বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের আচরণে নানা রকম পরিবর্তন হতে থাকে। বড় হওয়ার এই পথযাত্রায় দুষ্টুমি করাও একটি স্বাভাবিক আচরণ। কেউ কেউ একটু বেশিই দুষ্টুমি করে। কখনো কখনো এই দুষ্টুমি বা আচরণ মা-বাবাকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়, তাই তাঁরাও প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে ফেলেন। শিশুর গায়ে হাত তোলেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের আচরণ শিশুর ওপর মানসিক চাপ তৈরি করে, তার বেড়ে ওঠাকে বাধাগ্রস্ত করে।
শিশুদের দুষ্টুমিও সবার ক্ষেত্রে এক রকম নয়। প্রতিটি শিশুই স্বতন্ত্র। কেউ কেউ হাতে-পায়ে চঞ্চল; স্থিরভাবে কোথাও একটানা বসতে বা দাঁড়াতে পারে না, দৌড়াদৌড়ি-লাফালাফি করতেই থাকে। আবার কেউ কেউ জিনিসপত্র ছোড়ে, ভাঙচুর করে, অযত্ন করে অথবা আচমকা কাউকে আঁচড়ে, কামড়ে দেয়, মারধর করে, থুতু দেয় ইত্যাদি। শিশুদের এসব আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে সঠিকভাবে বড় করে তোলা অভিভাবকদের জন্য একটা বড় যুদ্ধ। শিশুরা অনেক বেশি অনুকরণপ্রিয়। তারা চারপাশে যা দেখে, তা-ই শেখে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুদের মুখে বলে যতটা না শেখানো যায়, তার চেয়ে বেশি তারা শেখে আশপাশের আচরণ দেখে। ছোটবেলায় শেখা এসব আচরণ ভবিষ্যতে সে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কীভাবে প্রকাশ করবে, তা কিছুটা নির্ধারণ করে।
শিশুদের প্রধান আশ্রয় হলো মা-বাবা। শিশুরা দুষ্টুমি করলে মা-বাবা যদি গায়ে হাত তোলেন, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এতে করে যদিও ভাবা হয় যে শিশুর ভালোর জন্য করা হচ্ছে, আদতে লাভের থেকে ক্ষতি হবে বেশি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুদের মারধর করলে তারা ভীত হয়ে যায়। কারও কারও ক্ষেত্রে আবার জিদ তৈরি হয়। অনেক ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে তাদের মধ্যে প্রতিশোধপ্রবণতা দেখা দিতে পারে। এ কারণে গায়ে হাত তুললে শিশুর ভবিষ্যৎ জীবনে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। যেসব শিশু মা-বাবার কাছ থেকে লাঞ্ছনা পেতে থাকে, ভবিষ্যতে তাদের বিভিন্ন অসামাজিক কাজে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
তাই সন্তান দুষ্টুমি করলে মা-বাবার আচরণ কেমন হওয়া উচিত, বিশেষজ্ঞরা সে বিষয়ে কিছু পরামর্শ রেখেছেন। তাঁদের মতে-
সন্তান দুষ্টুমি করলে তাকে সবার সামনে বকা না দিয়ে আড়ালে নিয়ে বুঝিয়ে বলতে হবে।
সমবয়সীদের সামনে সন্তানের গায়ে হাত তুললে বা বকা দিলে সন্তান হীনম্মন্যতায় ভুগতে পারে। এতে সন্তানের আত্মবিশ্বাস কমে যায়। ভবিষ্যতে শিশুর জন্য যা নেতিবাচক।
শিশুরা বেশির ভাগ সময়েই না বুঝে দুষ্টুমি করে। তাই তাদের বুঝিয়ে বলা উচিত কোন আচরণ ভালো, কোনটি খারাপ। একটা বয়সে দেখা যায়, দুষ্টুমি ভালোই লাগে। পরিবারের সদস্যরা এটা নিয়ে মজার ছলে আলোচনা করতে থাকেন। পরবর্তী সময় এ আচরণই হয়তো বিব্রতকর হয়ে পড়ে। তাই এ বিষয়ে অভিভাবকদের সতর্ক থাকা উচিত।
শিশুদের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার তাদের নতুন অনেক বিষয় জানতে ও শিখতে সাহায্য করবে।
সন্তান যখন কোনো ভালো কাজ করবে, তখন অবশ্যই তাকে সেটার জন্য ধন্যবাদ জানানো উচিত। যদি সম্ভব হয় পুরস্কৃত করা যেতে পারে। হতে পারে সেটা খুব ছোট্ট জিনিস, কিন্তু এতে সে ভবিষ্যতেও ভালো কাজ করার উৎসাহ বোধ করবে। এতে সে নিজের সম্পর্কে ভালো বোধ করবে। অন্যের সঙ্গেও কেমন আচরণ করবে, সেটাও ইতিবাচকভাবে শিখবে।
শিশুরা যাতে তাদের অনুভূতিগুলো বা তাদের সমস্যা, মনোভাব পরিবার এবং কাছের সদস্যদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারে, সে ধরনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন।
সহযোগিতা ও সহমর্মিতায় উৎসাহিত করা প্রয়োজন।
খেলাধুলার সুযোগ করে দিতে হবে।
আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন, শিশুর সঙ্গে পরিবারের সবার একই ধরনের আচরণ করা উচিত। কোনো দুষ্টুমি বা অন্যায় কেউ শাসন আবার কেউ প্রশ্রয় দিলে হিতে বিপরীত হতে পারে। এতে শিশু পরিবারের সদস্যদের সম্মান করতে শেখে না।
পরিবারের সব সদস্যের সম্মিলিত চেষ্টাতেই শিশু ভবিষ্যতে একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে প্রকাশ লাভ করবে। তবে যদি দুষ্টুমি একদমই অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়, সব সময় খিটখিটে থাকে, অতিরিক্ত কান্নাকাটি করে, অতিচঞ্চলতা বা অমনোযোগী থাকে, অবাধ্য আচরণ করে, তাহলে শিশুর কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না জানার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।