আমাদের ধারণা, উচ্চ রক্তচাপ বড়দের রোগ। এটি অনেকাংশে সত্য। কিন্তু শিশুদেরও এটি হতে পারে, এমনকি নবজাতকও এ রোগে ভুগতে পারে। একটু বেশি বয়সী শিশু, কিশোর-কিশোরীদের উচ্চ রক্তচাপের কারণ অনেক ক্ষেত্রে জানা যায় না, যাকে বলে এসেনশিয়াল হাইপারটেনশন। এ ক্ষেত্রে স্থূলতা একটি অনুষঙ্গ হতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে আবার অন্তর্নিহিত বা নির্দিষ্ট কারণ থাকার হার বেশি। শিশুদের উচ্চ রক্তচাপের প্রধান কারণ কিডনি–সংক্রান্ত। তবে নানা ধরনের হরমোনের কারণও দায়ী হতে পারে।
রক্তচাপ পরিমাপ
শিশুদের রক্তচাপ সঠিকভাবে মাপা অনেক কঠিন। কারণ, এর জন্য প্রয়োজন বয়সভিত্তিক সঠিক যন্ত্র ও শিশুর শান্ত অবস্থা। হতে পারে তা বসে, শুইয়ে বা মায়ের কোলে রেখে। বয়সভেদে আদর্শ রক্তচাপের চার্টের সঙ্গে তুলনা করে তবেই শিশুর উচ্চ রক্তচাপ আছে কি না, বোঝা সম্ভব। যদি কোনো শিশুর রক্তচাপ ধারাবাহিকভাবে তার নির্ধারিত চার্টের ৯৫ শতাংশের ওপর থাকে, তবেই তার উচ্চ রক্তচাপ আছে বলে ধরে নেওয়া হয়।
যেসব হরমোন দায়ী
কিছু ক্ষেত্রে হরমোনের কারণে শিশুর রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার ঘটনা দেখা দেয়। হরমোনের কারণে শিশুর রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ অ্যাডরেনাল গ্রন্থির রোগ। এর মধ্যে নানা রকম টিউমার অন্যতম। এ ছাড়া কনজেনিটাল অ্যাডরেনাল হাইপারপ্লাসিয়া, অতিমাত্রার কর্টিসল ও এলডোস্টেরন হরমোন নিঃসৃত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। থাইরয়েড ও প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থির অতিমাত্রায় হরমোন নিঃসরণেও রক্তচাপ বাড়তে পারে। স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ সেবন থেকেও রক্তচাপ বাড়তে পারে।
লক্ষণ
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় শিশুর উচ্চ রক্তচাপের উপসর্গ দেখা যায় না। তবে মাথাব্যথা, বমি, মাথা ঘোরানো, বুক ধড়ফড় করা, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, ক্ষুধামান্দ্য, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, খিঁচুনি ইত্যাদিতে দ্রুত রক্তচাপ মেপে দেখা জরুরি। দীর্ঘমেয়াদি অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ থাকলে শিশুর বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে পারে এবং অন্য রোগের উপসর্গ, যেমন মুখমণ্ডল ফুলে যাওয়া, আগাম বয়ঃসন্ধির লক্ষণ ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
করণীয়
উচ্চ রক্তচাপ প্রমাণিত হলে কিডনি রোগসহ উচ্চ রক্তচাপের অন্য কারণ অনুসন্ধান করতে হবে। প্রয়োজনে হরমোনের কারণ নির্ণয়ে শিশু হরমোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
উপসর্গ বিবেচনা করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক কারণ নির্ণয় করতে উদ্যোগী হবেন।
প্রাথমিকভাবে উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে ও জটিলতা সৃষ্টি প্রতিরোধ করতে গতানুগতিক ওষুধ দিয়ে রক্তচাপ কমানো হয়। পরে সঠিক কারণ জানা গেলে বিভিন্ন হরমোন ও অন্যান্য ওষুধ দিয়ে চিকিৎসার মাধ্যমে কমানো সম্ভব। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমেও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
সব ক্ষেত্রেই প্রাথমিক অবস্থায় সঠিক কারণ নির্ণয় করা গেলে শিশুর উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা করা সম্ভব। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ সেবন করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হতে পারে।
ডা. রবি বিশ্বাস, শিশু হরমোন রোগবিশেষজ্ঞ, সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ঢাকা শিশু হাসপাতাল