কৃত্রিম চিনি কি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো?

কৃত্রিম চিনি বা কৃত্রিম চিনি দিয়ে তৈরি বিভিন্ন খাদ্য শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকারক।
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন শুরু করতে চাইলে প্রথমেই খাদ্যতালিকা থেকে চিনি বাদ দিতে হয়। আমরা অনেকেই চিনি বাদ দিতে গিয়ে কৃত্রিম চিনি খাওয়া যাবে বলে ধারণা করে নিই।

কিন্তু এই কৃত্রিম চিনি বা কৃত্রিম চিনি দিয়ে তৈরি বিভিন্ন খাদ্য শরীরের জন্য আরও বেশি ক্ষতিকারক। এতে থাকা এসপার্টেম নামক উপাদান চিনির চেয়ে বেশি ক্ষতি করে।

কৃত্রিম চিনি ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে

কৃত্রিম চিনির মূল উপাদানগুলো হলো এসপার্টেম, সুক্রোজ, সুক্রালেজ, স্যাকারিন। যেকোনো প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন জাঙ্ক ফুড ও ডায়েট পানীয়র মধ্যে এসব রাসায়নিক পদার্থ থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণ চিনির তুলনায় কৃত্রিম চিনির মিষ্টি অন্তত ৩০০ গুণ বেশি। ব্যবসায়িক কারণে সীমিত ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে অনেক সময়ই এতে সিলিকাসহ নানা ধরনের ক্ষতিকর পদার্থ মেশানো হয়। শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণ এসপার্টেম প্রবেশ করলে বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। জেনে নেওয়া যাক সমস্যাগুলো কী—

ওজন বৃদ্ধি

গবেষণায় দেখা গেছে, কৃত্রিম চিনি ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। কারণ, এটি শরীরে ক্যালরির গ্রহণ নিয়ন্ত্রণে বাধা দান করে, যার ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার ইচ্ছা তৈরি হয়।

বিভিন্ন মেটাবলিক সিনড্রোমের ঝুঁকি

কৃত্রিম চিনির ব্যবহারে টাইপ–২ ডায়বেটিস, হৃদ্‌রোগসহ বেশ কয়েকটি রোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে। পাশাপাশি কৃত্রিম চিনি উচ্চ রক্তচাপ, পেটের মেদ, লিপিডের ভারসাম্যহীনতা বাড়ায়।

অন্ত্রের স্বাস্থ্য প্রভাবিত হয়

এটি অন্ত্রে থাকা ভালো ও খারাপ ব্যাকটেরিয়ার অনুপাত পরিবর্তন করে। অন্ত্রের মাইক্রোবায়োটা পরিবর্তন করে, ফলে প্রাকৃতিক শর্করার মতো বিপাক হয় না। এ কারণে পেটে গ্যাস, ফোলা ভাব, ডায়রিয়াসহ গ্যাস্ট্রিওইন্টেস্টাইনাল সমস্যা হতে পারে।

চিনি

স্নায়বিক প্রদাহ ও মাথাব্যথা

কৃত্রিম মিষ্টির ব্যবহার মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের মেজাজকে প্রভাবিত করে। এগুলো নিউরোট্রান্সমিটারের মাত্রা ও রক্ত সঞ্চলন পরিবর্তন করে। ফলে মাথাব্যথা ও মাইগ্রেন হতে পারে।

লিভারের ক্ষতি হতে পারে

এটি নন–অ্যালকোহলযুক্ত ফ্যাটি লিভার রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কৃত্রিম চিনি অতিরিক্ত ট্রাইগ্লিসারাইড উৎপাদন করে যা লিভারে জমা হয়ে ক্ষতি সাধন করে।

মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব

মস্তিষ্কে নিউরোট্রান্সমিটারের মাত্রা কৃত্রিম চিনি দ্বারা ব্যাপক প্রভাবিত হয়, যা মেজাজ ও আচরণে নেতিবাচক পরিবর্তন আনে। এরা মস্তিষ্কে সেরোটোনিনের মাত্রা কমিয়ে দেয়, যা মেজাজ ও উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ক্যানসার

এই কৃত্রিম চিনি বা এসপার্টেমকে কারসিনোজেন হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এই এসপার্টেম, সম্ভাব্য ক্যারসিনোজেনের আওতাভুক্ত, যা ক্যানসার সৃষ্টিকারী যৌগ বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ক্যানসার গবেষণা বিভাগ জানিয়েছে।

কৃত্রিম চিনির ব্যবহার মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের মেজাজকে প্রভাবিত করে।

ডায়াবেটিসের রোগীসহ অনেক স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ বর্তমানে চিনির বিকল্প হিসেবে আর্টিফিশিয়াল সুইটনার বা কৃত্রিম চিনি ব্যবহার করে থাকেন। বিশেষ করে চায়ের সঙ্গে বেশি মেশানো হয় এই চিনি। এটি ব্যবহারে স্বল্পমেয়াদি ওজন হ্রাস বা বডি মাস ইনডেক্স হ্রাস পেতে পারে।

কারণ, কৃত্রিম সুইটনার গুলো খাওয়ার ক্যালরি কমিয়ে আনে। তবে দীর্ঘমেয়াদি এগুলো ব্যবহার করলে ওজন বৃদ্ধি, ক্যানসারসহ অন্য আরও অনেক রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই এর ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।

সাজিয়া মাহমুদ, পুষ্টিবিদ