হার্টের করোনারি রক্তনালিতে ব্লক বা বাধা তৈরি হলে হার্ট অ্যাটাক হয়। এর প্রধান লক্ষণ, হঠাৎ বুকে ব্যথা। বুকের ঠিক মাঝখানে এ ব্যথাকে মনে হয় কেউ যেন বুক চেপে ধরেছে। অনেক সময় ভারী বা পাথরচাপার মতো মনে হয়। হার্ট অ্যাটাকের ব্যথা বিশ্রামেও কমে না। সময়ের সঙ্গে তীব্রতা বাড়তে থাকে। সঙ্গে শরীর ঘামা, বমি বা বমিভাব হতে পারে।
হার্ট অ্যাটাকের এসব লক্ষণ কমবেশি সবার জানা। প্রশ্ন হলো, বুকে ব্যথা ছাড়া কি হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। জবাব, হ্যাঁ। একে বলে নীরব বা সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যত হার্ট অ্যাটাক হয়, তার ১২ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্তই হতে পারে বুকে কোনো ব্যথা ছাড়াই।
হার্ট অ্যাটাকে সচরাচর যেমন বুকব্যথা হয়, নীরব হার্ট অ্যাটাকে তা না হলেও ভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যেমন: ব্যথা হতে পারে হাত বা চোয়াল, কাঁধ বা পিঠের ওপর দিকে।
কাদের বেশি হয়
বয়স্ক ব্যক্তিরা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। কারণ, তাঁদের শারীরিক অনেক লক্ষণ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয় না এবং তাঁরা বর্ণনা করতে পারেন না।
যাঁরা দীর্ঘদিন ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাঁদের স্নায়ুজনিত জটিলতা হতে পারে। তখন অনেকের ব্যথার অনুভূতি কমে নীরব হার্ট অ্যাটাক বেশি হয়।
কিছু গবেষণা বলছে, নারীদের নীরব হার্ট অ্যাটাক বেশি হয়।
নিয়মিত ব্যথানাশক ওষুধ বা স্টেরয়েড ব্যবহারে হার্ট অ্যাটাকের বুকব্যথা ঢাকা পড়তে পারে।
নীরব হার্ট অ্যাটাকে ভিন্ন উপসর্গ
হার্ট অ্যাটাকে সচরাচর যেমন বুকব্যথা হয়, নীরব হার্ট অ্যাটাকে তা না হলেও ভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যেমন: ব্যথা হতে পারে হাত বা চোয়াল, কাঁধ বা পিঠের ওপর দিকে।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার মতো লক্ষণ, যেমন: পেটের উপরিভাগে ব্যথা বা অস্বস্তি, বমিভাব, বমি ও বদহজম দেখা দিতে পারে।
দেখা দিতে পারে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট, অস্বাভাবিক ক্লান্তি, রক্তচাপ কমে যাওয়া, অত্যধিক শরীর ঘামা, মাথা ঝিমঝিম করা, মাথা ঘোরা বা মাথায় হালকা বোধ করার মতো লক্ষণ।
শনাক্ত
নীরব হার্ট অ্যাটাক সন্দেহ হলে রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে। ইসিজি এবং রক্তের ট্রপোনিন পরীক্ষার মাধ্যমে সহজেই হার্ট অ্যাটাক শনাক্ত করা যায়। হার্টের ইকোকার্ডিওগ্রাম হার্ট অ্যাটাক ছাড়াও হার্ট অ্যাটাক থেকে সৃষ্ট জটিলতা শনাক্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
জটিলতা
নীরব হার্ট অ্যাটাকে অনেকে সময়মতো চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন না। হাসপাতালে পৌঁছাতে বেশ দেরি করে ফেলেন। চিকিৎসা না নিলে জটিলতার আশঙ্কা বেড়ে যায়, মৃত্যুও হতে পারে। জটিলতাগুলোর মধ্যে হার্ট দুর্বল, হার্ট বড় হওয়া, পাম্পিং ক্ষমতা কমে যাওয়া অন্যতম।
করণীয়
বুকের যেকোনো অস্বস্তি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। বয়স যতই হোক, যাঁদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেশি অর্থাৎ ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ আছে, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি, ধূমপানের অভ্যাস অথবা রক্ত-সম্পর্কের কারও হার্ট অ্যাটাকের পারিবারিক ইতিহাস আছে, তাঁদের বুকে যেকোনো অস্বস্তি, চাপভাব, বমিভাব, বমি, হঠাৎ শ্বাসকষ্ট, অতিরিক্ত ক্লান্তি ও রক্তচাপ কমে যাওয়াকে একদম অবহেলা করা যাবে না। দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
ডা. শরদিন্দু শেখর রায়, সহকারী অধ্যাপক, হৃদ্রোগ বিভাগ, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা