দেশে এ সময় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মানুষের একটা বড় অংশই হলো শিশু।
জ্বরের সময় শিশুদের রুচি কমে যায়, খাবার খেতে গেলে অনেক সময় বমি হয়। আর ডেঙ্গু জ্বরে রক্তনালি থেকে রক্তের তরল অংশ নালির বাইরে চলে আসে। তাই সব মিলে পানিশূন্যতা তৈরি হয়। এ সময় শিশুদের খাবারের প্রতি অনীহা থাকলেও পুষ্টি উপাদান ও পর্যাপ্ত পানির চাহিদা পূরণে তাকে সঠিক খাওয়াদাওয়া চালিয়ে যেতে হয়।
ডেঙ্গু হলে চিকিৎসা কী হবে, তা নির্ভর করে এর ধরন বা ক্যাটাগরির ওপর। ডেঙ্গু জ্বরের ৩টি ধরন আছে—‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’। প্রথম ক্যাটাগরির রোগীরা স্বাভাবিক থাকে। তাদের শুধু জ্বর থাকে। অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী ‘এ’ ক্যাটাগরির। তাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। বাড়িতে বিশ্রাম নেওয়াই যথেষ্ট।
‘বি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগতে পারে। কিছু লক্ষণ যেমন পেটে ব্যথা, বমি, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, অন্তঃসত্ত্বা, জন্মগত সমস্যা, কিডনি বা লিভারের সমস্যা থাকলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়াই ভালো।
‘সি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বর সবচেয়ে খারাপ। এতে লিভার, কিডনি ও মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউর প্রয়োজন হতে পারে।
‘এ’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু রোগীকে সাধারণত বাড়িতেই চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায়। সে সময় তাকে প্রচুর তরলজাতীয় খাবার দিতে হবে যেন পানিশূন্যতা তৈরি না হয়। যেমন ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের জুস ও খাবার স্যালাইন।
পর্যাপ্ত পানি বলতে বড়দের ক্ষেত্রে ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি বোঝালেও শিশুদের ক্ষেত্রে এমন নয়। শিশুদের ক্ষেত্রে এই হিসাব ২০২২ সালের গাইডলাইন অনুযায়ী ৫০ মিলি করে দিতে হবে। শিশুকে তরলের ঘাটতি পূরণে দুধ, ফলের রস, পানি, ভাতের মাড়, ওরস্যালাইন বা বার্লিও খাওয়ানো যেতে পার। সাদা পানির চেয়ে ফলের রস, ওরস্যালাইন খাওয়ানো ভালো।
প্রতিদিন রোগীকে যতটুকু পানি দেবেন, তার মধ্যে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ খাবার স্যালাইন যেন থাকে। কারণ, লবণ রক্তচাপ ধরে রাখার জন্য প্রয়োজন।
ডেঙ্গুর সময় শিশুর প্রস্রাব কেমন হচ্ছে, সেটা দেখতে হবে। যদি ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা প্রস্রাব না হয়, তাহলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনে শিশুকে স্যালাইনের মাধ্যমে চিকিৎসা দিতে হতে পারে। ডেঙ্গু জ্বরে পানিশূন্যতা বা ওভার হাইড্রেশন দুই-ই বিপজ্জনক।
ডা. ফারাহ দোলা: বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর