ডায়াবেটিসের রোগীদের রাতে ঘুমের মধ্যে রক্তে সুগার বা শর্করা কমে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে যাঁরা ইনসুলিন নেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এটা বেশি হতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে একে বলে নকটারনাল হাইপোগ্লাইসেমিয়া।
ঘুমের মধ্যে যে শর্করা কমে যায়, তা অনেক সময় রোগী বুঝতেও পারেন না। এমনকি ঘুমের মধ্যে অচেতন হয়ে যাওয়া বা হঠাৎ মৃত্যুরও কারণ হতে পারে এই রাত্রিকালীন হাইপোগ্লাইসেমিয়া। তাই একে অবহেলা করা যাবে না।
রাতের ইনসুলিন প্রয়োজনের তুলনায় বেশি নেওয়া।
রাতের খাবার ঠিকমতো না খাওয়া বা খুব কম খাওয়া।
দিনের বেলা অতিরিক্ত ব্যায়াম বা কায়িক শ্রম দেওয়া।
অ্যালকোহল সেবন।
সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠার পর মাথাব্যথা, অস্বস্তি বোধ করা।
রাতে ঘুমের মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ, যা আপনার সঙ্গী লক্ষ করতে পারেন। যেমন দুঃস্বপ্ন দেখা, উল্টাপাল্টা কথা বলা, ছটফট করা, হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি।
ঘুমের মধ্যে অনেক ঘেমে যাওয়া, কাঁপুনি দেওয়া।
যদি ওপরের উপসর্গগুলো দেখা দেয় এবং সন্দেহ হয় যে রাতে সুগার কমে যাচ্ছে, তবে কোনো এক দিন ভোর চারটায় উঠে রক্তের সুগার মাপুন। সুগার ৪ মিলিমোলের নিচে হলে বুঝতে হবে আপনার রাত্রিকালীন হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়।
এ ছাড়া বেড টাইম বা ঘুমানোর আগে সুগার অনেক কম থাকলেও এটি সন্দেহ করা যায়। কখনো কখনো রাতে সুগার কমে গেলে শরীরের কর্টিসোল ও অন্যান্য হরমোন নিঃসরণ ঘুমের মধ্যেই বেড়ে যায়।
এগুলো আবার সুগার বাড়িয়ে দেয়। ফলে সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে সুগার বেশি পাওয়া যায়। একে বলে সমোগি ইফেক্ট। যদি সারা দিন, বিশেষ করে বেড টাইম সুগার অনেক কম হয়, রক্তে তিন মাসের গড় সুগার এইচবিএওয়ান সি অনেক কম দেখানোর পরও সকালে সুগার বেশি পান, তবে বুঝবেন সমোগি ইফেক্ট হচ্ছে।
রাতে ঘুমানোর আগে একটু হালকা নাশতা খেতে পারেন। দুধ-বিস্কুট, সামান্য ফল, দই ইত্যাদি।
রাতের খাবার কখনো একেবারে বাদ দেবেন না। রাতের খাবারে জটিল শর্করা, যেমন লাল আটার রুটি, ওটস, কর্নফ্লেকস ইত্যাদি রাখবেন।
চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে রাতের ইনসুলিনের মাত্রা বা ওষুধের মাত্রা ঠিক করে নেবেন। রাতে ব্যাসাল ইনসুলিন একটু দেরি করে নেওয়া উত্তম।
ডা. তানজিনা হোসেন, সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি ও মেটাবলিজম বিভাগ, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ