রক্তশূন্যতায় কী করবেন

যথেষ্ট আয়রনযুক্ত (লৌহ) খাবার না খেলে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়।
ছবি: গ্রাফিকস

বিশ্বে ৩০ ভাগ মানুষ রক্তশূন্যতায় ভোগে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোগে আয়রন–স্বল্পতাজনিত রক্তশূন্যতায়। এ ছাড়া ভিটামিনের অভাবেও রক্তশূন্যতা হয়, যেমন বি১২ ও ফলিক অ্যাসিডের অভাব। আমরা আজ আয়রন, বি১২ ও ফলিক অ্যাসিড–স্বল্পতাজনিত রক্তশূন্যতা সম্পর্কে জানব।

আয়রন–স্বল্পতায় রক্তশূন্যতা

আয়রন–স্বল্পতার প্রধান কারণ রক্তক্ষরণ বা ব্লাড লস। মেয়েদের মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, ব্যথার ওষুধের কারণে অথবা কৃমির সংক্রমণের কারণে পাকস্থলীর ক্ষত থেকে রক্তক্ষরণ, গর্ভাবস্থা, ব্রেস্টফিডিং আয়রন কমে যাওয়ার বড় কারণ। আর একটি বড় কারণ হলো আয়রনসমৃদ্ধ খাবার না খাওয়া এবং খাবার থেকে আয়রন শোষণ না হওয়া। গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীর থেকে আয়রন গর্ভস্থ শিশুর দেহে ও প্লাসেন্টাতে চলে যায়, ফলে মায়ের শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয়। বাড়ন্ত বয়সেও আয়রনের চাহিদা বেশি থাকে।

প্রাণীজ ও উদ্ভিজ দুটি উৎস থেকেই আয়রন গ্রহণ করতে হবে। মাংস, ডিম, সবুজ শাক, সবজি, ফল ও বাদামে আয়রন থাকে। প্রাণীজ উৎস শরীরে আয়রনের লেভেল উদ্ভিজ উৎস থেকে বেশি বাড়ায়। তাই কেউ যদি পালংশাক, মাংস একসঙ্গে খান, তাহলে আয়রনের শোষণ বেশি হবে। ভিটামিন সি আয়রনের শোষণকে বাড়িয়ে দেয়। তাই আমরা খাবারের সঙ্গে একটুকরা লেবু রাখতে পারি।

চা-কফিতে ট্যানিন নামের একধরনের পদার্থ থাকে। ট্যানিন আয়রনের শোষণ অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। আমরা অনেকে খাবার খেয়েই চা বা কফি পান করি, এই অভ্যাস বাদ দিতে হবে।

পাকস্থলীর অ্যাসিড আয়রন শোষণে সাহায্য করে। অ্যান্টি–আলসারেন্ট বা গ্যাসের ওষুধ আয়রন শোষণকে কমিয়ে দেয়। যাঁরা দীর্ঘ সময় গ্যাসের ওষুধ খাচ্ছেন, তাঁদের আয়রন–স্বল্পতায় রক্তশূন্যতা খুবই সাধারণ। সুতরাং কারণে–অকারণে গ্যাসের ওষুধ খাওয়া কমাতে হবে।

একই সঙ্গে আয়রন ও ক্যালসিয়ামের ওষুধ খেলে আয়রন শোষণ কম হয়। তাই দুটি ওষুধ দুই সময়ে খেতে হবে।

ভিটামিন বি১২–স্বল্পতায় রক্তশূন্যতা

অনেকে ভেজিটেরিয়ান। কোনো প্রাণীজ আমিষ খান না। এসব রোগীর বি১২ কমে যায়। আবার বি১২ শোষণের জন্যও পাকস্থলীর অ্যাসিড দরকার হয়। কোনো কারণে গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিড কমে গেলে যেমন ওমিপ্রাজল, ইসমিপ্রাজল–জাতীয় ওষুধ খেলে বা পাকস্থলীর অপারেশন থাকলে বি১২ শোষণ হয় না। পারনিসিয়াস অ্যানিমিয়া নামের একধরনের অটো ইমিউন অসুখ আছে, যেখানে বি১২ কমে যায়। বি১২ কমে গেলে রক্তশূন্যতার পাশাপাশি নিউরোলজিক্যাল উপসর্গও দেখা দেয়, যেমন হাত-পা অবশ হয়ে আসা, ঝিঁঝিঁ ধরা, হাত ও পায়ের স্পর্শের অনুভূতি কমে যাওয়া, চোখে দেখতে সমস্যা হওয়া ও ভুলে যাওয়া। বি১২–স্বল্পতার চিকিৎসায় শরীরে বি১২ ইনজেকশন দিতে হয়।

ফলিক অ্যাসিড–স্বল্পতা

ফলিক অ্যাসিডের প্রধান উৎস শাকসবজি; যেমন পালংশাক, ব্রকলি, লেটুস। ফল; যেমন কলা, তরমুজ ও প্রাণীজ আমিষ। কিন্তু অতিরিক্ত তাপে বা বেশি সময় নিয়ে রান্না করলে ফলিক অ্যাসিড নষ্ট হয়ে যায়। আবার কিছু ওষুধ; যেমন মেথোট্রিজেট–জাতীয় ওষুধ ফলিক অ্যাসিডের শোষণ কমিয়ে দেয়। ফলিক অ্যাসিড কমে যাওয়ায় যেমন রক্তশূন্যতা হয়, তেমনি গর্ভবতী মায়েদের ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতি থাকলে গর্ভের সন্তানের নিউরাল টিউব ডিফেক্ট নামের নিউরোলজিক্যাল সমস্যা দেখা দেয়। তাই সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করলেই ফলিক অ্যাসিড খেতে হবে।

ডা. আফলাতুন আকতার জাহান, মেডিসিন স্পেশালিস্ট, স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড, ঢাকা