বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকের দেহেই মেদ জমতে শুরু করে। তবে নারী ও পুরুষের দেহে সমানভাবে মেদ জমে না। পুরুষের দেহের অধিকাংশ মেদ জমে পেটে। অর্থাৎ পুরুষের ভুঁড়ি হয় সহজেই। অন্য দিকে, নারীর দেহের নিচের অংশে যতটা মেদ জমে, পেটে ততটা নয়। কিন্তু এ রকম কেন হয়? আর মেদ জমার ধরনের ভিন্নতার সঙ্গে সুস্থতাসংক্রান্ত আর কোন কোন বিষয় যুক্ত?
সহজ হিসাব হলো, খাবারের মাধ্যমে আপনি রোজ যতটা ক্যালরি গ্রহণ করেন, কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে ততটা ক্যালরি পোড়াতে না পারলে আপনার শরীরে মেদ জমতে থাকবে। এই মেদ জমবে শরীরের বিভিন্ন জায়গায়। তবে নারী ও পুরুষের দেহের হরমোন আলাদা। মেদ জমার প্রবণতা বেশি হবে নাকি কম, আর মেদ জমা হলে শরীরের কোন জায়গায় জমবে, এসব বিষয় হরমোনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। এমনটাই জানালেন স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের মেডিসিন বিভাগের অ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট ডা. তাসনোভা মাহিন।
নারীর দেহে থাকে ইস্ট্রোজেন হরমোন। এই হরমোনই নারীর শরীরে মেদ জমতে ভূমিকা রাখে। তাই নারীর শরীরে পুরুষের তুলনায় মেদ জমে বেশি। অর্থাৎ পুরুষের চেয়ে নারীর মুটিয়ে যাওয়ার প্রবণতা বেশি। নারীর শরীরের মেদ কোথায় জমবে, সেটিও নিয়ন্ত্রণ করে ইস্ট্রোজেন। এই হরমোনের প্রভাবেই নারীর উরু ও নিতম্বে শরীরের অধিকাংশ মেদ জমে। তা ছাড়া নারীর তলপেটেও মেদ জমে। শরীরের নিচের অংশে জমা মেদ একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকলে তা সন্তানধারণ ও স্তন্যদানের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। যেমন স্তন্যদানের জন্য যে বিপুল ক্যালরির প্রয়োজন হয়, শরীরের এসব অংশের মেদ সহজে ভেঙে গিয়ে সেই ক্যালরির জোগান দেয়। তবে কোনো নারীর দেহে মেদ খুব বেশি হলে পেটেও কিছু পরিমাণে মেদ জমে। আবার মেনোপজের পর স্বাভাবিকভাবেই ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমে যায়। তখন শরীরের নিচের অংশের পরিবর্তে পেটে মেদ জমতে থাকে।
পুরুষের দেহে আছে টেস্টোস্টেরন হরমোন। এই হরমোন পেশি গঠনে সাহায্য করে। তাই এর প্রভাবে শরীরে মেদ জমার প্রবণতা কমে। কিন্তু খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ না করলে কিংবা কায়িক শ্রম না করলে মেদ তো তৈরি হয়ই, জমতেও থাকে। তবে নারীর শরীরের মতো ইস্ট্রোজেনের প্রভাব না থাকায় এই মেদ শরীরের নিচের অংশে জমা হয় না, জমা হয় পেটে, অর্থাৎ তৈরি হয় ভুঁড়ি। ভুঁড়ি কমানো বেশ কঠিন। কারণ, পেটের মেদ সহজে ভাঙে না। পৃথিবীর সব অঞ্চলের মধ্যে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পুরুষের মধ্যে পেটে মেদ জমার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি।
ভুঁড়ি কিন্তু কেবল সৌন্দর্যহানিকরই নয়, স্বাস্থ্যের জন্যও ভীষণ খারাপ। আপনি পুরুষ হোন কিংবা নারী, ভুঁড়ি থাকার অর্থই হলো, আপনার ডায়াবেটিস ও হৃদ্রোগের মতো মারাত্মক সমস্যার ঝুঁকি বেশি। তা ছাড়া ভুঁড়ি থাকলে রক্তে চর্বি বাড়ার প্রবণতাও সৃষ্টি হয়। উচ্চ রক্তচাপ ও স্ট্রোকের ঝুঁকিও বাড়ে। চর্বি জমতে পারে লিভারেও।
মেদ কমাতে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের বিকল্প নেই। ওজন কমাতে পারলে ভুঁড়ি কমবে। হুট করে ভুঁড়ি কমানোর কোনো জাদুকরি পদ্ধতি কিন্তু নেই। ধীরেসুস্থে, স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন কমান। ভুঁড়ি কমানোর জন্য বিশেষ কিছু ব্যায়ামের চর্চা করারও প্রয়োজন হতে পারে। সাইকেল চালানো কিন্তু ভুঁড়ি কমানোর জন্য দারুণ এক ব্যায়াম।