মাঙ্কিপক্স বানর ছাড়াও আরও যেসব প্রাণী থেকে ছড়ায়

আফ্রিকার দেশ কঙ্গোতে প্রথম শনাক্ত হয়েছিল মাঙ্কিপক্স
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

আফ্রিকার দেশ কঙ্গোতে প্রথম শনাক্ত হয়েছিল মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স। এই মহাদেশের বুরুন্ডি, উগান্ডা, রুয়ান্ডা, কেনিয়া ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে ইউরোপের সুইডেন ও এশিয়ার পাকিস্তানেও। সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ২০২২ সালের পর মাঙ্কিপক্স নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ডব্লিউএইচও এই সতর্কতা জারি করল।

মাঙ্কিপক্স নামটা শুনে বানরের কথা মনে হলেও ভাইরাসটি আসলে সংক্রমিত হয় ইঁদুর, বন্য কুকুর, কাঠবিড়ালি, বানর ও খরগোশের শরীর থেকে। সর্বপ্রথম এটি একটি বানরের শরীরে আবিষ্কার হয় বলে এমন নামকরণ। মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকায় এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। ত্বকের ফোসকা সম্পূর্ণরূপে ভালো না হওয়া পর্যন্ত আক্রান্ত ব্যক্তি অন্যদের মধ্যে এই ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে লক্ষণ দেখা দেওয়ার এক থেকে চার দিন আগে থেকেই অন্যদের মধ্যে ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারে।

কীভাবে ছড়ায়

সংক্রমিত ব্যক্তির সরাসরি যেকোনো ধরনের সংস্পর্শ বা যৌনমিলনের মাধ্যমে, ব্যবহার করা কাপড়, সুই বা অন্যান্য জিনিসপত্রের মাধ্যমে, আক্রান্ত প্রাণী শিকার করা, কাটা বা রান্না করার সময়, কম তাপমাত্রায় আক্রান্ত প্রাণীর রান্না করা মাংস খেলে এমনকি আক্রান্ত গর্ভবতী মায়েদের থেকে তাদের অনাগত শিশুর কাছেও ভাইরাসটি যেতে পারে।

মাঙ্কিপক্সের কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই

রোগের লক্ষণ

এমপক্স প্রাথমিকভাবে পশুদের মধ্যেই দেখা যায়। তবে ২০২২ সাল থেকে ব্যাপকভাবে মানুষের মধ্যেও এই রোগটি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। এই রোগের লক্ষণগুলো জীবাণু সংক্রমণের সাধারণত ৩ থেকে ১৭ দিনের মধ্যে শুরু হয় এবং সাধারণত ২ থেকে ৪ সপ্তাহ স্থায়ী হয়। তবে রোগীর দুর্বল রোগ প্রতিরোধক্ষমতা থাকলে তা আরও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। রোগের লক্ষণ হলো জ্বর, মাথাব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা, লিম্ফনোড ফুলে যাওয়া, দুর্বলতা, গলাব্যথা, কাশি এবং ত্বকে পানিভর্তি ফোসকা। তবে এমপক্স ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি অনেক ক্ষেত্রে উপসর্গবিহীন থাকতে পারেন।

আক্রান্ত ব্যক্তিদের ফুসকুড়ি হয়, যা হাত, পা, বুক, মুখ, লিঙ্গ, অণ্ডকোষ, ল্যাবিয়া, যোনি, মলদ্বারসহ যৌনাঙ্গের কাছাকাছি হতে পারে।

ফুসকুড়ি প্রাথমিকভাবে পানিভর্তি ফোসকার মতো দেখাতে হয়। ফোসকায় ব্যথা ও চুলকানি হয়।

চিকিৎসা

এই রোগের কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। সাধারণত উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা, পরিচর্যা, পুষ্টিকর খাবার এবং পরিচ্ছন্ন পরিবেশ পেলেই রোগী দ্রুত ভালো হয়ে যায়। চিকিৎসকের পরামর্শে জ্বর, মাথাব্যথা এবং পেশি ব্যথা কমানোর জন্য ওষুধ সেবন করা যেতে পারে। এ ছাড়া রোগের তীব্রতা বেশি হলে অ্যান্টিভাইরাল (টেকোভিরিম্যাট, সিডোফোবির) ওষুধ দেওয়া হয়। আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করে আইসোলেশনে রেখে ক্ষত না শুকানো পর্যন্ত চিকিৎসা করা গেলে রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা কমে যাবে। কোনো কোনো দেশে এবং যাদের ঝুঁকি বেশি তাদের গুটিবসন্তের টিকা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এই টিকা মাঙ্কিপক্সের বিরুদ্ধে ৮৫ শতাংশ সুরক্ষা প্রদান করে।

জটিলতা

সঠিক চিকিৎসা না হলে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত, বিকৃত দাগ, সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন, ব্রঙ্কোপনিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, কর্নিয়াল ইনফেকশন, অন্ধত্ব, সেপটিসেমিয়া, এনকেফালাইটিস ইত্যাদি হতে পারে।

প্রতিরোধ

  • আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে হবে। ব্যবহার করা কাপড় এবং অন্যান্য জিনিসপত্র স্পর্শ করা যাবে না।

  • আক্রান্ত প্রাণীর সংস্পর্শে আসা থেকে বিরত থাকুন। সংস্পর্শে এলে দ্রুত সাবান পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।

  • প্রাণীর মাংস সঠিক তাপমাত্রায় রান্না করে খেতে হবে।

  • যদি রোগের লক্ষণ দেখা দেয়, তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

বাংলাদেশে এখনো এই রোগে আক্রান্ত কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি। তবে রোগটি সম্পর্কে সবাইকে জানানো এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করা গুরুত্বপূর্ণ। সেই সঙ্গে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সবাইকে উৎসাহিত করা প্রয়োজন।

ডা. কাকলী হালদার: সহকারী অধ্যাপক, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ