প্রেগন্যান্সি বা গর্ভকালে বেশির ভাগ নারীই নানা ধরনের মানসিক চাপ বোধ করেন। তাঁদের মধ্যে অস্থিরতা বাড়ে, কখনো কখনো বিষণ্নতায় ভোগেন তাঁরা। একাধিক আন্তর্জাতিক গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভাবস্থায় ১৪ থেকে ২৩ শতাংশ নারীর মধ্যে বিষণ্নতার বিভিন্ন লক্ষণ থাকে।
বেশির ভাগ সময়ই গর্ভাবস্থায় বিষণ্নতার এসব লক্ষণকে হরমোনের তারতম্যজনিত স্বাভাবিক সমস্যা বা মুডের ওঠানামা মনে করা হয়। কিন্তু এ সময়ের বিষণ্নতা রোগ মা ও তাঁর অনাগত শিশুর জন্য মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনতে পারে।
বেশির ভাগ সময় মন খারাপ থাকা; অল্পতেই মনোযোগ হারানো; সাধারণ জিনিস ভুলে যাওয়া; যেসব কাজ বা বিনোদন আগে ভালো লাগত, সেগুলো ভালো না লাগা; মেজাজ খিটখিটে হওয়া; কাজকর্মে আগ্রহ না থাকা বা আগ্রহ কমে যাওয়া; অতিরিক্ত ঘুম বা ঘুম খুব কমে যাওয়া; খেতে না চাওয়া বা অনেক বেশি খেতে চাওয়া; প্রায়ই অস্থিরতা অনুভব করা; পরিবারের সদস্য বা আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বা যোগাযোগ কমিয়ে দেওয়া; প্রায়ই কান্নাকাটি করা; নিজেকে ব্যর্থ বা দোষী মনে করা; মৃত্যু নিয়ে চিন্তা বা ভয়; আত্মহত্যার চিন্তা ইত্যাদি।
যেসব কারণে গর্ভাবস্থায় বিষণ্নতা রোগ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে, সেগুলো হলো দাম্পত্য কলহ, পরিবারের সদস্য বা নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি, আগের কোনো বিষণ্নতা রোগ থাকা, মানসিক চাপে থাকা, প্রয়োজনীয় বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ না পাওয়া, অন্য রোগের প্রভাব, কর্মক্ষেত্রে সমস্যা ইত্যাদি।
গর্ভাবস্থায় বিষণ্নতার কারণে মানসিক সমস্যার পাশাপাশি নানা শারীরিক সমস্যাও হতে পারে।
সঠিক সময়ের আগে শিশুর জন্ম হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
গর্ভের শিশুর ঠিকমতো বেড়ে ওঠায় ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
এমনকি জন্মের পরও শিশুর স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক বিকাশ কমে যেতে পারে।
লক্ষণ দেখে দ্রুত রোগ শনাক্ত করা প্রয়োজন। এ অবস্থায় পরিবারের সমর্থন দিতে হবে।
মা যেন পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে পারেন, সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
পুষ্টিকর খাবার ও প্রয়োজনীয় ঘুমের সুযোগ দিতে হবে।
মায়ের ছোট ছোট ইচ্ছা প্রাধান্য দেওয়া, তাঁর কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা। বিনোদনের ব্যবস্থা, যেমন কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাওয়া, বই পড়তে দেওয়া উচিত।
পর্যাপ্ত আলো-বাতাস ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশের ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রয়োজনে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
গর্ভাবস্থায় মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখা জরুরি। পরিবারের সবার এদিকে খেয়াল রাখা উচিত।
ডা. তাইয়েব ইবনে জাহাঙ্গীর, মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা