কীভাবে বুঝবেন আপনার অ্যালার্জি আছে

প্রতিক্রিয়া বুঝে অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণের পথ খুঁজে নিতে হবে। খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রায় আনতে হবে পরিবর্তন। অবহেলা করলেই সমস্যা। চলুন, জেনে নিই কী কী কারণে অ্যালার্জি হয় আর প্রতিরোধের উপায়ই–বা কী।

অ্যালার্জি অবহেলা করা যাবে না

যেকোনো বহিঃশত্রু বা অ্যালার্জেনের বিরুদ্ধে শরীর যে প্রতিক্রিয়া দেখায়, তা–ই অ্যালার্জি। অ্যালার্জি হচ্ছে আমাদের ইমিউন সিস্টেমের (রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা) একটি প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। পরিবেশের কোনো অ্যালার্জেনের কারণে শরীরে অতিসংবেদনশীলতা (হাইপারসেনসিটিভিটি) কিংবা অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া হলে দেখা দেয় অ্যালার্জি। একে বলে অ্যালার্জিক রি–অ্যাকশন বা হাইপারসেনসিটিভিটি রি–অ্যাকশন।

অ্যালার্জির প্রধান লক্ষণ হলো হাঁচি, কাশি, চুলকানি, চামড়া ফুলে যাওয়া, লাল হওয়া, জ্বালাপোড়া ইত্যাদি। আর বেশি গুরুতর হলে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট, পেটব্যথা, কমে যায় রক্তচাপ। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নিলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

তাই অ্যালার্জি অবহেলা করা যাবে না। প্রতিকার করতে হবে। যদি কোনো কারণ নির্ণয় করা না যায়, তাহলে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ গ্রহণ করতে হবে।

অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস হলে চোখ লাল হয়ে যায়

যতভাবে শরীরে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা যায়—

 অ্যালার্জিক রাইনাইটিস

কারও কারও বৃষ্টিতে ভিজলে, ঠান্ডা পানিতে গোসল করলে, ধুলাবালুতে গেলে, একটু ঠান্ডা লাগলে বা কোনো ঠান্ডা পানীয় পান করলে প্রচণ্ড সর্দি–কাশি শুরু হয়ে যায়। একই কাজ অন্যরা করলে কিন্তু তাঁদের কিছুই হয় না। তাহলে বোঝা গেল, বৃষ্টির পানি, ধুলাবালু, পুকুরের পানি বা ঠান্ডা জলীয় বস্তু কারও কারও জন্য অ্যালার্জেন আর কারও জন্য স্বাভাবিক। সর্দি-কাশি শুরু হয়ে গেলে তাকে বলা হয় অ্যালার্জিক রাইনাইটিস। অ্যালার্জিক রাইনাইটিস হলে সাধারণত শ্বাসযন্ত্রের মিউকাস মেমব্রেন (মুখের ভেতরের ঝিল্লি আবরণ) আক্রান্ত হয়, হিস্টামিনের প্রভাবে সেখান থেকে তৈরি হয় প্রচুর মিউকাস। শ্বাসযন্ত্রে লিউকোট্রিন নামের একপ্রকার পদার্থ তৈরি হয়, যা কাশি তৈরিতে শ্বাসযন্ত্রকে উদ্দীপ্ত করে। ফলে নাক দিয়ে পানি পড়ে, বারবার হাঁচি–কাশি হয়, গলা খুসখুস করে, সঙ্গে হালকা জ্বরও থাকতে পারে। অনেক সময় রাইনোভাইরাস অ্যালার্জির কারণ হিসেবে কাজ করে।

 অ্যালার্জিক চোখ ওঠা

অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস হলে চোখ লাল হয়ে যায়। চোখ থেকে পানি পড়ে, ব্যথা করে, চুলকায়। ৬ থেকে ১২ বছরের শিশুদের মধ্যে এটা বেশি দেখা যায়। ঠান্ডা লাগলে বা ধুলাবালু লাগলে তাদের চোখ লাল হয়ে যায়।

কারও কারও বেগুন, চিংড়ীর মতো খাবার থেকেও অ্যালার্জি হয়

খাবারে অ্যালার্জি

গরুর মাংস, ইলিশ মাছ, বেগুন, চিংড়ি, সামুদ্রিক মাছ খেলে কারও কারও শরীরে চুলকানি শুরু হয়ে যায়। বমি বমি ভাব হয়। এটাও একধরনের অ্যালার্জি। তাঁদের শরীর ওই সব খাবারের জন্য উপযোগী নয়। অন্যদের জন্য খাবারগুলো স্বাভাবিক হলেও তাঁদের জন্য অ্যালার্জেন হিসেবে কাজ করে। কারও কারও বমি বা ডায়রিয়াও হতে পারে।

 ওষুধে অ্যালার্জি

কিছু মানুষের কোনো বিশেষ ওষুধে (বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিক) অ্যালার্জি থাকে। ওই ওষুধ গ্রহণ করার পর শরীর চুলকাতে চুলকাতে লাল হয়ে যায়। আরও গুরুতর হলে মুখে ঘা, শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে। তাহলে বুঝে নিতে হবে, ওই ওষুধের প্রতি তাঁর হাইপারসেনসিটিভিটি রয়েছে। যদি কারও এমন হয়ে থাকে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে সেটা বন্ধ করে দিতে হবে এবং লিখে রাখতে হবে। পরবর্তী সময়ে ওই গ্রুপের ওষুধ তাঁকে আর দেওয়া যাবে না।

 অ্যাটোপিক একজিমা

অ্যাটোপিক একজিমা একপ্রকার অ্যালার্জি। এতে ত্বক খসখসে, শুষ্ক হয়ে পড়ে, সঙ্গে প্রচণ্ড চুলকানিও থাকে। সমস্যা গুরুতর হলে ত্বক ফেটে যায়, এমনকি রক্তপাতও হতে পারে। সাধারণত সাবান, ডিটারজেন্ট ইত্যাদি পদার্থের প্রতিও সংবেদনশীলতা থাকে।

 অ্যানাফাইলেকটিক রি–অ্যাকশন

কারও কারও আবার বিশেষ কোনো কীটপতঙ্গের স্পর্শ বা কামড়ে অথবা কোনো ওষুধ বা খাবার খাওয়ার পর হঠাৎ শরীরে লাল লাল চাকা দেখা যায়, চুলকানি হয়, সারা শরীর ব্যথা করে, সঙ্গে শ্বাসকষ্টও হতে পারে। রক্তচাপ কমে রোগী অচেতনও হয়ে পড়তে পারেন। হাত–পা ঠান্ডা হয়ে যেতে পারে। এই অবস্থাগুলোকে বলে অ্যানাফাইলেকটিক রি–অ্যাকশন। এটা অ্যালার্জির সবচেয়ে খারাপ অবস্থা। এ থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে, প্রয়োজনে আইসিইউ লাগতে পারে।