দুধ চা খেলে ওজন বাড়বে কি না, তা নির্ভর করবে চায়ে ব্যবহৃত উপাদানের ওপর। চায়ে তেমন কোনো ক্যালরি নেই। তবে এর অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, চায়ে দুধ মেশালে এর অ্যান্টি–অক্সিডেন্টের পরিমাণ কমে যেতে পারে। আর পরিশোধিত চিনি ক্যালরি ছাড়া তেমন স্বাস্থ্যের জন্য উপকারে দেয় না। চিনি কতটুকু দিচ্ছেন, কোন দুধ ব্যবহার করছেন এবং দিনে কতবার চা খাচ্ছেন, তার ওপর নির্ভর করে ওজন বাড়ার সম্পর্ক আছে।
ওজন বাড়ার ওপর দুধ চায়ের প্রভাব ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ভিন্ন হতে পারে। বয়স, বংশগতি, শারীরিক ক্রিয়াকলাপ, জীবনধারা ও সামগ্রিক খাদ্যের মতো কিছু কারণ প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন কম বয়সের ব্যক্তি, যাঁরা নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করেন, তাঁদের চেয়ে যাঁরা বয়স্ক বা প্রবীণ, তাঁদের অলস জীবনধারা কম শারীরিক পরিশ্রমের কারণে দুধ চা থেকে ক্যালরি পোড়াতে কম সক্ষম। তবে দুধ চা খাওয়ার নিয়ম বা কৌশল জানলে ওজন বাড়ার ভয় থেকে কিছুটা মুক্ত থাকা যায়।
১. বাজারে অনেক ধরনের দুধ পাওয়া যায়, যেমন লো-ফ্যাট, টোনড মিল্ক, ফুলক্রিম গুঁড়া দুধ ইত্যাদি। এসব দুধের পুষ্টিগুণ এক হলেও ফ্যাট বা চর্বির পরিমাণ আলাদা। তাই দুধ চা খেতে হবে চর্বি ছাড়া।
২. দুধ চা বানানোর সময় দুধ যেন পাতলা হয় আর পানি হয় বেশি। এতে দুধ সহজেই হজম হবে, গ্যাস বা অ্যাসিডিটি হবে না।
৩. পরিমিত পরিমাণে দুধ চা পান করুন। সারা দিনে এক থেকে দুবার। কারণ, চায়ে আছে ক্যাফেইন আর দুধে আছে বিভিন্ন ভিটামিন, মিনারেল। অতিরিক্ত চা খেলে ক্যাফেইনের মাত্রা বেড়ে গিয়ে শরীরে নানান সমস্যা হতে পারে।
৪. দুধ চায়ে পরিশোধিত চিনি ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক চিনি স্টিভিয়া ব্যবহার করতে পারেন, বিশেষ করে যাঁদের ডায়াবেটিস আছে। আর যাঁদের ডায়াবেটিস নেই কিংবা কোনো শারীরিক জটিলতা নেই, তাঁরা চিনির পরিবর্তে অল্প পরিমাণ লাল চিনি, গুড়, মধু ব্যবহার করতে পারেন।
৫. দুধ চায়ে আদা, দারুচিনি, এলাচি মিশিয়ে খেলে মেটাবলিজম উন্নত করে চর্বি পোড়াতে সাহায্য করবে, ওজন থাকবে নিয়ন্ত্রণে।
৬. দুধ চায়ে চিনি ছাড়া কোকো পাউডার মেশাতে পারেন। কোকো পাউডার ফাইটোনিউট্রিয়েন্টসমৃদ্ধ, যা ক্ষুধা কমায় এবং এতে ওজন থাকবে নিয়ন্ত্রণে।
৭. দুধ চায়ে থাকে থিওফাইলাইন, যার ফলে শরীরে পানির অভাব দেখা দিতে পারে। এর ফলে হতে পারে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা। এ জন্য দুধ চা খাওয়ার আগে পানি খেয়ে নেবেন।
৮. খালি পেটে চা খাবেন না। এতে পেপটিক আলসার হওয়ার ঝুঁকি থাকে বেশি। এ ছাড়া খালি পেটে চা খেলে পটাশিয়ামের মাত্রা বেড়ে কিডনির সমস্যা হতে পারে।
৯. ঘুমাতে যাওয়ার সময় চা খাবেন না। এতে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে। পাশাপাশি অনিদ্রার সমস্যা হতে পারে।
১০. ভারী খাবারের পরপরই চা খাওয়া উচিত নয়। এতে শরীরে আয়রন, ক্যালসিয়াম, জিঙ্কের শোষণ করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এ জন্য খাবার খাওয়ার পর কমপক্ষে ৩০ থেকে ৬০ মিনিট অপেক্ষা করুন। বিশেষ করে যাঁদের থাইরয়েড, ডায়াবেটিস বা দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক সমস্যা রয়েছে, তাঁরা এটি মেনে চলুন।
১১. দুধ চা অতিরিক্ত গরম করলে ট্যানিন বের হয় বেশি, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই দীর্ঘসময় ধরে অতিরিক্ত গরম করবেন না।
১২. কনডেন্সড মিল্কে ক্যালরি অনেক বেশি। তাই কনডেন্সড মিল্ক ব্যবহার করবেন না।
লেখক: পুষ্টিবিদ