জলবসন্ত বা চিকেন পক্স (ভ্যারিসেলা) তীব্র ছোঁয়াচে একটি রোগ। এটি মূলত জানুয়ারি থেকে মে, অর্থাৎ শীত ও বসন্ত ঋতুতে বেশি হয়। ৯০ শতাংশ চিকেন পক্স অনূর্ধ্ব ১০ বছরের শিশুদের হয়ে থাকে। বেশি দেখা যায় ৫ থেকে ৯ বছর বয়সের মধ্যে। তবে রোগটি যেকোনো বয়সে হতে পারে, এমনকি নবজাতকেরও।
আক্রান্ত শিশুর সংসর্গে থাকা স্কুলের বন্ধুদের বা পরিবারের সদস্যদের প্রায় ৯০ শতাংশ আক্রান্ত হয়। রোগ ছড়ায় সরাসরি সংসর্গে এবং হাঁচি, কাশি, থুতু-লালার সাহায্যে। জলভরা কাঁচা ফোসকায় জীবাণু থাকে।
তা ফেটে গেলে বা খুঁটে ফেললে রোগ ছড়াতে পারে। র্যাশ বেরোনোর ২৪ ঘণ্টা থেকে সব খোসা উঠে যাওয়া পর্যন্ত রোগ ছড়ায়। যা সাধারণভাবে সাত-আট দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
শরীরে ভ্যারিসেলা জসটার নামক ভাইরাস প্রবেশের সময় থেকে রোগের লক্ষণ ফুটে ওঠার মধ্যবর্তী সময় ১১ থেকে ১২ দিনের মতো। সাধারণভাবে র্যাশ বেরোনোর ২৪ ঘণ্টা আগে থেকে উপসর্গ দেখা যায়। ম্যাকিউল হয়ে জলভরা ফোসকা বা প্যাপিউল হয়। এরপর সেসব পুঁজভরা দানায় (প্যাসচিউল) রূপান্তরিত হয়। এই র্যাশ প্রথমে শুরু হয় বুকে-পিঠে, পরে তা হাতে-মুখে ও সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। খুব চুলকায়। মুখের ভেতরে তালুতে জলভর্তি দানা দেখা দেয়।
র্যাশ ছাড়া জ্বর, বমি ভাব, বমি দেখা যেতে পারে। ৬-৭ দিন পর থেকে র্যাশ শুকাতে শুরু করে। ১৩-১৪ দিন থেকে খোসা পড়তে শুরু। এরপর রোগ নিরাময় পর্ব।
চিকেন পক্সের জটিলতা বেশি দেখা যায় না। কখনো কখনো এনকেফালাইটিস, ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ ও নিউমোনিয়া হতে দেখা যায়।
তবে কোনো শিশু রোগ প্রতিরোধক শক্তিতে দুর্বল থাকলে, যেমন লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত শিশু, স্টেরয়েডনির্ভর শিশু, মারাত্মক নিউমোনিয়া, রক্তপাতসর্বস্ব জটিলতা—এসবের শিকার হয়।
সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। শিশুর স্বাভাবিক খাবার, পানি ও পানীয় বেশি বেশি খাওয়াতে হবে।
চুলকানি লাঘবের ওষুধ দিতে হবে। নখ ছোট রাখাসহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরতে হবে।
জ্বর কমানোর জন্য অ্যাসপিরিন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তবে প্যারাসিটামল দেওয়া যাবে।
চিকিৎসকের পরামর্শে এনসাইক্লোভির ওষুধ, পক্সের সংসর্গে আসা শিশুকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ভ্যারিসেলা জসটার ইমিউনোগ্লোবুলিন প্রয়োগ করা যেতে পারে।
চিকেন পক্স টিকা যথেষ্ট নিরাপদ। ১২ মাস থেকে ১২ বছরের শিশুকে এক ডোজ টিকা দিতে হবে।
অধ্যাপক ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল