বন্যার্তরা ত্বকের রোগ ঠেকাতে যা করতে পারেন

বন্যার পানি জীবনযাপনে নিয়ে আসতে পারে নানা রোগ
ছবি: আনিস মাহমুদ

বন্যার পানি যে শুধু স্বাভাবিক জীবনযাত্রার অন্তরায়, তা নয়, নানান রোগেরও উৎস। অন্যান্য রোগের পাশাপাশি ত্বকের সমস্যাতেও ভুগতে পারেন বন্যার্ত মানুষ। ছোটদের ত্বকেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে এ সময়। যেকোনো বয়সেই ভেজা ত্বকে ছত্রাক সংক্রমণ হতে পারে। খোসপাঁচড়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে বন্যার সময়। বন্যার পানির সঙ্গে ভেসে আসে নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়া, পানিতে মিশে থাকতে পারে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ। ত্বকে ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ কিংবা অ্যালার্জির কারণে চুলকানি বা লালচে ভাব হতে পারে; সৃষ্টি হতে পারে ক্ষত। বন্যার পানির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে পারলে ত্বক থাকবে সুরক্ষিত। তবে বাস্তবতা হলো, আকস্মিক বন্যায় সব সময় এ ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই সমস্যার বাস্তব সমাধানের ব্যাপারে জেনে রাখা প্রয়োজন। পানি থেকে নিরাপদ জায়গায় সরে যাওয়ার পর খেয়াল রাখতে পারেন এসব বিষয়ে। এই সময় ত্বকের সুরক্ষার নানা দিক সম্পর্কে নানান তথ্য জানালেন চর্মরোগ–বিশেষজ্ঞ ডা. ইসরাত খান।

যা করা প্রয়োজন

বন্যার পানির সংস্পর্শে এলে যত দ্রুত সম্ভব সাবান ও পরিষ্কার পানিতে ত্বক পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। পরিষ্কার পানি না পেলে জীবাণুনাশক দ্রবণ দিয়ে ত্বকের ওই অংশ পরিষ্কার করে ফেলুন। এরপর শুকিয়ে ফেলুন পরিষ্কার কাপড় দিয়ে। আঙুলের ফাঁকের ত্বক কিংবা ত্বকের অন্যান্য ভাঁজে ভেজা ভাব রয়ে যেতে পারে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত। এসব অংশ ভালোভাবে মোছার ব্যাপারে যত্নশীল হতে হবে।

খোসপাঁচড়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে বন্যার সময়

শরীর পরিষ্কার করার জন্য ভালো পানি ব্যবহার করুন। অল্প পানি পেলে অবশ্য গোসল করার সুযোগ নেই। সে ক্ষেত্রে ওই পানিতে পরিষ্কার কাপড় ভিজিয়ে মুখ, মাথা ও শরীর মুছে ফেলতে পারেন। খেয়াল রাখবেন, দীর্ঘদিন ত্বক পরিষ্কার না করার ফলে ত্বকে নানা ধরনের সমস্যার ঝুঁকি বাড়তে পারে।

যেসব কাপড় বন্যার পানির সংস্পর্শে এসেছে, সেগুলো উষ্ণ পানি ও ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে এরপর ব্যবহার করা উচিত। পোশাক-আশাক, বিছানার চাদরসহ সব ধরনের কাপড়ের ক্ষেত্রেই এ নিয়ম মেনে চলা প্রয়োজন।

বন্যার পর ঘরবাড়ি বা আশপাশের জায়গা পরিষ্কার করার সময় সতর্ক থাকা প্রয়োজন, যাতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সময় চোখা বা ধারালো কোনো বস্তু দিয়ে ত্বকে আঘাত লেগে না যায়। কারণ, বন্যার পানিতে ঠিক কী কী ভেসে এসেছে, তা কারও জানা নেই। আপাতদৃষ্টে যেখানে কেবল কাদা জমেছে বলে মনে হচ্ছে, সেখানে থাকতে পারে ব্লেড, পিন, কাঁটাসহ নানা বিপজ্জনক বস্তু।

ত্বক যদি কোনোভাবে কেটে বা ছড়ে গিয়েই থাকে, তাহলে আবার প্রয়োজন বাড়তি সতর্কতা। যখন বন্যার পানির সংস্পর্শে আসার ঝুঁকি থাকবে, তখন ত্বকের কাটাছেঁড়া অংশ অবশ্যই পানিরোধী ব্যান্ডেজ দিয়ে ঢেকে রাখতে চেষ্টা করতে হবে। পানিরোধী ব্যান্ডেজ যদি নিতান্তই না পাওয়া যায়, তাহলে গজ, আর সেটাও না পাওয়া গেলে কাপড় পেঁচিয়ে রাখবে। চেষ্টা করবে ক্ষতস্থানে যাতে বন্যার পানি না লাগে। তারপরও লেগে গেলে দ্রুত পরিষ্কার করে শুকিয়ে ফেলতে হবে।

যা করা যাবে না

ভেজা কাপড়ে থাকা যাবে না। বদলে ফেলতে হবে যত দ্রুত সম্ভব।

বন্যার পানিতে খালি পায়ে নামা যাবে না। বন্যার পানি পেরিয়ে কোথাও যেতে হলে রাবারের বুট পরা প্রয়োজন। রাবারের বুট না পাওয়া গেলে পানিরোধী অন্য কোনো জুতা, যেমন প্লাস্টিকের জুতা পরা যেতে পারে। তা–ও না থাকলে যে জুতা রয়েছে কাছে, সেটাই পরতে হবে। জুতা না থাকলে স্যান্ডেল পরতে পারে। বন্যার পানি থেকে চলে আসার পর দ্রুত পা সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে শুকিয়ে ফেলতে হবে।

বন্যাপরবর্তী সময়ে, অর্থাৎ পানি নেমে যাওয়ার পরেও সেখানে খালি পায়ে না হাঁটাই ভালো

যেসব জায়গা বন্যার পানির সংস্পর্শে এসেছে, বন্যাপরবর্তী সময়ে, অর্থাৎ পানি নেমে যাওয়ার পরেও সেখানে খালি পায়ে না হাঁটাই ভালো; স্যান্ডেল বা জুতা ব্যবহার করতে হবে। এমনকি ঘরের ভেতরকার পানি নেমে যাওয়ার পরেও সঠিকভাবে পরিষ্কার করার আগপর্যন্ত স্যান্ডেল বা জুতা ছাড়া হাঁটা যাবে না।

শিশুর খেলনা বন্যার পানির সংস্পর্শে এলে ভালোভাবে পরিষ্কার না করে তার হাতে দেওয়া যাবে না। তুলা বা ফোমজাতীয় উপকরণের তৈরি খেলনা, যেগুলোর ভেতরে পানি শোষিত হয়ে যায়, সেগুলো ফেলে দেওয়াই উত্তম।