‘কাল থেকে এটা করবেন না, ওটা করবেন না’ বলা যতটা সহজ, মেনে চলা ততটাই কঠিন। রোজকার অভ্যাস বদলানো সহজ নয়। তবে আপনার উদ্দেশ্য যদি হয় ক্যানসারের ঝুঁকি কমানো, সে ক্ষেত্রে এসব অভ্যাস বদলাতে আগ্রহ একটু বাড়তে পারে বৈকি।
চলতি বছর আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটি একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে; যেখানে বলা হয়, ৩০ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষেরা যদি কিছু নিয়ম মেনে চলেন, তবে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে। কী সেই অভ্যাস, যা ক্যানসারের ঝুঁকি এতটা কমতে পারে?
১. ধূমপানকে ‘না’ বলতেই হবে
মোটাদাগে বলতে গেলে ধূমপান আর বাড়তি ওজন ঝরিয়ে ফেললে আপনার ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকটাই কমবে। নিজে ধূমপান থেকে দূরে থাকাই যথেষ্ট নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরোক্ষ ধূমপানও ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। এ গবেষণায় দেখা গেছে, সিগারেট সবচেয়ে বেশি ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। ধূমপানে এই ঝুঁকি ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। তাই আপনাকে ধূমপানমুক্ত জীবন যাপন করতে হবে।
২. অতিরিক্ত ওজন ঝরিয়ে ফেলুন
মার্কিন গবেষণা বলছে, অতিরিক্ত ওজন ৭ দশমিক ৬ শতাংশ ক্ষেত্রে ক্যানসারের ঝুঁকি তৈরি করে। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেই হবে। নিয়মিত বিএমআই (বডি মাস ইনডেক্স, একটি গাণিতিক ফর্মুলা, যার মাধ্যমে আপনার উচ্চতা অনুযায়ী ওজন কত হওয়া উচিত, তা নির্ণয় করা যায়) চেক করবেন। বিএমআই যদি ২০-২৪.৯ কেজি/মিটার স্কয়ার হয়, তবে তার ওজন স্বাভাবিক মাত্রায় আছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের (যার মধ্যে বাংলাদেশিরা অন্তর্ভুক্ত) জন্য এটা ২৩–এর নিচে থাকাই ভালো। এর বেশি মানেই আপনার ওজন বেশি।
মূলত এ দুই বিষয় নিয়ন্ত্রণে রাখলে ক্যানসারের ঝুঁকি ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে ফেলা সম্ভব।
প্লেটে থাকুক ফল, সবজি, সালাদের আধিপত্য
আপনি যদি যথেষ্ট পরিমাণ ফল, সবজি, সালাদ, ফাইবার ও ক্যালসিয়াম–সমৃদ্ধ খাবার না খান, তাহলেও আপনি ঝুঁকির দলে পড়তে পারেন। জাপানি একটা প্রবাদ আছে, ‘আপনি যা খান, আপনি তা–ই।’ এর মানে হলো, আপনি যত টাটকা খাবার খাবেন, তত ভালো থাকবেন।
রেড মিট আর প্রসেসড মিট থেকে দূরে থাকুন
এ গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, রেড মিট আর প্রসেসড মিট যত কম খাওয়া যায়, ততই ভালো। না খেলে সবচেয়ে ভালো।
আসলে শাকসবজি ও ফলমূল বেশি খেলে আপনার ওজন স্বাভাবিকভাবেই নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এ ছাড়া নিয়মিত হাঁটা, ব্যায়াম বা শারীরিকভাবে কর্মক্ষম থাকাও আপনার ফিটনেসের জন্য জরুরি।
হেপাটাইটিস বি, এপস্টাইন-বার ভাইরাসের টিকা নিয়ে রাখার পরামর্শও দিয়েছেন মার্কিন বিশেষজ্ঞরা। এতেও ক্যানসারের কমবে ঝুঁকি।
কী ছাড়লে কী হবে
অভ্যাসের বদল এনে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি কমানো যায় ফুসফুস ক্যানসারের ক্ষেত্রে। কেবল ধূমপান ছাড়লেই এ ধরনের ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি অনেকটা এড়ানো যায়। সহজে এড়ানো যায়—এমন আরও দুটি ক্যানসার হলো ত্বক ও কোলারেক্টারাল ক্যানসার।
আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির গবেষক ফারহাদ ইসলাম জানান, ধূমপানের জন্য দায়ী ফুসফুসের ক্যানসারে মৃত্যুর সংখ্যা উদ্বেগজনক। জীবনযাপনের ধরন বদলে এ ঝুঁকি সহজেই কমানো যায়।
এই করলেই এই হবে—এটা মেনে চলা যে সহজ নয়, সেটা বিশেষজ্ঞরাও জানেন। তবে তাঁরা মনে করেন, এ ধরনের গবেষণা মানুষকে সহজে প্রভাবিত করে। তা ছাড়া নীতিনির্ধারকদের জন্যও সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়।
তথ্যসূত্র: ইউএস টুডে