জেনে নিন ফ্যাটি লিভার নিয়ে ৮টি জরুরি বিষয়

বাংলাদেশে ফ্যাটি লিভারের হার ৩৩ শতাংশ, অর্থাৎ প্রতি তিনজনের একজনই এই রোগে আক্রান্ত, যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ। বিষয়টি শঙ্কার। বাংলাদেশে পুরুষের তুলনায় নারীরা ফ্যাটি লিভারে বেশি আক্রান্ত। বিষয়টি সম্পর্কে সবার সচেতন থাকা জরুরি।

যকৃত বা লিভারে চর্বির উপস্থিতিকে ফ্যাটি লিভার বলা হয়

ফ্যাটি লিভার কী
যকৃত বা লিভারে চর্বির উপস্থিতিকে ফ্যাটি লিভার বলা হয়। যদি এর কারণ হিসেবে মদ্যপানের ইতিহাস না থাকে, তবে তাকে নন–অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (এনএএফএলডি) বলা হয়।

ফ্যাটি লিভারের কারণ কী
চাহিদার অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ ও শারীরিক পরিশ্রমবিহীন জীবনযাপন লিভারে চর্বি জমার প্রধান কারণ। এ ছাড়া মেটাবলিক সিনড্রোম (উচ্চ রক্তচাপ, টাইপ–২ ডায়াবেটিস, রক্তে অতিরিক্ত চর্বির মাত্রা, স্থূলতা, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স, অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড), কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, হেপাটাইটিস সি, উইলসন ডিজিজ, অতিরিক্ত মদ্যপান ইত্যাদি কারণেও লিভারে চর্বি জমা হয়।

লিভারে চর্বি জমলে কী হয়
লিভারে চর্বি জমার পরিণতি নানা রকম হতে পারে। নন–অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারে শুধু চর্বি জমতে দেখা যায়। নন–অ্যালকোহলিক স্ট্যায়াটোহেপাটাইটিসে (ন্যাশ) চর্বি জমার পাশাপাশি লিভারে প্রদাহ হয়। লিভার ফাইব্রোসিসে যকৃতের কোষকলাগুলো শক্ত হয়ে যেতে থাকে। ন্যাশ রোগীর শেষ পর্যন্ত লিভার সিরোসিস হতে পারে। এমনকি ফ্যাটি লিভার থেকে লিভার ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি আছে।

ফ্যাটি লিভারের স্বাস্থ্যঝুঁকি কী
লিভারের সমস্যা ছাড়াও ফ্যাটি লিভার রোগীদের ডায়াবেটিস, কার্ডিও ভাসকুলার ডিজিজ, যেমন হৃদ্‌রোগ, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা, রক্তে অতিরিক্ত চর্বি, কোলন ক্যানসার ও কিডনি রোগের ঝুঁকি আছে।

কাদের ফ্যাটি লিভার পরীক্ষা করা প্রয়োজন
যাঁদের টাইপ–২ ডায়াবেটিস আছে, যাঁরা অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতায় ভুগছেন। যদি রুটিন পরীক্ষায় ছয় মাসের বেশি সময় ধরে বাড়তি লিভার এনজাইম (এএলটি, এএসটি) পাওয়া যায়, তাহলেও পরীক্ষা করতে হবে। যাঁদের হৃদ্‌রোগ বা কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ আছে, মেটাবলিক সিনড্রোমের (উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা, ডায়াবেটিস, রক্তে অতিরিক্ত চর্বি) রোগীদেরও পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ কী
ফ্যাটি লিভারের রোগীরা কোনো উপসর্গবিহীন থাকতে পারেন। তবে কারও পেটের ডান দিকে ব্যথা বা অস্বস্তি লাগা, ক্লান্তি অনুভব করা, ঝিমুনি ভাব, লিভারের গুরুতর রোগ, জন্ডিস, ওজন কমে যাওয়া, শরীর ফুলে যাওয়াসহ নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

কী পরীক্ষা করলে ফ্যাটি লিভার ধরা পড়ে
চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ফ্যাটি লিভার শনাক্ত করতে পেটের আলট্রাসনোগ্রাফি, কিছু রক্ত পরীক্ষা (এসজিপিটি), লিভারের ফাইব্রোস্ক্যান ও ক্যাপ এবং বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে লিভার বায়োপসি দরকার পড়ে।

ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসা কী
ফ্যাটি লিভার রোগে আক্রান্ত হলে লিভার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। জীবনযাপনে ইতিবাচক পরিবর্তন ফ্যাটি লিভারের প্রধান চিকিৎসা।
১. খাবারে ক্যালরির পরিমাণ কমাতে হবে। খাবারে শর্করা ও স্নেহজাতীয় খাবারের পরিমাণ কমাতে হবে। খাসি ও গরুর মাংস কমিয়ে শাকসবজি, ফল ও মাছের পরিমাণ বাড়িয়ে দিন। কোমল পানীয়, ফাস্টফুড, মদ্যপান পরিহার করুন।
২. শারীরিক পরিশ্রম ফ্যাটি লিভার চিকিৎসার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট শরীরচর্চা (নিয়মিত হাঁটা, সাইক্লিং, সাঁতার কাটা ইত্যাদি) প্রয়োজন।
৩. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
৪. লিভার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনে ফ্যাটি লিভারের ওষুধ গ্রহণ করুন।
৫. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্‌রোগ, রক্তে অতিরিক্ত চর্বির সঠিক চিকিৎসা নিন।

ডা. আরিফা তাসনীম, শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা