কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। জেনে রাখুন, এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার সাতটি সহজ উপায়।
আজকাল প্রায় সব টয়লেটে হাই কমোড ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ক্ষেত্রে হাই কমোডের চেয়ে লো প্যান উপকারী। লো প্যানে যেভাবে বসতে হয়, চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় সেটিকে বলে ‘স্কোয়াটিং পজিশন’ বা আসন করে বসা। মলত্যাগের সময় এভাবে বসা উপকারী। এতে পেটে জমে থাকা মল ভালোভাবে বের হয়ে যায়, পেট থাকে পরিষ্কার। কিন্তু বাড়িতে কোনো টয়লেটেই লো প্যানের ব্যবস্থা না থাকলে কী করা যায়? এ ক্ষেত্রে সমাধান হলো টয়লেট টুল। এই টুল কমোডে বসার সময় পা রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের টুল আজকাল অনলাইনে কেনা যায়। তবে টয়লেট টুল না পাওয়া গেলে সাধারণ একটি প্লাস্টিকের টুল হতে পারে এর বিকল্প। চাইলে কাঠ দিয়ে বানিয়েও নিতে পারেন। কমোডে বসা অবস্থায় পা দুটি টুলের ওপর রাখলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যার কিছুটা উন্নতি হতে পারে। বিশেষ করে শিশু, যাদের পা কমোডে বসা অবস্থায় ঝুলে থাকে, তাদের জন্য এই ব্যবস্থা বেশ উপকারী।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সকালে হাঁটাহাঁটি করলে বিষণ্নতার ঝুঁকি কমে আসে। ২০১৯ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিষণ্নতার সঙ্গে কোষ্ঠকাঠিন্যের সম্পর্ক আছে। প্রতিদিন ১০ থেকে ২০ মিনিট বাইরে হাঁটাহাঁটি করলে নির্মল বাতাস ও আলো আপনার মস্তিষ্কে পোঁছায়। আপনার শরীরের গতিবিধি মস্তিষ্কও অনুভব করতে পারে। আর এতে বিষণ্নতার মতো মানসিক সংকট কমে যায় অনেকাংশে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে রাখে কার্যকর ভূমিকা।
আজকাল অনেকেই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে প্রোবায়োটিক ক্যাপসুল খান। হার্ভার্ড হেলথের মতে, যাঁরা কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য দায়ী ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোমে (আইবিএস) ভুগছেন, তাঁদের জন্য প্রোবায়োটিক ক্যাপসুল বিশেষ উপকারী। প্রোবায়োটিক ক্যাপসুলকে তুলনা করা যেতে পারে খুব ঘন টক দইয়ের সঙ্গে। এসব ক্যাপসুল স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া দিয়ে পরিপূর্ণ, যা আপনার পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখে।
ম্যাগনেশিয়াম শুধু হাড়ের জন্যই উপকারী নয়। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য সারাতে আপনার পরিপাকতন্ত্রে কাজ করে দারুণভাবে। হেলথলাইনের প্রতিবেদন অনুসারে, ম্যাগনেশিয়াম সাইট্রেট অন্ত্রে পানি টেনে আনে বলে অন্ত্র শিথিল হয়। আর এতে মলত্যাগও হয় সহজ। আরও কিছু ভিটামিন আছে যেগুলো কোষ্ঠকাঠিন্য সারাতে উপকারী, যেমন ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৫, ভিটামিন বি১২ ও ভিটামিন বি১।
বড় এক প্যাকেট আলুর চিপস আপনার পরিপাকতন্ত্রের ওপর ভীষণ ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তাই এ ধরনের খাবার না খেয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার খান। শাকসবজি, শস্যজাতীয় খাবার, উপকারী মনো ও পলিস্যাচুরেটেড ফ্যাট ইত্যাদি বেশি পরিমাণে গ্রহণ করুন। ওয়েবএমডির মতে, জলপাই তেলে থাকে উপকারী চর্বি। অন্ত্রে এই চর্বির একটি আস্তরণ সৃষ্টি হলে খাদ্য সহজে চলাচল করতে পারে। আর অন্ত্রের মধ্য দিয়ে খাদ্য সহজে চলাচল করা মানেই কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি।
আপনাকে হয়তো দিনমান চেয়ারে বসেই কাজ করতে হয়। কিন্তু মাঝেমধ্যে উঠে দাঁড়ান। এই অভ্যাস আপনার পরিপাকতন্ত্রকে ভালো রাখবে, কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাবেন। মার্কিন বিজ্ঞানবিষয়ক ম্যাগাজিন স্মিথসোনিয়ানের মতে, কাজের মধ্যে নিয়মিত বিরতিতে উঠে দাঁড়ালে মুটিয়ে যাওয়া, ক্যানসার, রক্তসংবহনতন্ত্রের বিভিন্ন রোগ ও বিপাকের বিভিন্ন সমস্যার আশঙ্কা কমে যায়।
রোজ সকালে এক গ্লাস ঠান্ডা পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। ঠান্ডা পানি ও লেবুতে থাকা সাইট্রাস একত্র হয়ে আপনার পরিপাকতন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়ায়, কোষ্ঠকাঠিন্য সারিয়ে তোলে। এই পানীয় দিনে দুবার খেতে পারেন, পেটের ভেতরের ‘গাড়িঘোড়া’ দ্রুতগামী হবে এবং ‘যানজট’ও হবে দূর।
সূত্র: দ্য হেলদি ডটকম