চোখের অ্যালার্জির সমস্যায় যা করতে হবে

অ্যালার্জি হলে চোখে চুলকানি, জ্বালাপোড়া,পানি ঝরা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়
ছবি : সুমন ইউসুফ

অ্যালার্জি শব্দটা শুনলে প্রথমে মনে পড়ে হাঁচি, কাশি, সর্দি, চুলকানি অথবা ফুসকুড়ি ইত্যাদির মতো কিছু উপসর্গের কথা। কিন্তু চোখেও অ্যালার্জি হতে পারে। আর চোখে অ্যালার্জি কিন্তু বেশ পরিচিত একটি সমস্যা।

দেহের জন্য ক্ষতিকর কোনো বস্তু, যেমন ফুলের রেণু, পোষা প্রাণীর লোম বা ত্বকের খসে পড়া অংশ বা অ্যানিমেল ডেন্ডার, খুশকি, কসমেটিক বা পারফিউমজাতীয় রাসায়নিক দ্রব্য ইত্যাদি যখন দেহের সংস্পর্শে আসে অথবা কোনো ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াজাত আমিষ কণা দেহে প্রবেশ করে, তখন শরীরের ইমিউন সিস্টেম একে প্রতিরোধের চেষ্টা করে। এসব ক্ষতিকর বস্তু বা এজেন্টকে বলা হয় অ্যালার্জেন। যদিও অ্যালার্জি একধরনের ভোগান্তি, তবে ফল বিচারে এটি দেহের জন্য সুরক্ষাবিশেষ। কোনো অ্যালার্জেন সবার জন্য সমানভাবে অ্যালার্জিক নয়। কারও যদি ধুলাবালিতে অ্যালার্জি থাকে তো অন্য কারও হয়তো অন্য কিছুতে অ্যালার্জি আছে।

অ্যালার্জেন যখন প্রথম দেহে প্রবেশ করে, তখন দেহের প্রতিরোধব্যবস্থা একধরনের অ্যান্টিবডি তৈরি করে, যার নাম আইজি-ই। এই আইজি-ই মাস্ট সেল নামের শ্বেতকণিকার সঙ্গে বিক্রিয়া করে একধরনের সংবেদনশীলতা তৈরি করে। পরবর্তী সময় একই অ্যালার্জেন আবার দেহে প্রবেশ করলে তখন তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অ্যালার্জেন, বিশেষ করে ফুলের রেণু বা ধুলাবালু খুব সহজেই চোখের উপরিভাগের শ্লৈষ্মিক ঝিল্লি বা কনজাংটাইভানের সংস্পর্শে আসার সুযোগ পায়। উপসর্গ হিসেবে চোখে চুলকানি, জ্বালাপোড়া, চোখে পানি ঝরা ইত্যাদি দেখা দেয়। অনেক সময় নাক ও শ্বাসনালি একই প্রক্রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে।

সাধারণত ফুলের রেণু, ধুলাবালু ইত্যাদিতে মৌসুমি অ্যালার্জির সমস্যা হয়ে থাকে। তাৎক্ষণিক উপসর্গ মাঝারি তীব্রতার ও স্বল্পমেয়াদি হয়ে থাকে। হঠাৎই ভালো চোখ আক্রান্ত হয়ে চুলকানি, তারপর স্বল্প সময়ের ব্যবধানে লাল হয়ে ফুলে যায়।

সতর্কতা: বাতাসে ভেসে বেড়ানো ফুলের রেণুর সংস্পর্শ এড়াতে সানগ্লাস কিছুটা সাহায্য করতে পারে। ঘরে ফেরার পর পরিধেয় কাপড়চোপড় বদলে ফেলুন এবং দ্রুত হাত-মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। ঘরের মেঝে পরিষ্কার রাখতে হবে। আশপাশে ফুলের বাগান থাকলে জানালা বন্ধ রাখলে উপকার পাওয়া যায়। যাঁদের অ্যালার্জি আছে, তাঁরা পোষা প্রাণী ও সরাসরি ফুলের বাগান পরিচর্যা থেকে বিরত থাকুন।

চিকিৎসা: ওলো পেটা ডিন-জাতীয় ড্রপ ব্যবহারে বেশ উপকার পাওয়া যায়। অনেক সময় স্টেরয়েড-জাতীয় ড্রপ ব্যবহারের প্রয়োজন হতে পারে। আর্টিফিশিয়াল টিয়ার চোখকে অ্যালার্জেন থেকে কিছুটা নিরাপদ রাখতে সাহায্য করবে। অ্যান্টিহিস্টামিন ট্যাবলেট, যেমন ফেক্সোফেনাডিন ইত্যাদি সেবন করলেও কিছুটা উপকার পাওয়া যায়। ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই চক্ষুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

ডা. মো. ছায়েদুল হক: চক্ষুবিশেষজ্ঞ ও সার্জন কনসালট্যান্ট, আইডিয়াল আই কেয়ার সেন্টার, শ্যামলী, ঢাকা