পছন্দের বইটি পড়ে শেষ করতে পারেন
পছন্দের বইটি পড়ে শেষ করতে পারেন

যখন সময় থমকে দাঁড়ায়

এই লেখাটা লিখছি স্থবির হয়ে পড়া এক সময়ে, গতিময় জীবনটা যখন স্তব্ধ। জীবনযাপনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠা ইন্টারনেট পরিষেবা থেকে এখনো অনেক এলাকা বিচ্ছিন্ন। এমন বিরূপ পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের মনের ওপর ভীষণ নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। শিশু-কিশোরেরাও এই অনাকাঙ্ক্ষিত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছে।

পরিস্থিতি নিশ্চয়ই একসময় স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তবে মনের ওপর যে প্রভাবটা পড়ল, তার রেশ রয়ে যেতে পারে বহুদিন। মানসিক চাপ সামলানোর কাজ খুব একটা সহজ নয়। ‘মন ভালো রাখতে চেষ্টা করুন’ বললেই তো আর মন ভালো রাখা যায় না। ইন্টারনেটে অভ্যস্ত হয়ে পড়া জীবনধারায় বিনোদনের পরিসরও ছোট হয়ে এসেছে। তাই পুরোনো দিনের মতো পরিবারকেন্দ্রিক জীবনযাপনই এ সময় মন ভালো রাখার সেরা উপায়। সেই সঙ্গে চাপ সামলানোর কিছু কৌশলও প্রয়োগ করা যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে মানসিক চাপ সামলানোর কিছু উপায় জানালেন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী শারমিন হক।

মনকে স্থির রাখুন

পারিপার্শ্বিক অস্থিরতায় মন আক্রান্ত হয়ে পড়তেই পারে। চেষ্টা করুন মনকে স্থির রাখতে। নিয়ন্ত্রিত শ্বাসপ্রশ্বাসের চর্চা করতে পারেন নিয়মিত। লম্বা করে শ্বাস নিন, কয়েক সেকেন্ডের জন্য শ্বাস ধরে রাখুন, এবার ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। শ্বাস নিতে যত সময় নিয়েছেন, শ্বাস ছাড়তে সময় নিন তার তিন গুণ। এ পদ্ধতিতে শ্বাসপ্রশ্বাস চালিয়ে যেতে পারেন একটানা পাঁচ থেকে দশ মিনিট। তিন বেলাই এ চর্চা করতে পারেন। রিল্যাক্সেশন বা শিথিলকরণের অন্যান্য পদ্ধতি জানা থাকলে সেটিও কাজে লাগাতে পারেন। যোগব্যায়ামের নিয়ম জানা থাকলে তা চর্চা করতে পারেন।

চাপ বাড়তে দেবেন না

খুব চাপ অনুভব করলে চোখ বন্ধ করে ফেলুন। চোখের সামনে যে অন্ধকার নেমে আসবে, সেদিকেই খেয়াল করুন গভীরভাবে। সব চিন্তা বাদ দিয়ে মনঃসংযোগ করুন সেখানেই। দুই মিনিট এভাবেই থাকুন। এটুকু সময়ের মধ্যেও মনে নানান চিন্তা চলে আসতে পারে। চিন্তা চলে এলে এ অবস্থাতেই গভীরভাবে শ্বাস নিন এবং ছাড়ুন।

এমন কাজ করবেন না, যাতে চাপ বাড়ে। প্রয়োজনে বাইরে যেতে হলে তার আগে সংবাদমাধ্যম থেকে সর্বশেষ পরিস্থিতি জেনে নিতে পারেন।

পরিবারকে সময় দিন

বাড়িতে থাকা বয়স্ক সদস্যকে হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করুন

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটান। বিশেষ করে বাড়ির বয়স্ক ও ছোটদের সময় দিন। তাদের নিয়ে ক্যারম, বাগাডুলি কিংবা দাবার মতো যেসব খেলা ঘরে বসে খেলা যায়, সেগুলোয় সময় ব্যয় করতে পারেন। শব্দ নিয়েও মুখে মুখে নানান খেলা হতে পারে। পরিবারের সদস্যদের একজন একটি কল্পিত গল্প শুরু করে দিলে অন্যরা মিলে সেটিকে সমাপ্তের চেষ্টা করতে পারেন। ছোটদের সঙ্গে নিয়ে ছবি আঁকা, বই পড়া কিংবা অন্যান্য সৃজনশীল কাজ করতে পারেন। খানিক দৌড়ঝাঁপও চলতে পারে তাদের সঙ্গে। ছাদেও হতে পারে খেলাধুলা। দূরে থাকা স্বজনদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করতে পারেন। বাড়িতে পোষা প্রাণী থাকলে ওদেরও সময় দিন।

নিজের মতো ভিন্ন সময়

ইন্টারনেট ছাড়াই যখন পৃথিবীটা চমৎকার ছিল, সেই সময়ের মতো করে সময় কাটাতে চেষ্টা করুন। বাড়িতে থাকা পুরোনো বই পড়তে পারেন। চাইলে কিছু লিখতেও পারেন নিজের মতো করে। ঘরে বা ছাদে শরীরচর্চা করুন, হাঁটুন। বাড়ির ছাদে বা অন্দরে গাছ থাকলে সেগুলোর যত্ন নিন। ঘরের যেসব কাজ আমরা দৈনন্দিন ব্যস্ততার জন্য সব সময় করে উঠতে পারি না, সেগুলোয় সময় ব্যয় করতে পারেন। কাগজ বা ফেলনা জিনিস দিয়ে কিছু তৈরি করতে পারেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে চলার নামই তো জীবন। প্রাণ ও প্রকৃতির প্রতি সহমর্মী হোন। সহমর্মিতার চর্চা এখনকার সময়ে বড় প্রয়োজন।