সব সময়ই আমরা কোনো একটা লক্ষ্যের পিছে ছুটি। কারও লক্ষ্য চাকরি। কারও পদোন্নতি। কারও লক্ষ্য বাড়ি কেনা। কারও গাড়ি। আর ভাবতে থাকি, সেটা পেলেই ধরা দেবে সুখ। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তৈরি হয় নতুন আরেকটি চাহিদা। তারপর শুরু হয় সেটার পিছে ছোটা।
এভাবে আসলে সুখ ধরা দেয় না। এমনকি যাঁরা হঠাৎ করে বড় কিছু পেয়ে যান বা লটারি জিতে যান, তাঁরাও অতিরিক্ত সুখের দেখা পান না। গবেষণায় তেমনটাই দেখা গেছে। আসলে সুখ অনেকটাই কৃত্রিম একটা বিষয়। হয় আপনি নিজে সেটা তৈরি করবেন, নইলে কখনোই পাবেন না। তাই এই ছোটার থেকে মনোযোগ সরিয়ে কিছু অভ্যাসে মন দিতে হবে। তাহলেই পাওয়া যায় সুখের দেখা। জেনে নিন তেমনি দশ অভ্যাস।
যত ছোটই হোক, যেকোনো সাফল্যেই নিজের পিঠ চাপড়ে দিন। এমনকি রোজকার অভ্যস্ত কাজও যদি ভালোভাবে সম্পন্ন করতে পারেন, তখনও। ভালো কিছু করলেই নিজেই নিজের তারিফ করুন।
১০ মিনিটের জন্য হলেও প্রতিদিন ব্যায়াম করুন। তাতে শরীরে গ্যাবা নামের এক ধরনের অ্যাসিড নির্গত হয়। এটা এক ধরনের নিউরো ট্রান্সমিটার, যেটা আপনার মস্তিষ্কে প্রশান্তির অনুভূতি জাগিয়ে তোলে।
গবেষণায় দেখা গেছে, নিজের জন্য টাকা খরচ করার চেয়ে অন্যের জন্য খরচ করলে বেশি তৃপ্তি পাওয়া যায়। বিশেষ করে ছোটখাটো উপহারে। চলার পথে বন্ধুর জন্য সেই বইটা কিনতে পারেন, যেটা আপনি জানেন সে খুঁজছে।
আপনার মানসিক অবস্থার ওপর আশপাশের মানুষের প্রভাব অনেক। তাই সঙ্গী বাছতে সচেতন হোন। ইতিবাচক মানুষদের সংস্পর্শে থাকুন। তাতে আপনার আত্মবিশ্বাস যেমন বাড়বে, তেমনি তাঁদের সঙ্গে সৃজনশীল ও আনন্দঘন সময় কাটবে।
খারাপ ঘটনা ঘটবেই। সবার সঙ্গেই ঘটে। কিন্তু হতাশ হওয়া চলবে না। অভিযোগ করা যাবে না। ইতিবাচক থাকুন। ব্যাপারটা নিয়ে ভালোভাবে চিন্তা করুন। সেরা সমাধান বের করে সে অনুযায়ী কাজ করুন।
ভালো ঘুম অনেক সমস্যারই সমাধান দেয়। মন খারাপ ভাব, মনোযোগের ঘাটতি, আত্মনিয়ন্ত্রণের অভাব—এককথায়, ঘুমের মধ্য দিয়ে আপনার মস্তিষ্ক সব নেতিবাচকতা ঝেড়ে নতুন করে তাজা হয়ে ওঠে। তাই পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন।
আপনার রোজকার আলোচনার সঙ্গে সুখী হওয়ার সরাসরি যোগ থাকে। তাই আড্ডায়-আলোচনায় সঙ্গীদের সঙ্গে অর্থপূর্ণ আলোচনা করুন। পরনিন্দা, পরচর্চা, ছিদ্রান্বেষণ এড়িয়ে চলুন।
কেবল মানুষকে খুশি করতেই নয়, নিজেকে খুশি করতেও অন্যদের সাহায্য করুন। তাতে শরীরে অক্সিটোসিন, সেরোটোনিন ও ডোপামিনের মাত্রা বাড়ে। এগুলো আপনার মধ্যে সুখানুভূতি তৈরি করে।
যখনই সুযোগ হয় বন্ধু ও স্বজনদের সঙ্গে দেখা করুন। ভার্চ্যুয়ালি নয়, বাস্তবে। কারণ, আমাদের মস্তিষ্ক সরাসরি যোগাযোগের সঙ্গে অভ্যস্ত। সামনাসামনি দেখা হলে, কথা বললে, মস্তিষ্ক সেটাকে সত্যিকারের সংযোগ বলে গণ্য করে।
অনেকেই ভাবেন, তাঁরা সব জানেন, সব পারেন। তাঁদের নতুন করে আর কিছু শেখার দরকার নেই। কিন্তু যখন নতুন কোনো সমস্যার সম্মুখীন হন কিংবা এমন কোনো কাজ, যেটা তাঁদের সামর্থ্যের বাইরে, তখন বিপদে পড়ে যান। তাই সব সময় নতুন কিছু শেখার ব্যাপারে খোলা মনে থাকতে হবে।
তথ্যসূত্র: ‘মাইক্রো হ্যাবিটস টেস্ট’-এর লেখক ড. ট্রাভিস ব্র্যাডবেরির প্রবন্ধ অবলম্বনে/ লিঙ্কডইন