পুরুষের যৌন অক্ষমতা কি হৃদ্‌রোগের লক্ষণ

পুরুষদের একটি অনাকাঙ্ক্ষিত যৌন সমস্যা—ইরেকটাইল ডিজফাংশন
ছবি: পেক্সেলস

পুরুষদের একটি অনাকাঙ্ক্ষিত যৌন সমস্যা—ইরেকটাইল ডিজফাংশন। এ সমস্যায় ভুগলে যৌনমিলনের সময় পুরুষাঙ্গ যথেষ্ট দৃঢ় বা উত্থিত হতে পারে না। এ সমস্যায় ভোগা অনেকে বিষয়টি লজ্জা ও দ্বিধার কারণে গোপন করেন বা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। যাঁদের অনেকে আবার কবিরাজের শরণাপন্ন হন, সেবন করেন হারবাল। কেউ কেউ সমস্যাটা নিজের মধ্যে চেপে রেখে বিষণ্নতায় ভোগেন। অথচ গবেষকেরা বলছেন, ইরেকটাইল ডিজফাংশন হতে পারে হৃদ্‌রোগেরও লক্ষণ।

‘ভাসকুলার মেডিসিন’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধে এ সমস্যার জন্য দ্রুত হৃদ্‌রোগ চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ গবেষণায় ইরেকটাইল ডিজফাংশন ও হার্টের রোগের ওপর পরিচালিত আগের ২৮টি পরীক্ষা বিশ্লেষণ করা হয়। গবেষকেরা নিশ্চিত হয়েছেন, হার্ট ও রক্তনালির কার্যক্রম ব্যাহত হলে সহবাসের সময় পুরুষাঙ্গ দৃঢ় হতে পারে না।

ইরেকটাইল ডিজফাংশনের চিকিৎসায় লজ্জা না পেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি

এ বিষয়ে মেডিকেল নিউজ টুডে ডটকমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রক্তনালিগুলো পুরোপুরি প্রশস্ত হতে ব্যর্থ হয় এবং শরীরের নিচের অংশে পর্যাপ্ত রক্ত দ্রুত প্রবাহিত হতে পারে না। ফলে সহবাসের সময় পুরুষের সমস্যা হয়। এন্ডোথেলিয়াল ডিজফাংশন (রক্তনালির কার্যক্রমে বিঘ্ন) হচ্ছে অ্যাথেরোসক্লেরোসিসের (রক্তনালিতে চর্বি জমা) অন্যতম প্রাথমিক লক্ষণ। অ্যাথেরোসক্লেরোসিস হলে ধমনির ভেতরের দেয়ালে চর্বিযুক্ত উপাদান পুঞ্জীভূত হয়ে রক্তনালি শক্ত ও সংকীর্ণ হয়ে যায়, ফলে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। কাজেই সমস্যাটি পুরুষাঙ্গে হলেও এটি হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের মতো জটিল রোগের একটি আগাম সতর্কসংকেত হতে পারে।

রক্তনালির এ অস্বাভাবিকতা দ্রুত শনাক্ত করা গেলে জীবনযাপনে পরিবর্তন এনে অকালমৃত্যুর ঝুঁকি কমানো যায়। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, খাদ্যাভ্যাসে স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন ও শরীরচর্চা, ধূমপান বর্জন, সঠিক ওজন বজায় রাখার জন্য দিকনির্দেশনা মেনে চলতে হবে। নিয়মিত যোগব্যায়ামের পাশাপাশি হাঁটা বা ধীরে দৌড়ানোর মতো ব্যায়াম হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমায় ৫০ শতাংশ।

ভবিষ্যতে কার্ডিওভাসকুলার (হার্ট ও রক্তনালি) রোগের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে—এ পূর্বাভাস দিতে পারে ইরেকটাইল ডিজফাংশন। ইন্টারমিডিয়েট রিস্কে আছেন—এমন পুরুষদের ক্ষেত্রে এ পূর্বাভাস সত্য হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যাঁদের উচ্চমাত্রায় উচ্চ সংবেদনশীল সি-রিঅ্যাকটিভ প্রোটিন নামক প্রদাহের মার্কার রক্তে বেশি, তাঁরা ইন্টারমিডিয়েট রিস্কের অন্তর্ভুক্ত। তাই ইরেকটাইল ডিজফাংশনের মতো সমস্যাকে অবহেলা করা উচিত নয়। জীবনযাপনের অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস ও অসংগতি দূর করলে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমবে। এই ইতিবাচক পরিবর্তন হৃদ্‌যন্ত্রের পাশাপাশি পুরুষত্বহীনতার সমস্যাও দূর করবে। কাজেই ইরেকটাইল ডিজফাংশনের চিকিৎসায় লজ্জা না পেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রাখা ও সচেতন থাকা জরুরি।

অধ্যাপক ডা. জেহাদ খান: অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। সিনিয়র কার্ডিওলজিস্ট, ইবনে সিনা কার্ডিয়াক সেন্টার, ঢাকা।