রাতের ঘুমের সময়সূচি ঠিক করবেন কীভাবে

পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষই রাতে পর্যাপ্ত ঘুমান না। ৫০ বছর বয়সের পর কেউ যদি রাতে সাত ঘণ্টার কম ঘুমান, তাহলে তাঁর ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ হওয়ার আশঙ্কা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, দুশ্চিন্তা থেকে স্নায়ুচাপ, স্থূলতা ও ডায়াবেটিসের মতো শারীরিক সমস্যা তৈরি হতে পারে। অপর্যাপ্ত ঘুম থেকে বাঁচতে আগে ঘুমের সময়সূচি ঠিক করে নেওয়া জরুরি।

স্নায়ুর ওপর থেকে চাপ কমান


শারীরিক সমস্যা ছাড়াও মানসিক নানা রকম চাপের কারণে আমাদের ইনসমনিয়া দেখা দেয়। ব্যাপারটা এমন হয় যে বিশ্রামের জন্য আপনার শরীর প্রস্তুত থাকলেও সময়মতো মস্তিষ্ক প্রস্তুত হয় না। মানসিক চাপ আমাদের দেহে অ্যাড্রেনালিন এবং কর্টিসল হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়, যা শরীরে রক্তচাপ ও হৃৎকম্পন বৃদ্ধি করে।
এ ক্ষেত্রে যোগব্যায়াম ও ধ্যান করে কিংবা সফট মিউজিক শুনে অথবা গরম পানি দিয়ে গোসল করে আপনার স্নায়ুচাপ কমিয়ে ফেলতে পারেন। এতে অবস্থা আগের চেয়ে কিছুটা ভালো হবে।

অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, দুশ্চিন্তা থেকে স্নায়ুচাপ, স্থূলতা ও ডায়াবেটিসের মতো শারীরিক সমস্যা তৈরি হতে পারে

দেহঘড়ি মেনে চলা

এক অন্তর্নিহিত জৈবিক ঘড়ি মানবদেহের অভ্যন্তরে সর্বদা ক্রিয়াশীল। এটাকে আমরা বলি দেহঘড়ি। দিনের আলো থাকা না–থাকার ওপর এই জৈবিক ঘড়ি আমাদের শরীরের তাপমাত্রা, বিপাকক্রিয়া, ক্ষুধা ও হরমোনের নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে, যা সামগ্রিকভাবে আমাদের ঘুম আনার প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলে। জেট লেগ, রাত জেগে কাজ করাসহ নানা কারণে আমাদের প্রতিদিনকার ঘুমের শিডিউলে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। ফলে আমাদের দেহঘড়ি তার ছন্দ হারিয়ে ফেলে এবং এর বিরূপ প্রভাব পুরো শরীরের ওপর পড়ে।


তাই প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যান। আবার নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে জেগে উঠুন। দেহঘড়ি মেনে চলুন। এতে সমস্যা অনেকটাই সমাধান করা সম্ভব।

অল্প একটু ঘুমিয়ে নেওয়া


ব্যক্তিভেদে ও পরিস্থিতি অনুযায়ী অল্প করে ঘুমিয়ে নেওয়া আসল ঘুমের জন্য ভালো ও খারাপ—দুই-ই হতে পারে। দিনের বেলা ৩০ মিনিট বা এর চেয়ে কম সময়ের জন্য অল্প ঘুমিয়ে নিলে আমাদের মস্তিষ্ক অনেক বেশি কর্মক্ষম হয়ে ওঠে। বিপরীতে আসল ঘুমে এর কোনো খারাপ প্রভাব পড়ে না। তবে যাঁদের ইনসমনিয়ার সমস্যা আছে, তাঁদের জন্য এ পদ্ধতি কার্যকর নয়। আবার দিনের বেলা এক ঘণ্টার বেশি ঘুমালে স্বাভাবিকভাবেই তা রাতের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাবে।

দিনের বেলা ৩০ মিনিট বা এর চেয়ে কম সময়ের জন্য অল্প ঘুমিয়ে নিলে আমাদের মস্তিষ্ক অনেক বেশি কর্মক্ষম হয়ে ওঠে

‘সিবিটি’ নেওয়া

কগনিটিভ বিহ্যাভিওরাল থেরাপির সংক্ষিপ্ত রূপ হলো সিবিটি। এই চিকিৎসাপদ্ধতিতে একজন থেরাপিস্ট রোগীদের ইনসমনিয়ার জন্য দায়ী নেতিবাচক চিন্তাভাবনাগুলোকে আলাদা করে চিনতে সাহায্য করেন। আর যে ভাবনাচিন্তা বা কাজগুলো ঘুম ত্বরান্বিত করে, সেগুলোও চর্চা করতে শেখান। এই চিকিৎসাপদ্ধতিতে থেরাপিস্টের কাছ থেকে ছয়–আটটি সেশন নেওয়ার পর বেশির ভাগ রোগীই স্বাভাবিক ঘুমের শিডিউলে মানিয়ে নিতে পারেন।


এ ছাড়া প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যান। একই সময়ে উঠুন। প্রয়োজনে মৃদু উষ্ণ গরম পানি দিয়ে গোসল সেরে নিতে পারেন। আর সূর্য ডোবার পর কোনো চা-কফি বা ক্যাফেইনজাতীয় খাবার নয়। নয় মুঠোফোন, ল্যাপটপ বা টেলিভিশনের নীল আলো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের স্ক্রলিংয়ের ফাঁদ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখুন। পারতপক্ষে বিছানায় মুঠোফোন নিয়ে যাবেন না। রাতে ঘুমানোর আগে হালকা বই পড়তে পারেন। আবার কিছু লেখালেখিও করতে পারেন।

প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যান। একই সময়ে উঠুন