৯৭ শিশুর ‘বাবা’ তিনি, বেকারত্ব ঘোচাতে স্পার্ম ডোনেট করে আয় করেছেন ৪৩ লাখ টাকা

ইনস্টাগ্রামে এই ব্যক্তিকে পাওয়া যাবে ডোনার ডিলান নামে
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

২০২০ সালের কথা, করোনা সবে নিজের শক্তি চেনাতে শুরু করেছে। তখন যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টার একটি সফটওয়্যার ফার্মে নতুন চাকরিতে ঢুকেছেন ডিলান স্টোন মিলার। এমন সময় ইনস্টাগ্রামে এক বার্তা দেখে চমকে উঠলেন তিনি। সেখানে এক নারী দাবি করেছেন, তাঁর সন্তানের বাবা মিলার, ‘আপনি হয়তো আমাকে চিনবেন না, কিন্তু আমি আপনার স্পার্ম থেকে কন্যাসন্তান গর্ভধারণ করেছি। এ বার্তাটি কেবল আপনাকে ধন্যবাদ জানানোর জন্য।’

ইনস্টাগ্রামে এই মেসেজ দেখে হতবাক হয়ে যান ডিলান। ওই নারীর আইডিতে গিয়ে প্রথমবারের মতো দেখতে পান নিজের সন্তানকে। দেখতে ঠিক ডিলানের প্রতিচ্ছবি। অজান্তে চোখ থেকে তাঁর পানি গড়িয়ে পড়েছিল। পরে কয়েক সপ্তাহ একের পর এক মেসেজ পেতে থাকেন মিলার। কয়েক জোড়া মা–বাবা যোগাযোগ করেন তাঁর সঙ্গে। তাঁদের সন্তানের ‘বায়োলজিক্যাল বাবা’ যে মিলার! নিজ উদ্যোগে যোগাযোগ শুরু করেন নিজের সন্তানদের সঙ্গে।

ঘটনা শুরু এরও প্রায় ৯ বছর আগে, ২০১১ সালে। তখন জর্জিয়ার স্টেট ইউনিভার্সিটিতে সাইকোলজি বিষয়ে পড়াশোনা করতেন মিলার। নিজের হাতখরচ চালানোর জন্য অন্তর্বর্তীকালীন একটি চাকরির খোঁজ করছিলেন। রুমমেটের কাছ থেকে আয়ের অদ্ভুত একটা উপায়ের খোঁজ পান তিনি। চাইলে নিজের স্পার্ম ডোনেট করে সহজেই আয় করতে পারেন তিনি। সাধারণ কিছু টেস্ট উতরে গেলে প্রতিবার ডোনেট করলে পাবেন ১০০ ডলার। এমন প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার মতো অবস্থা তাঁর ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময় ৬ বছরে প্রায় ৪০০ বার স্পার্ম দান করেন তিনি। প্রায় ৪০ হাজার ডলার বা কম করে হলেও ৩৪ লাখ টাকা কামিয়েছেন শুধু স্পার্ম দান করে।

ডোলানের ধারণা তাঁর সন্তানের সংখ্যা ২৫০ এর বেশি

বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের কথা স্মৃতি থেকে অনেকটাই মুছে গিয়েছিল, জীবন সাজিয়ে নিয়েছিলেন নিজের মতো করে। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ডিলানের জীবন আলো করে এসেছিল এক সন্তান। আর দশটা মানুষের মতো সাধারণ জীবন যাপন করছিলেন। হুট করে ইনস্টাগ্রামের একটি মেসেজ ঘুরিয়ে দেয় তাঁর জীবনের মোড়। স্ক্রিনে প্রথমবারের মতো নিজের মেয়েকে দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ডিলান। ‘ওর ছোট্ট মুখটা দেখে অনেক কষ্টে নিজেকে সামলেছি। আনন্দ, ভালোবাসা আর কৃতজ্ঞতায় ভরে ওঠে আমার মন।’ এরপরই সিদ্ধান্ত নেন, নিজের সন্তানদের সঙ্গে দেখা করবেন ডিলান।

এখন পর্যন্ত ৯৭ জন সন্তানের খোঁজ পেয়েছেন তিনি। তবে ডিলানের ধারণা, পৃথিবীজুড়ে মোট ২৫০ জন শিশুর পিতা তিনি। ১২ বছরের কিশোরী থেকে ১ বছর বয়স্ক শিশু, বিভিন্ন বয়সের সন্তান আছে তার। এর মধ্যে ২৭ জনের সঙ্গে দেখা করেছেন ডিলান। কারও কারও সঙ্গে বেশ কয়েকবার দেখা করেছেন তিনি। এর মধ্যে ছয় বছর বয়সী এক শিশুর সঙ্গে বেশ সখ্য তৈরি হয়েছে। তার ডাকনাম দিয়েছেন ‘ডোনার ডিলান’।

ছুটির দিনগুলোতে ‘নিজের সন্তানদের’ সঙ্গে দেখা করেন তিনি

কিন্তু এত বছর পর ডিলানকে কীভাবে খুঁজে পেলেন বাচ্চার মা–বাবারা?

আটলান্টাভিত্তিক স্পার্ম ব্যাংক জাইটেক্সে নিজের স্পার্ম ডোনেট করতেন ডিলান। ডিলানের সঙ্গে চুক্তি ছিল ১৮ বছর হওয়ার পর বাচ্চারা নিজেদের পিতার আসল পরিচয় জানতে পারবে। এর আগে তাঁর পরিচয় জানবে না কেউই। কিন্তু সাধারণ কিছু তথ্য, বয়স, ডোনার নম্বর, বাসস্থানের তথ্য দেওয়া হয়েছিল সন্তানের পিতা-মাতাকে। সেখান থেকেই ডিলানকে খুঁজে বের করেছেন তাঁরা। এ ছাড়া ডিলানের ডোনার নম্বরের সঙ্গে মিলিয়ে অন্য সব সন্তানকেও খুঁজে বের করেছেন তাঁরা। সবাইকে নিয়ে একটা ফেসবুক গ্রুপও আছে। গত সেপ্টেম্বরে ৯৭তম বাবা হয়েছেন ডিলান। তবে ‘বাবা’ থেকে ‘ডোনার’ বলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য তাঁর। সেখান থেকেই সবার খোঁজ পেয়েছেন ডিলান।
নিজের সন্তান ও পরিবার তৈরির চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেছেন ডিলান। ‘একটা সময় ইচ্ছা ছিল নিজের সন্তানের, তাকে নিজের মতো করে বড় করার। কিন্তু এখন মনে হয় না এই পৃথিবীতে আমার আর সন্তান জন্ম দেওয়ার প্রয়োজন আছে; বরং আমার সন্তান ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে পৃথিবীজুড়ে।’

প্রতিবছর চাকরি থেকে লম্বা একটা ছুটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ঘুরে বেড়ান ডিলান। নিজের সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটান, তাদের সঙ্গে আনন্দ, হাসি ও তামাশায় কখন যে সময় কেটে যায়, টেরই পান না।

এর আগে মাত্র ৪১ বছর বয়সেই নেদারল্যান্ডসে এক ব্যক্তি পাঁচ শতাধিক সন্তানের বাবা হয়েছেন বলে দাবি করেছে দেশটির ডোনারকাইন্ড ফাউন্ডেশন নামের একটি সংস্থা। সংস্থাটি মূলত শুক্রাণু দানের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া শিশুদের উৎস খুঁজতে সহায়তা করে।

সম্প্রতি ওই ব্যক্তির এক সন্তানের মা তাঁর এই শুক্রাণু দান বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছেন। ওই ব্যক্তিকে যেন আর শুক্রাণু দানের অনুমতি দেওয়া না হয় এই আরজি জানিয়ে দেশটির একটি আদালতে আবেদন করেছেন ওই নারী।  

নেদারল্যান্ডসের স্বাস্থ্য নির্দেশিকা অনুসারে, একজন শুক্রাণুদাতা সর্বোচ্চ ২৫ জন সন্তানের বাবা হতে পারবেন। সম্ভাব্য অজাচার ও শিশুর মানসিক সমস্যা এড়াতে এই সংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। তবে শুক্রাণু দানের মাধ্যমে এর চেয়ে বেশি সন্তানের জন্ম দিলে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা যাবে না।