আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের (আইডিএফ) তথ্যমতে, বাংলাদেশে বর্তমানে ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, যাঁদের প্রায় অর্ধেকই নারী। আরেক গবেষণা বলছে, দেশে প্রতি ১০০ নারীর মধ্যে ২৬ জন গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে ভোগেন। তাঁদের মধ্যে ৬৫ শতাংশই পরবর্তী সময়ে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন।
ধারণা করা হয়, ৭০-৯০ শতাংশ সুস্থ অন্তঃসত্ত্বা মুসলমান নারী রোজা পালন করেন। কিন্তু যাঁদের গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস বা অন্যান্য জটিলতা আছে, তাঁরা কী করবেন।
গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বা আগে থেকে ডায়াবেটিস আছে, এমন নারীকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রোজা রাখতে হবে। কারণ, তাঁদের হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তের গ্লুকোজ কমে যাওয়া), হাইপারগ্লাইসেমিয়ার (রক্তের গ্লুকোজ বেড়ে যাওয়া), পানিশূন্যতা, কিটোঅ্যাসিডোসিস ও থ্রম্বোঅ্যাম্বোলিজমের ঝুঁকি থাকে। এগুলো হলে মা ও ভ্রূণের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
রমজানের শুরুতেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত গর্ভবতী নারীর চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত; আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা উচিত।
এই প্রশিক্ষণে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কী হবে, মা ও শিশুর ওপর ডায়াবেটিসের প্রভাব; ইনসুলিন ইনজেকশন দেওয়ার কৌশল; তীব্র জটিলতার ব্যবস্থাপনা ও রোজাভঙ্গের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিশদভাবে জানতে পারবেন।
রমজানে নারীদের স্বাভাবিক শারীরিক কার্যকলাপ বজায় রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ সময় পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ ও তারাবিহ অনেকটা ব্যায়ামের কাজ করে থাকে।
উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য। ফলের রস ও চিনিযুক্ত পানীয় থেকে বিরত থাকা, লবণাক্ত খাবারও এড়ানো উচিত এবং ক্যাফেইন গ্রহণ সীমিত করতে হবে।
যথেষ্ট আঁশসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে এবং দিনে দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করা উচিত।
কার্বোহাইড্রেটসমৃদ্ধ বা উচ্চ ক্যালরিসমৃদ্ধ খাবার খেলে ডায়াবেটিসের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই স্বাস্থ্যসম্মত সুষম খাবারের বিকল্প নেই।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত গর্ভবতী নারীরা যতটা সম্ভব দেরিতে সাহ্রি খাবেন।
ডা. মারুফা মোস্তারী, সহকারী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়