ঠান্ডায় নাক বন্ধ হয়ে গেলে কী করবেন

হিমেল ঠান্ডা বাতাস আর ভোরে কুয়াশার চাদরে ঢাকা জনপদ জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। আবহাওয়া পরিবর্তনের এই সময়ে সুপ্ত ভাইরাসগুলো যেমন সক্রিয় হয়ে ওঠে, তেমনি শুষ্কতা আর ধুলাবালির কারণে অ্যালার্জির সমস্যাও বেড়ে যায়। বেশির ভাগ মানুষ এ সময় সর্দি–কাশি, নাক বন্ধ ইত্যাদি সমস্যায় ভোগেন। নাক বন্ধ হওয়া একটি বিরক্তিকর সমস্যা। আসুন জেনে নিই, নাক বন্ধ হলে আমরা কী করব।

এ সময় অনেকেই সর্দি–কাশি, নাক বন্ধ ইত্যাদি সমস্যায় ভোগেন
ছবি: প্রথম আলো

কীভাবে নাক বন্ধ হয়

আমরা সবাই জানি, নাকের ভেতরে সিলিয়া নামের ছোট ছোট চুলের মতো থাকে, যা বাইরের ধুলাবালি ও জীবাণু শরীরে প্রবেশ করতে বাধা দেয়। কখনো কখনো ভাইরাস বা এ ধরনের জীবাণু বা ধুলাবালি নাকের ভেতর একধরনের ক্ষত তৈরি করে। আবার আমাদের ইমিউন সিস্টেম জীবাণু প্রতিরোধ করতে গিয়ে নাকের ভেতরে মিউকাস তৈরি করে। ফলে নাকের ভেতরের স্তর ফুলে গিয়ে নাক বন্ধ হয়ে যায়। নাক বন্ধ থাকলে আমাদের শ্বাস নিতে সমস্যা হয় আবার মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়ার ফলে মুখ শুকিয়ে অস্বস্তি লাগতে থাকে।

কারণ কী

নাক বন্ধ হওয়ার অন্যতম কারণ অ্যালার্জি। শীতের এই সময়ে বাতাসে অনেক ধুলা থাকে, এ ছাড়া শীতের পশমি কাপড়, বসন্তকালে পোলেন, পোষা প্রাণীর পশম—এগুলোও অ্যালার্জেন হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া নন–অ্যালার্জেন যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, রাস্তায় যানবাহন ও কলকারখানার ধোয়াঁ, ইনফেকশন, নাকের ভেতরে এডেনয়েড গ্ল্যান্ড ইত্যাদি নাক বন্ধ হওয়ার অন্যতম কারণ।

নাক বন্ধ থাকলে মেনথল মেশানো গরম পানির ভাপ নিতে পারেন

কী করব

অনেকেই নাক বন্ধ হলে নাকের ড্রপ বা স্প্রে ব্যবহার করেন। এটি তাৎক্ষণিক আরাম দিলেও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার করলে নাকের ক্ষতি হয়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এগুলো ব্যবহার করা যাবে না। এর চেয়ে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি জেনে নিই।

প্রচুর পানি ও পানিজাতীয় খাবার খেতে হবে, যেমন স্যুপ, জুস, আদা–চা। পানি শরীরকে আর্দ্র রাখে। ফলে নাকের মিউকাসকে পাতলা রাখে ও নাক বন্ধ হতে দেয় না।

হালকা গরম পানিতে একটু লবণ মিশিয়ে স্যালাইন পানি বানানো যায়, যা স্প্রে করে বা তুলার সাহায্যে নাকে দিলে মিউকাস পরিষ্কার হয়ে যায়।

গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে নাক ও নাকের চারদিকে কিছুক্ষণ চেপে রাখলে উপকার পাওয়া যায়।

গরম পানিতে কিছু মেন্থল ও ইউক্যালিপটাস অয়েল মিশিয়ে বাষ্প নাক দিয়ে টানতে হবে। এতেই নাক খুলে যাবে। অনেক ওষুধ কোম্পানি এমন সাসপেনশন বাজারে এনেছে।

হালকা গরম পানিতে গোসল করলেও আরাম পাওয়া যাবে।

ঘরে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করুন। এতে ঘরের বাতাস যেমন নির্মল থাকবে, শ্বাস নিতেও কষ্ট হবে না। নাকের ইনফ্লেশন কম হবে।

ভিটামিন সি, মধু, আদা, পুদিনা পাতা—এগুলোতে অ্যান্টি–ইনফ্ল্যামেটরি প্রভাব আছে। আবার ঠান্ডা লাগা কমাতেও খুব কার্যকর। তাই শীতকালে খাদ্যতালিকায় এসব খাবার নিয়মিত রাখুন।

সর্দি-কাশি, গলাব্যথা হলে সকাল-বিকেল চা পান করতে পারে

কখন চিকিৎসকের কাছে যাব

ঘরোয়া চিকিৎসায় ১০ দিনে বন্ধ নাক না খুললে

নাক থেকে হলুদ, সবুজ বা রক্তসহ সর্দি এলে

জ্বর থাকলে

ছোট শিশুরা খাবার খেতে না পারলে

ডা. আফলাতুন আকতার জাহান, মেডিসিন স্পেশালিস্ট, ইন্টার্নাল মেডিসিন বিভাগ, স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড, ঢাক