কাঠবাদামকে অনেকে বলে ‘বাদামের রাজা’। কাঠবাদাম উপকারী নিঃসন্দেহে। এতে আছে বেশ কিছু পুষ্টি উপাদান। আর এসব কারণেই কাঠবাদামকে বিভিন্ন দেশে অন্যতম প্রধান খাদ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যাঁরা ওজন কমাতে চান, তাঁরা জাঙ্ক ফুডের পরিবর্তে স্ন্যাকস হিসেবে কাঠবাদাম খেতে পারেন অনায়াসে। শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য কাঠবাদাম পানিতে ভিজিয়ে খাওয়ানোরও চল আছে। কিন্তু দিনে কয়টি কাঠবাদাম খাওয়া ভালো? কখনইবা খেলে সবচেয়ে উপকার পাবেন? কোন কোন খাবারের সঙ্গে কাঠবাদাম মিশিয়ে খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়? খাওয়ার সময় কী কী বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন?
কাঠবাদাম প্রয়োজনীয় পুষ্টির এক চমৎকার উৎস। ২৮ গ্রাম (প্রায় ২৩টি) কাঠবাদামে নিচের পুষ্টি উপাদানগুলো পাবেন।
ক্যালরি: ১৬০
প্রোটিন: ৬ গ্রাম
স্বাস্থ্যকর চর্বি: ১৪ গ্রাম (৯ গ্রাম মনোস্যাচুরেটেড, ৩ গ্রাম পলিস্যাচুরেটেড)
আঁশ: ৩.৫ গ্রাম
শর্করা: ৬ গ্রাম
ভিটামিন ই: ৭.৩ মিলিগ্রাম (দৈনিক চাহিদার ৩৭%)
ম্যাগনেশিয়াম: ৭৬ মিলিগ্রাম (দৈনিক চাহিদার ১৯%)
ক্যালসিয়াম: ৭৬ মিলিগ্রাম (দৈনিক চাহিদার ৭%)
লোহা: ১ মিলিগ্রাম (দৈনিক চাহিদার ৬%)
কাঠবাদামে, বিশেষ করে এর বাদামি খোসায় প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে, যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও প্রদাহ দূর করে।
আপনার সারা দিনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাণশক্তি জোগাতে দিনে এক মুঠ কাঠবাদাম খাওয়াই যথেষ্ট। এক মুঠে ধরবে ৭-৮টি কাঠবাদাম। বাদামগুলো পানি অথবা দুধে ভিজিয়ে খেতে পারেন। কাঁচাও খাওয়া যায়। স্বাদ বাড়ানোর জন্য বাদামগুলো ভেজে নিতে পারেন। বাসায় কাঠবাদামের মাখন তৈরি করে পাউরুটি দিয়ে খাওয়া চলে।
সকালে খালি পেটে কাঠবাদাম খাওয়া সবচেয়ে ভালো। এতে কাঠবাদাম সারা দিন আপনার শরীরে শক্তি জোগাবে। ব্যায়ামের আগে কাঠবাদাম খাওয়া শরীরে দ্রুত শক্তি সঞ্চার করার একটি সহজ উপায়। ব্যায়ামের পর প্রোটিন-জাতীয় খাবার, যেমন গ্রিক ইয়োগার্টের সঙ্গে কাঠবাদাম খেলে শরীরের পেশির ক্ষয়পূরণে সাহায্য করে। কাঠবাদাম ওজন কমাতেও বেশ কার্যকর। অস্বাস্থ্যকর স্ন্যাকসের বদলে কাঠবাদাম খেলে যেমন ক্ষুধা মিটবে, তেমনি পেট ভরা থাকার কারণে খাবার কম খেতে ইচ্ছা করবে। রাতে কাঠবাদাম খেলে ঘুম ভালো হয়। কারণ, কাঠবাদামে বিদ্যমান ম্যাগনেশিয়াম মনকে উদ্বেগমুক্ত রাখে এবং অনিদ্রা কমায়।
পুষ্টি উপাদানের দ্রুত শোষণের জন্য জুতসই খাবারের সঙ্গে কাঠবাদাম মিশিয়ে খেতে হবে। আপেল বা কলার সঙ্গে কাঠবাদাম মিশিয়ে তৈরি করুন আঁশসমৃদ্ধ স্বাস্থ্যকর নাশতা, যা স্বাস্থ্যকর চর্বিগুলোর সঙ্গে প্রাকৃতিক শর্করার ভারসাম্য বজায় রাখবে। টক দই বা দুধের সঙ্গে কাঠবাদাম মিশিয়ে খেলে ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন গ্রহণের পরিমাণ বাড়ে। এক চিমটি হলুদ বা দারুচিনি মেশানো কুসুম গরম দুধের সঙ্গে কাঠবাদাম মিশিয়ে খেতে বেশ ভালো লাগবে। কাঠবাদামের সঙ্গে ডার্ক চকলেট মেশালে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ একটি খাবার তৈরি হবে। এটি হৃৎপিণ্ডের জন্যও উপকারী। ওটমিল, চিড়া বা সুজির সঙ্গে কাঠবাদাম খেতে বেশ মচমচে লাগবে, খাবারে স্বাস্থ্যকর চর্বি ও প্রোটিন যুক্ত হবে।
শিশুরা, বিশেষ করে যারা পড়াশোনা করে, অন্তঃসত্ত্বা নারী, ক্রীড়াবিদ, ডায়াবেটিস ও হৃদ্রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য কাঠবাদাম উপকারী। তবে যাঁদের কিডনিতে পাথর আছে, তাঁরা কাঠবাদাম এড়িয়ে চলুন।
সূত্র: ওয়েব এমডি