকতা পরিহার করে, নিজের সবকিছু নিয়ে অহংবোধে ভোগে।
২. পরার্থবাদী (অলট্রুস্টিক): যাদের সামাজিক সম্পৃক্ততা খুব বেশি।
৩. আত্মপরিচয়হীনবাদী (আনোমিক): যারা সামাজিক রীতিনীতির ধার ধারে না, যাদের কোনো স্বকীয় পরিচয় বা সামাজিক বন্ধন নেই।
৪. অদৃষ্টবাদী (ফেটালিস্টিক): সব সময় যারা অদৃষ্টের ওপর নির্ভরশীল এবং খুব কঠোরভাবে সামাজিক নিয়মকানুন মেনে চলে, ব্যত্যয় ঘটলে ক্ষুব্ধ হয়।
আরেক গবেষণায় দেখা যায়, মানবমস্তিষ্কের সেরিব্রোস্পাইনাল তরলের মধ্যে ‘৫-হাইড্রোক্সি ইনডোল অ্যাসেটিক অ্যাসিড’ নামের একটি রাসায়নিক পদার্থের পরিমাণ কমে গেলে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যায়। প্রথমে বিক্ষিপ্তভাবে মনের মধ্যে আত্মহত্যার চিন্তা আসে। এই চিন্তাগুলো পরে বারবার আসতে থাকে। ব্যক্তি এ চিন্তা থেকে সহজে মুক্ত হতে পারে না। আত্মহত্যার চিন্তা তার স্বাভাবিক কাজকর্মের ওপর প্রভাব ফেলে। তীব্র থেকে তীব্রতর হয় তার আত্মহননের ইচ্ছা। সে ভাবে, ‘কেন আমি বেঁচে থাকব?’ সে জীবনের ইতি টানার চিন্তা করে। একসময় তার মনে হয়, তার মরে যাওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়। কখনো আবেগতাড়িত হয়ে, আবার কখনো পরিকল্পনা করে সে মৃত্যুচেষ্টা করে। সফল না হলে আবার তার মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে আত্মহত্যার চিন্তা আসতে থাকে। এ চিন্তার চক্র থেকে সে বের হতে পারে না। এটি তার মধ্যে ফিরে ফিরে আসতে থাকে। তাই যে ব্যক্তি কথাচ্ছলেও মৃত্যুইচ্ছা ব্যক্ত করে, ধরে নিতে হবে তার মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা রয়েছে।
সাধারণত দুই ধরনের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে থাকে—
ক) আবেগতাড়িত আত্মহত্যা (ইমপালসিভ): রেগে গিয়ে বা হঠাৎ আবেগপ্রবণ হয়ে ঝোঁকের বশে মৃত্যুচেষ্টা। যেমন ঝগড়া করতে করতে হঠাৎ ছাদ থেকে লাফ দিয়ে পড়া বা কোনো মানসিক রোগের কারণ ছাড়াই আত্মহত্যার চেষ্টা করা।
খ) সংকল্পিত ও পরিকল্পিত (ডিসাইসিভ অ্যান্ড প্ল্যানড) আত্মহত্যা: এ ধরনের আত্মহত্যার ক্ষেত্রে যিনি আত্মহত্যা করতে চান, দীর্ঘ সময় ধরে তিনি আত্মহত্যার পরিকল্পনা করেন, উপকরণ সংগ্রহ করেন এবং আটঘাট বেঁধে, সুইসাইডাল নোট লিখে রেখে আত্মহত্যা করতে চান।
কীভাবে ঠেকানো যায়
যে সাধারণ বিষয়গুলোর দিকে মনোযোগ দিলে আত্মহত্যা প্রতিরোধ করা যেতে পারে, সেগুলো হচ্ছে—
শিক্ষার্থীদের সামাজিক দক্ষতা বাড়াতে তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া। পরিবার আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাদের দায়িত্ব দেওয়া। স্কুল–কলেজে, ক্লাবে সক্রিয় হতে এবং সংস্কৃতিচর্চা করতে উৎসাহিত করা।
আত্মহত্যার উপকরণ, যেমন ঘুমের ওষুধ, কীটনাশকের সহজপ্রাপ্যতা কমানো; প্রেসক্রিপশন ছাড়া ঘুমের ওষুধ বিক্রি বন্ধ করা।
যেকোনো ধরনের মানসিক সমস্যা বা আত্মহত্যার ইঙ্গিত পেলে দ্রুত মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিকটজনকে নিয়ে যাওয়া।
বিষণ্নতা, মাদকাসক্তি, ব্যক্তিত্বের বিকার, সিজোফ্রেনিয়াসহ সব ধরনের মানসিক রোগ দ্রুত শনাক্ত করে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা।
যেসব মানসিক রোগে আত্মহত্যার ঝুঁকি আছে, অবশ্যই ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। বিশ্বজুড়েই এ ধরনের ক্ষেত্রে ওষুধ প্রয়োগের নির্দেশনা দেওয়া আছে। মানসিক রোগের ওষুধ সম্পর্কে ভ্রান্ত, নেতিবাচক ধারণা আর ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয়ে মানসিক রোগকে জটিল করে ফেলা যাবে না। প্রয়োজনে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে।
আত্মহত্যার সংবাদ পরিবেশনের সময় গণমাধ্যম যাতে অনুমোদিত নির্দেশিকা মেনে চলে, সেটা নিশ্চিত করা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আত্মহত্যা বিষয়ে মন্তব্য বা ছবি পোস্ট করার সময় যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। আত্মহত্যার ঘটনাকে যেমন মহৎ করে দেখানো যাবে না, তেমনি আবার কারও মৃত্যুইচ্ছাকে বিদ্রূপও করা যাবে না।
বন্ধু–সতীর্থদের করণীয়
যারা আত্মহত্যা করে, তাদের বেশির ভাগ আগে থেকেই কিছু ইঙ্গিত দিয়ে থাকে। সহপাঠী-বন্ধুরা এই ইঙ্গিতগুলো খেয়াল করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে অনেক আত্মহত্যাই রোধ করা যায়।
যাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা রয়েছে, তারা যেসব ইঙ্গিত দিয়ে থাকেন—
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মৃত্যু আর আত্মহত্যা নিয়ে নিজের ইচ্ছার কথা প্রকাশ করে, আড্ডায় কথায় কথায় মরে যাওয়ার কথা বলে।
পরীক্ষায় অকৃতকার্যতা, প্রেমে ব্যর্থতা বা নিকটজনের আকস্মিক মৃত্যু মেনে নিতে না পারা।
আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা, ঘন ঘন মুড সুইং।
ঘুমের পরিবর্তন, সারা রাত জেগে থাকা।
নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা, হঠাৎ রেগে যাওয়া।
আত্মহত্যা বা মৃত্যুবিষয়ক কবিতা–গান লেখা, শোনা বা পড়া।
নিজের ক্ষতি করা। প্রায়ই নিজের হাত-পা কেটে বিক্ষত করা, বেশি বেশি ঘুমের ওষুধ খাওয়া।
মনমরা থাকা, সব কাজে নিরুৎসাহ, নিজেকে দোষী ভাবা—এগুলো বিষণ্নতার লক্ষণ, যা থেকে আত্মহত্যা ঘটে।
মাদকাসক্তি বা ইন্টারনেটে মাত্রারিক্ত আসক্তি।
নিজেকে গুটিয়ে রাখা, সামাজিক অনুষ্ঠান থেকে দূরে থাকা।
পড়ালেখা, খেলাধুলা, শখের বিষয় থেকে নিজে দূরে থাকা।
এ ধরনের লক্ষণ কারও মধ্যে থাকলে তাকে পাশে থেকে মনঃসামাজিক সহায়তা দিতে হবে, তাকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, কেউ মৃত্যুর কথা বললে সবাই তাকে নিয়ে হাসাহাসি করি, সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রল করি, যা ঠিক নয়। বরং তার কথায় গুরুত্ব দেওয়া উচিত। একটা বড় ভুল ধারণা প্রচলিত আছে, যারা মৃত্যুর কথা বলে, তারা আত্মহত্যা করে না। অথচ সত্য হচ্ছে, তাদের মধ্যেই আত্মহত্যার ঝুঁকি অনেক বেশি। তাই প্রতিটি মৃত্যুইচ্ছাকে আত্মহত্যার ইঙ্গিত হিসেবে ধরে নিতে হবে। এ সময় বন্ধু হয়ে তাদের পাশে থাকতে হবে।
অভিভাবক–শিক্ষকদের করণীয়
মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলতে হবে। মনের যত্ন নেওয়াটা যে গুরুত্বপূর্ণ, পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সেটা বোঝাতে হবে।
আত্মহত্যার প্রসঙ্গ উঠলে এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। আত্মহত্যা যে কোনো সমাধান নয়, সেটা বোঝাতে হবে।
শিক্ষার্থী বা সন্তান কেউ আত্মহত্যার চেষ্টা করলে কটূক্তি না করে তার প্রতি সমানুভূতি দেখাতে হবে, সাহস দিতে হবে, চিকিৎসক বা মনোবিদের সাহায্য নিতে উৎসাহিত করতে হবে।
শিক্ষার্থী বা সন্তানের বন্ধু বা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দিলে তাকে গুণগত সময় দিতে হবে। মন দিয়ে তার কথা শুনতে হবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আর ইন্টারনেটের উপযুক্ত আর যৌক্তিক ব্যবহারে উৎসাহিত করতে হবে। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনকে উৎসাহিত করতে হবে, রাত জাগা আর দিনে বেলা পর্যন্ত ঘুম নিরুৎসাহিত করতে হবে।
সন্তান বা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এমন সম্পর্ক গড়ে তুলুন, যাতে সে তার সমস্যার সমাধানের জন্য আপনার সহায়তা চাইতে ভয় না পায়।
সন্তানের আবেগের বহিঃপ্রকাশকে উৎসাহিত করুন। তার আবেগের প্রকাশ নিয়ে বিদ্রূপ করবেন না। পাশাপাশি অসামঞ্জস্যপূর্ণ আবেগের বহিঃপ্রকাশ হলে মনোচিকিৎসকের সাহায্য নিন।
মাদক গ্রহণ করার লক্ষণ দেখা দিলে উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন।
মানসিক সমস্যা বা অন্য কোনো রোগে ওষুধ খাওয়ার দরকার হলে সেগুলো এমনভাবে রাখুন, যাতে একসঙ্গে অনেক ওষুধ তার হাতে না পড়ে।
তাদের কথা মন দিয়ে শুনুন। অনেক সময় তারা অনেক কথা মুখে বলতে পারে না। না–বলা সেই কথাগুলো বোঝার চেষ্টা করুন।
মানসিক সমস্যা হলে লোকলজ্জার ভয়ে লুকিয়ে রাখবেন না। মনোচিকিৎসকের সাহায্য নিন। প্রয়োজন হলে হাসপাতালে ভর্তি করতে দ্বিধা করবেন না।
প্রতি ৪০ সেকেন্ডে ১ জন!
বিশ্বজুড়ে ১৫-২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর চতুর্থ সর্বোচ্চ কারণ আত্মহত্যা। আর এই বয়সীদের একটা বড় অংশই শিক্ষার্থী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, বছরে সাত লাখের বেশি মানুষ বিশ্বজুড়ে আত্মহত্যা করে। প্রতি ৪০ সেকেন্ডে ১ জন! যাদের মধ্যে বিষণ্নতা রোগ রয়েছে, অন্যদের চেয়ে তারা ২০ গুণ বেশি আত্মহত্যার ঝুঁকিতে রয়েছে! বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক হিসাবমতে, বাংলাদেশে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে বছরে প্রায় ছয়জন আত্মহত্যা করে। করোনাকালে এক গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৪ হাজারের বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছে। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ২০১৮ সালের এক জাতীয় জরিপ অনুযায়ী, ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের প্রায় ৫ শতাংশ একবারের জন্য হলেও আত্মহত্যার চিন্তা করেছে, আর ১ দশমিক ৫ শতাংশ একবারের জন্য হলেও পরিকল্পনা বা চেষ্টা করেছে! সেই গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা প্রায় তিন গুণ বেশি। গ্রামাঞ্চলের চেয়ে শহরাঞ্চলে আত্মহত্যার চিন্তা করার হার দ্বিগুণ।
সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আঁচল ফাউন্ডেশনের এক জরিপে দেখা যায়, ২০২২ সালে ৪৪৬ জন স্কুল–কলেজ ও মাদ্রাসাপড়ুয়া এবং ৮৬ জন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া আত্মহত্যা করেছেন। এর মধ্যে নারী শিক্ষার্থী প্রায় ৬৩ শতাংশ। আবার ১৩-১৯ বছর বয়সীরাই সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে, প্রায় ৭৬ শতাংশ। কারণ হিসেবে উঠে এসেছে পরিবারের সঙ্গে অভিমান, হতাশা, যৌন হয়রানি, সাইবার বুলিং, পরীক্ষায় অকৃতকার্য, পড়ার চাপ, মাদকাসক্তি, পারিবারিক কলহ, মানসিক সমস্যা, আর্থিক সংকট ইত্যাদি।