প্রতীকী
প্রতীকী

টনসিলাইটিসের চিকিৎসাপদ্ধতি ও জটিলতা

টনসিল বা টনসিলাইটিস খুবই পরিচিত সমস্যা, বিশেষ করে শিশু–কিশোরদের। এটি সাধারণত ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে হয়। প্রতি চার স্কুলশিশুর একজনের এ সমস্যা হতে দেখা যায়। এ সমস্যায় ওষুধ না অস্ত্রোপচার, এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন অভিভাবকেরা। কোনো কোনো শিশু সারা বছর টনসিলের প্রদাহে বারবার ভোগে, স্কুল কামাই হয়। এর স্থায়ী সমাধান আছে কি? আসুন, জেনে নিই এর চিকিৎসাপদ্ধতি ও জটিলতা সম্পর্কে।

চিকিৎসা

ওষুধ ও নানা ধরনের ঘরোয়া পদ্ধতিতে টনসিলাইটিসের চিকিৎসা করা হয়। অস্ত্রোপচারও একটি পদ্ধতি।

  • ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের জন্য ব্যবহৃত হয় অ্যান্টিবায়োটিক। ব্যথা কমাতে ব্যথানাশক ওষুধ বা প্যারাসিটামল দিতে হয়।

  • কুসুম গরম পানিতে লবণ দিয়ে গড়গড়া করতে হবে প্রতিবার খাওয়ার পর।

  • সমস্যা দেখা দিলে স্কুলে না গিয়ে বিশ্রাম নিতে হবে এবং পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। এতে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়বে।

  • গুরুতর বা বারবার টনসিলাইটিসের ক্ষেত্রে টনসিল অপারেশনের (টনসিলেক্টমি) প্রয়োজন হতে পারে।

কখন অস্ত্রোপচার

  • বারবার টনসিলে প্রদাহ।

  • বছরে পাঁচবারের বেশি প্রদাহ।

  • দীর্ঘস্থায়ী স্লিপ অ্যাপনিয়া বা নাক ডাকার সমস্যা।

  • টনসিল বড় হয়ে শ্বাসনালি ব্লক ও শ্বাস নিতে কষ্ট হলে।

  • টনসিল দেখতে টিউমারের মতো বড় হলে।

অস্ত্রোপচারের পদ্ধতি

  • টনসিলেক্টমি: সম্পূর্ণ টনসিল অপসারণ।

  • এক্সট্রাক্যাপসুলার টনসিলেক্টমি: টনসিলকে একটি একক ইউনিট হিসেবে সরানো।

  • কোল্ড ডিসেকশন: একটি তীক্ষ্ণ ব্যবচ্ছেদকৌশল, যা গোল্ড স্যান্ডার্ড হিসেবে বিবেচিত।

  • আল্ট্রাসনিক বা হারমনিক ডিসেকসন: একটি স্ক্যাপেল ব্লেডে একই সময় টিস্যু কাটা ও জমাট বাঁধতে উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সিতে কম্পন করা।

  • বাইপোলার রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশন: আণবিক বন্ধন ব্যাহত করার জন্য একটি আয়নযুক্ত লবণাক্ত স্তর তৈরি করা।

  • এন্ডোস্কোপিক মাইক্রোডিব্রাইডার: টনসিল অপসারণের আরেকটি পদ্ধতি।

  • ইউভুলো–প্যালাটোফ্যারিঙ্গোপ্লাস্টি: স্লিপ অ্যাপনিয়া ও নাক ডাকার চিকিৎসায় মুখ ও গলার পেছনের অতিরিক্ত টিস্যু অপসারণ।

টনসিলে প্রদাহের জটিলতা

  • বারবার অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে কোনো অ্যানাফাইল্যাকটিক প্রতিক্রিয়া বা অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি অ্যালার্জি।

  • অ্যাবসেস বা টনসিলের চারপাশে পুঁজ জমা।

  • অস্ত্রোপচারের পর বা সংক্রমণের কারণে রক্তপাত।

  • গলায় দীর্ঘমেয়াদি জ্বালা।

  • অস্ত্রোপচারের পর ইউভুলার (তালুর পেছনের অংশ) ফুলে যাওয়া।

  • রিউমেটিক ফিভার।

  • কিডনিতে সমস্যা।

  • হৃৎ‌পিণ্ডে জটিলতা।

মনে রাখতে হবে, চিকিৎসা সময়মতো না করলে বা জটিলতা বাড়লে পরিস্থিতি আরও গুরুতর হতে পারে। যদি টনসিলের সমস্যা বারবার হয়, নাক–কান–গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

  • অধ্যাপক ডা. এম আলমগীর চৌধুরী: বিভাগীয় প্রধান, ইএনটি, আনোয়ার খান, মডার্ন মেডিকেল কলেজ, ধানমন্ডি, ঢাকা