শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে পুডিং আদর্শ পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাবার
শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে পুডিং আদর্শ পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাবার

যে কারণে শিশুকে নিয়মিত পুডিং খাওয়াবেন

শিশুর শারীরিক বিকাশের পাশাপাশি মানসিক বিকাশ হয় ৬ থেকে ৯ বছর পর্যন্ত। আর মস্তিষ্কের বিকাশ সর্বোচ্চ মাত্রায় হয় ৬ বছর পর্যন্ত। ৯ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত শিশুর শরীরে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসে। অর্থাৎ একটি শিশুর বড় হতে বেশ কিছু ধাপ অতিক্রম করতে হয়। আর এসব ধাপ ভালোভাবে অতিক্রম করতে শিশুর দরকার স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাবার।

পুষ্টিকর খাবার কী

যেসব খাবারে আমাদের শরীরের পুষ্টির চাহিদা মেটানোর জন্য সব খাদ্য উপাদান আছে এবং আমাদের শরীর সেসব কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন জৈবিক ক্রিয়া সম্পন্ন করে, সেসবই পুষ্টিকর খাবার। তবে সব পুষ্টিকর খাবার কিন্তু সবার জন্য স্বাস্থ্যকর না–ও হতে পারে। যেমন দুধ আদর্শ পুষ্টিকর খাবার। কিন্তু কারও যদি আইবিএস বা ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স থাকে, তাহলে তার জন্য দুধ স্বাস্থ্যকর নয়।

পুডিংয়ে যেসব পুষ্টি উপাদান মেলে

ডিম ও দুধ দিয়ে তৈরি পুডিং কমবেশি সব শিশুই খেতে পছন্দ করে। শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে পুডিং আদর্শ পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাবার। মানুষের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে প্রয়োজনীয় সব খাদ্য উপাদান পুডিংয়ে থাকে। ৫০০ গ্রামের একটি পুডিং বানাতে এক লিটার সরবিহীন দুধ ফুটিয়ে আধা লিটার করে নিতে হয়। এর সঙ্গে দুই থেকে তিনটি ডিম এবং প্রয়োজনমতো চিনি ও অন্যান্য উপাদান যোগ করে পুডিং বানালে সেই পুডিংয়ের প্রতি ১০০ গ্রামে মিলবে—

ক্যালরি: ১৬০ থেকে ১৭৫ কিলোক্যালরি

শর্করা: ২০ গ্রাম

প্রোটিন: ১১ গ্রাম

ফ্যাট: ৬ গ্রাম (এর মধ্যে অসম্পৃক্ত ফ্যাট প্রায় ২ দশমিক ৫ গ্রাম)

সোডিয়াম: ১৮০ মিলিগ্রাম

পটাশিয়াম: ২৮৫ মিলিগ্রাম

ফাইবার (আঁশ) : ১ দশমিক ৫ গ্রাম

ক্যালসিয়াম: ১১০ থেকে ১২০ মিলিগ্রাম

ভিটামিন ডি: ১০০ আইইউ

এ ছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন এ, ই, কে, বি৬, বি১২ মিলবে এতে। জিংক, ম্যাগনেসিয়াম, কোলিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদানেও ভরপুর পুডিং। এতে কেবল একটি খাদ্য উপাদানই থাকে না। সেটা হলো ভিটামিন সি।

কোন উপাদান কোন কাজে লাগে

শিশুদের জন্য পুডিং চমৎকার একটি খাবার। শিশুর শারীরিক বৃদ্ধির জন্য প্রোটিন গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ১০ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর প্রতি কেজি ওজনের জন্য দৈনিক প্রায় ১ দশমিক ৫ গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন। যদি শিশুর ওজন ২০ কেজি হয়, তাহলে তার প্রতিদিন ২৬ থেকে ৩০ গ্রাম প্রোটিন দরকার। সে ক্ষেত্রে মাত্র ১০০ গ্রাম পুডিং খেলে ১১ গ্রাম প্রোটিন পাবে শিশু, যা তার সারা দিনের চাহিদার তিন ভাগের এক ভাগ। সঙ্গে অন্যান্য পুষ্টি উপাদানও সঠিক অনুপাতে পাবে।

শিশুর মেধা বিকাশে অসম্পৃক্ত চর্বি খুবই গুরত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। প্রতি ১০০ গ্রাম পুডিংয়ে প্রায় ২ দশমিক ৫ গ্রাম অসম্পৃক্ত চর্বি পাওয়া যায়, যা শিশুর মেধা বিকাশে দরকারি। আবার শরীরের জ্বালানি হিসেবে বিবেচিত কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বেশ কম থাকে এতে। তাই পুডিং খেলে শিশুদের মুটিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা খুবই কম। আবার প্রোটিনের পরিমাণ বেশি থাকায় শরীরে নতুন কোষ তৈরিতে পুডিং খুবই গুরত্বপূর্ণ।

শিশুর বেড়ে ওঠা বা লম্বা হওয়ার জন্য হাড়ের বৃদ্ধি সঠিকভাবে হতে হবে। হাড়ের বৃদ্ধি ও গঠনের মূল উপাদান ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি। পুডিংয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম আছে। প্রতি ১০০ গ্রাম পুডিংয়ে ১১০ থেকে ১২০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম মেলে, যা প্রতিদিনের চাহিদার প্রায় ১৫ শতাংশ। এ ছাড়া প্রতি ১০০ গ্রাম পুডিংয়ে ভিটামিন ডি পাওয়া যায় ১০০ আইইউ, যা প্রতিদিনের চাহিদার প্রায় ১৫ শতাংশ পূরণ করে।

শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কোলিন। এ ছাড়া জিংক, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। অনেক শিশু সরাসরি দুধ বা ডিম খেতে চায় না। কিন্তু পুডিং প্রায় সব শিশুরই পছন্দ। তাই নিয়মিত পুডিং খাওয়ালে, দুধ ও ডিমের সব পুষ্টিগুণ শিশু পেয়ে যাবে খুব সহজে।

সতর্কতা

  • পুডিং তৈরিতে অতিরিক্ত চিনি ব্যবহার করবেন না। ৬ থেকে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশের বেশি চিনি দেওয়া যাবে না।

  • চিনির পরিবর্তে কলা বা আম ব্যবহার করা যেতে পারে। তাতে পুডিংয়ের পুষ্টিগুণ আরও বাড়বে।

  • শিশুকে নিয়মিত পুডিং খাওয়ালে অন্যান্য প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানোর ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।

  • প্রধান খাবার হিসেবে না দিয়ে পুডিং দিন নাশতা হিসেবে।

  • শিশুর দুধে অ্যালার্জি থাকলে বা ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স থাকলে পুডিং খাওয়াবেন না।

মো. ইকবাল হোসেন: জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম