নখ শুধু যে সৌন্দর্যের প্রতীক তা নয়। নখ দেখে চেনা যায় অনেক রোগবালাই। শারীরিক নানা সমস্যার চিহ্ন ফুটে ওঠে আমাদের নখে। এমনকি নখের আকার, ধরন, রঙের পরিবর্তন দেখে আমরা বিভিন্ন রোগের ধারণা পেয়ে থাকি।
আয়রন ঘাটতিজনিত রক্তশূন্যতায় নখ পাতলা ও ভঙ্গুর হয়ে যায়। অতিরিক্ত ঘাটতি হলে নখ চামচের মতো বেঁকেও যায়, যা দেখে কোনো পরীক্ষা ছাড়াই বলে দেওয়া যেতে পারে রোগীর আয়রনের ঘাটতি হয়েছে।
আরেকটি খুবই পরিচিত অসুখ হলো নখে ছত্রাকের আক্রমণ। নখে ছত্রাকের সংক্রমণ হলে নখ উঠে যেতে পারে অথবা হলুদ হয়ে যেতে পারে। এমনকি নখের গোড়ায় পুঁজও হতে পারে। নখে ছত্রাক সংক্রমণ ডায়াবেটিক রোগীদের বেশি হয়ে থাকে। এ ছাড়া স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবন, হরমোনজনিত রোগ যেমন কুশিং সিনড্রোম, দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম—এমন সমস্যায়ও হতে পারে নখে ছত্রাকের সংক্রমণ ও প্রদাহ।
কোনো কোনো রোগে নখ পাখির ঠোঁটের মতো বেঁকেও যায়, যাকে ডাক্তারি ভাষায় ক্লাবিং বলা হয়। ফুসফুসের ক্যানসার, ফুসফুসের সংক্রমণ যেমন ব্রঙ্কাইক্টেসিস, ফুসফুসের ফোড়া, ফুসফুস শুকিয়ে যাওয়া অথবা দীর্ঘমেয়াদি যক্ষ্মা থাকলে এমন হয়ে থাকে। এ ছাড়া হৃৎপিণ্ডের সংক্রমণ, জন্মগত হৃৎপিণ্ডের ত্রুটি, লিভার সিরোসিস, পরিপাকতন্ত্রের প্রদাহ (আইবিডি) ইত্যাদি রোগেও হয়ে থাকে। এমনকি থাইরয়েড হরমোন বেশি হলেও ক্লাবিং হতে পারে। তবে ক্লাবিং কোনো রোগ ছাড়াও হতে পারে, যাকে ফ্যামিলিয়ার ক্লাবিং বলা হয় অর্থাৎ এটি পারিবারিক।
এ ছাড়া চর্মরোগ সোরিয়াসিস হলে নখে ছোট ছোট গর্ত হয়ে থাকে। হৃৎপিণ্ডের সংক্রমণ (ব্যাকটেরিয়াল এন্ডোকারডাইটিস) হলে নখের নিচে রেখার মতো রক্তক্ষরণ দেখা যায়। কিডনি রোগে নখে সাদা সাদা আড়াআড়ি দাগ অথবা অর্ধেক নখ বাদামি আর অর্ধেক নখ সাদা ইত্যাদি ক্রনিক কিডনি ডিজিজ হতে পারে।
নখের প্রতি আমাদের যত্নশীল হতে হবে। বেশি করে তাজা শাকসবজি ও ফল খেতে হবে। যাঁদের ডায়াবেটিস আছে, তাঁরা আরও বেশি যত্নশীল হবেন। যেমন নখ পরিষ্কার ও শুকনা রাখা ইত্যাদি। নখে সামান্য পরিবর্তন দেখা দিলে তা অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।