রাতে ঘাম বেশি হচ্ছে? দেখুন তো এসব কারণে কি না

চাই পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম
ছবি: লুকাস অ্যানড্রেড, পেকজেলস ডটকম

ঘাম হওয়া শরীরের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। গরমে, বিশেষ করে চলতি আবহাওয়ায় বেশি ঘাম হতেই পারে। কিন্তু রাতে অতিরিক্ত ঘাম হওয়াটা স্বাভাবিক নয়।

রাতে ঘুমানোর সময় দেহের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে, তা ঠান্ডা করার অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া হলো ঘাম হওয়া। ঘাম বন্ধ করার সহজ উপায় হলো, কম তাপমাত্রার ঘরে ঘুমানো। তবে এরপরও অনেকের ঘাম হয়। এর নির্দিষ্ট কিছু কারণ আছে। এসব কারণে ঘুমের মধ্যে বেশি ঘাম হতে পারে, মেডিকেলের ভাষায় যাকে বলে ‘নাইট সোয়েটস’।

কারণ

  • উদ্বেগের কারণে বাড়তে পারে ঘামের মাত্রা। উদ্বেগের উপসর্গ হচ্ছে প্যানিক অ্যাটাক, অগভীর শ্বাস-প্রশ্বাস, দ্রুত হৃৎস্পন্দন ইত্যাদি। রাতের ঘাম কমাতে উদ্বেগ কমাতে হবে, আর এ জন্য পেছনের কারণ খুঁজে বের করতে হবে।

  • হাইপারহাইড্রোসিস আরেকটি কারণ, যার অর্থ স্বাভাবিকভাবেই প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ঘামে শরীর। অতিরিক্ত ঘাম সাধারণত শরীরের এক বা দুটি অংশে হয়, হাতের তালু, পা, বাহুমূল বা মাথা। অনেক সময় হাইপারহাইড্রোসিসের কারণেও হতে পারে রাতের ঘাম। এর প্রাথমিক ইঙ্গিতগুলোর মধ্যে একটি হলো জেগে থাকা অবস্থায় কোনো পরিশ্রম না করেই প্রচুর ঘাম হতে থাকা। এটি বংশগতও হতে পারে, আবার থাইরয়েডের সমস্যা, হাই কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস—এসব কারণেও হতে পারে।

  • থাইরয়েড একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থি, যা হরমোন তৈরি করে এবং দেহের প্রতিটি অঙ্গকে প্রভাবিত করে। তাই এই গ্রন্থির কোনো ঝামেলা হলে অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গও বিপদে পড়তে পারে। অতিরিক্ত থাইরয়েড হরমোনের নিঃসরণ দেহে বাড়তি তাপ উৎপাদন করে, ফলে ঘাম বেশি হয়। এমন আশঙ্কা থাকলে হরমোন পরীক্ষা করান।

  • বয়স ৫০-এর পর অধিকাংশ নারীর মেনোপোজ দেখা দেয়। এর অন্যতম লক্ষণ রাতে গরম লাগা ও ঘাম হওয়া।

  • অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস, উচ্চ রক্তচাপ বা অন্যান্য ধরনের ওষুধ খাওয়ার ফলে কখনো কখনো ঘামের মতো অস্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। ঘাম গ্রন্থি ও শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, এমন ওষুধ মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করার ফলে এমনটি ঘটে থাকে।

  • ইনফেকশনের কারণে রাতে ঘাম হতে পারে। ইনফেকশনের মধ্যে যক্ষ্মা, ফোড়া, এন্ডোকার্ডাইটিস (হার্ট ভালভের প্রদাহ), অস্টিওমাইয়িলিটিস (অস্থির প্রদাহ) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। অন্যান্য মারাত্মক ইনফেকশনের (যেমন এইডস) কারণেও ঘাম হতে পারে। এর সঙ্গে জ্বর বা ওজন হ্রাস পাওয়া, এসব লক্ষণ থাকতে পারে।

  • ঘুমের সমস্যাতেও রাতে এ রকম ঘাম হতে পারে। নাক ডাকার সমস্যায় বা শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি হলেও রাতে ঘাম হতে পারে।

  • রক্তে শর্করার পরিমাণ অতিমাত্রায় কমে গেলে ঘাম সৃষ্টি হতে পারে। হাইপোগ্লাইসেমিয়ার (রক্তে শর্করার অভাব) কারণে ডায়াবেটিস রোগীরা রাতে ঘামতে পারে। যাঁরা ইনসুলিন নেন, তাঁদের ডোজ বেশি হলে বা খাবার সময়মতো না খেলে, এ রকম হতে পারে।

করণীয়

রাতে অতিরিক্ত ঘাম কোনো স্বাভাবিক লক্ষণ নয়। একে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কারণ বের করতে হবে এবং সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।