শরীর থেকে ‘টক্সিন’ বা বিষাক্ত পদার্থ বের করার জন্য ডিটক্স খাবার, পানীয় কিংবা নির্দিষ্ট কোনো উপকরণ গ্রহণের প্রচলন আছে
শরীর থেকে ‘টক্সিন’ বা বিষাক্ত পদার্থ বের করার জন্য ডিটক্স খাবার, পানীয় কিংবা নির্দিষ্ট কোনো উপকরণ গ্রহণের প্রচলন আছে

এসব লক্ষণ দেখা দিলে কি শরীরকে ডিটক্স করা প্রয়োজন?

শরীর থেকে ‘টক্সিন’ বা বিষাক্ত পদার্থ বের করার জন্য ডিটক্স খাবার, পানীয় কিংবা নির্দিষ্ট কোনো উপকরণ গ্রহণের প্রচলন আছে। ধারণা করা হয়, নির্দিষ্ট ধরনের এসব উপাদান শরীরকে বিষমুক্ত করে উজ্জীবিত করে তোলে। এমন নির্দেশনাও দেওয়া হয়, যাতে বিশেষ কিছু লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই শরীরকে ডিটক্স করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। আপনিও কি এমন লক্ষণ দেখা দিলে ডিটক্স উপাদান গ্রহণ করেন? জানেন কি, এর আদৌ কোনো প্রয়োজনীয়তা আছে কি না? কিংবা সব উপাদান আপনার জন্য নিরাপদ কি না?

ক্রমাগত ক্লান্তি অনুভব করলে, অল্পতেই মেজাজ বিগড়ে গেলে, স্বচ্ছভাবে চিন্তা করতে না পারলে, জিবে প্রলেপ পড়লে, ত্বক নিষ্প্রাণ হয়ে পড়লে, এমনকি অ্যাসিডিটির লক্ষণ দেখা দিলে বা কোষ্ঠকাঠিন্য হলেও শরীরকে ডিটক্স করতে বলা হয়ে থাকে। অথচ বাস্তবতা হলো, এসবের কোনোটিই শরীরে ‘বিষাক্ত পদার্থ’ জমা হওয়ার লক্ষণ নয়।

আমাদের দেহের জন্য ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দেওয়ার মূল কাজটি করে লিভার এবং কিডনি। কাজেই ডিটক্স প্রক্রিয়া আপনার-আমার অজান্তেই চলতে থাকে দেহের অভ্যন্তরে। কোনো বিশেষ প্রক্রিয়ায় দেহকে ডিটক্স করতে যাওয়ার প্রয়োজনই নেই। উল্টো কোনো কোনো ক্ষেত্রে ডিটক্স উপাদানের কারণেই দেহে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। এমনটাই জানালেন রাজধানীর ধানমন্ডির পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডা. সাইফ হোসেন খান।

এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে কী করবেন?

প্রথমেই ভেবে দেখা যাক, কেন এমন লক্ষণ দেখা দিতে পারে? অল্পতেই মেজাজ বিগড়ে যাওয়া কিংবা স্বচ্ছভাবে চিন্তা করতে না পারা হতে পারে ঘুমের ঘাটতির লক্ষণ। আপনি কীভাবে চিন্তা করবেন এবং কোনো সাধারণ বিষয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কেমন হবে, তা কিন্তু আপনার মানসিক পরিস্থিতির ওপরেও নির্ভর করে। তাই ঘুম এবং মনের প্রশান্তি নিশ্চিত করা জরুরি।

অন্যদিকে শারীরিক এবং মানসিক চাপে আপনি ক্লান্ত অনুভব করতেই পারেন। আয়রন কিংবা ভিটামিন ডির অভাবও ক্লান্তির জন্য দায়ী হতে পারে।

তারপর ধরুন জিবে প্রলেপ পড়ার বিষয়টি। পানিশূন্যতাসহ নানা রোগবালাইয়ের ক্ষেত্রেই কিন্তু জিবে সাদা প্রলেপ পড়তে দেখা যায়। তাই খেয়াল রাখুন, রোজ আপনার পানির চাহিদা সঠিকভাবে পূরণ হচ্ছে কি না।

ত্বক প্রাণবন্ত রাখতে আপনাকে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে, পানি খেতে হবে, ত্বকের টুকটাক যত্নও করতে হবে। অ্যাসিডিটি আর কোষ্টকাঠিন্য মূলত হয়ে থাকে খাদ্যাভ্যাসের জন্য। সেদিকেও খেয়াল রাখুন।

ডিটক্স করতে চাইলে

দেহ ডিটক্স করতে চাইলে আপনাকে খাদ্যাভ্যাস, বিশ্রাম, শরীরচর্চা, মানসিক চাপ কমানোর মতো বিষয়গুলোর প্রতি যত্নশীল হতে হবে। ধূমপান এবং মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন। স্বাস্থ্যকর জীবনধারার মাধ্যমেই অধিকাংশ সমস্যা সামলে নিতে পারবেন আপনি। এসবে সমাধান না মিললে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। মনে রাখবেন, শরীরকে ডিটক্স করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো খাবার বা পানীয় অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করা, স্বাভাবিক খাদ্যাভ্যাস থেকে নিজেকে বঞ্চিত করা কিংবা ডিটক্স হিসেবে প্রচলিত বিশেষ কোনো ওষুধ অল্প পরিমাণে গ্রহণ করাও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াতে পারে।