শিশুর জ্বর হলে সিরাপ, নাকি সাপোজিটরি

শিশুদের জ্বর কমানোর প্রধান উদ্দেশ্য তাকে স্বস্তি দেওয়া। মূল অসুখের নিরাময় হলে (ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া, ইউটিআই, টাইফয়েড ইত্যাদি) জ্বরও কমে যায়। তাই জ্বরের প্রধান চিকিৎসা হচ্ছে, জ্বরের কারণ খুঁজে বের করে তার চিকিৎসা দেওয়া।

শিশুর জ্বর ১০২ দশমিক ২ ডিগ্রি ফারেনহাইটের নিচে থাকলে এবং শিশু বেশি অসুস্থ না হলে (আগে থেকে অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত কিংবা জ্বর-খিঁচুনি, হার্টের অসুস্থতা ইত্যাদি) জ্বর কমাতে অস্থির হওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে জ্বর বেশি হলে প্যারাসিটামল দিতে হয়।

জ্বর কমানোর সাধারণ ব্যবস্থা

  • শিশুকে খোলামেলা ঘরে রাখা, যথাসম্ভব কম কাপড়চোপড় (একপ্রস্থের কাপড়) পরানো, শিশুর শরীর আলতোভাবে মালিশ করা। বারবার পানি পান ও তরল খাবার খাওয়ানো।

  • অধুনা গবেষণামতে,Ñজ্বর কমতে স্পঞ্জিং, কুলিং ব্র্যাকেট বা অন্যান্য পরিপূরক ও বিকল্প ওষুধের ভূমিকা নগণ্য।

  • শিশুর অতিরিক্ত জ্বর কমিয়ে আনতে জলশোষক তোয়ালে, কুসুম গরম পানিতে চুবিয়ে প্রথমে পা, বুক, পিঠ ও কপাল—এভাবে পর্যায়ক্রমে ১৫ থেকে ২০ মিনিট শরীর স্পঞ্জ করা।

প্যারাসিটামল সিরাপ

  • শিশুবয়সে ওজন হিসাবে প্যারাসিটামল সিরাপ ১০-১৫ মিলিগ্রাম/কেজি প্রতি ৪-৬ ঘণ্টা অন্তর সেবন করানো যায়। কিন্তু দৈনিক পরিমাণ যেন ৬০ মিলিগ্রাম/প্রতি কেজির বেশি না হয়।

  • প্যারাসিটামল খাওয়ানোর ৩০ মিনিট পর ওষুধের কার্যকারিতা শুরু হয় এবং ১-২ ঘণ্টা পরে শিশুর জ্বর প্রায় ২ থেকে ৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত নামে।

প্যারাসিটামল সাপোজিটরি

  • প্যারাসিটামল ১০-২০ মিলিগ্রাম/কেজি ওজন হিসাবে পায়ুপথে প্রয়োগ করা যায়। সিরাপ সেবনের তুলনায় পায়ুপথে প্যারাসিটামলের কার্যকারিতা দেরিতে (ওষুধ প্রয়োগের প্রায় ৬০ মিনিট পর) শুরু হয়।

  • সিরাপ ব্যবহারের সমান ফল পেতে পায়ুপথে বেশি মাত্রার প্যারাসিটামল (৩০ মিলিগ্রাম/কেজি ওজন) দিতে হয়।

করণীয়

  • শিশুদের জ্বর কমাতে সঠিক মাত্রায় প্যারাসিটামল ও আইবুপ্রোফেন নিরাপদ ও কার্যকর ওষুধ।

  • মাত্রা ঠিক না থাকলে প্যারাসিটামলের প্রতিক্রিয়ায় লিভারে ক্ষতি এবং আইবুপ্রোফেন থেকে আন্ত্রিক বা কিডনির ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।

  • শিশুবয়সে যেকোনো ওষুধ মুখে প্রয়োগের চেষ্টা করা উচিত।

  • কোনোভাবেই মুখে খাওয়ানো সম্ভব না হলে (অজ্ঞান শিশু ও ক্রমাগত বমি), কেবল তখনই পায়ুপথে সাপোজিটরি প্রয়োগ করা যায়। সাপোজিটরিতে জ্বর দ্রুত কমে—এমন ধারণা ভুল।

  • অধ্যাপক ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল