যদি কারও ধমনির রক্তচাপ সব সময় ১৪০/৯০ মিমি পারদের বেশি থাকে, তাহলে সেই ব্যক্তির হাইপারটেশন বা উচ্চ রক্তচাপ আছে বলে গণ্য করা হয়। তবে এ মাপ হতে হবে সঠিক।
রক্তচাপ মাপার সঠিক নিয়ম
১. রক্তচাপ মাপার ৩০ মিনিট আগে থেকে কিছু খাওয়া যাবে না।
২. প্রস্রাবের চাপ থাকলে অব্যশই প্রস্রাব করার পর রক্তচাপ মাপতে হবে।
৩. চেয়ারের পেছন দিকে হেলান দিয়ে পাঁচ মিনিট বসার পর রক্তচাপ মাপতে হবে।
৪. রক্তচাপ মাপার সময় দুই পা মেঝেতে রেখে বসতে হবে।
৫. হাত টেবিলের ওপর রাখতে হবে, যাতে করে বাহু বুক বরাবর থাকে।
৬. রক্তচাপ মাপার মেশিনের কাফটি উন্মুক্ত বাহুতে (অর্থাৎ কোনো কাপড়ের ওপর নয়) হালকাভাবে বাঁধতে হবে।
৭. রক্তচাপ মাপার সময় কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে।
পরপর কয়েকবার সঠিক নিয়মে রক্তচাপ পরিমাপের পরও যদি বেশি পাওয়া যায়, তবে উচ্চ রক্তচাপ আছে বলে ধরে নিতে হবে।
সাধারণত উচ্চ রক্তচাপের কোনো লক্ষণ থাকে না। যতক্ষণ না এটি বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতিসাধন করে। তবে কখনো কখনো নিচের লক্ষণগুলো থাকতে পারে:
১. মাথা ঘোরা ও মাথাব্যথা
২. ঘাড়ব্যথা
৩. অস্থির লাগা
৪. বমি বমি ভাব
৫. ঘুমের সমস্যা
অনেকের ক্ষেত্রেই কোনো লক্ষণ থাকে না। তাঁদের উচ্চ রক্তচাপ অনেক সময় ধরা পড়ে না এবং তাঁরা কোনো ওষুধও খান না। তাঁরা অনেক সময় জরুরি অবস্থা যেমন: স্ট্রোক, হার্টঅ্যাটাক, হার্ট ফেইলিউরের মতো জটিল সমস্যায় পড়ে হাসপাতালে আসেন। ফলে গুরুতর ক্ষতি এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই উচ্চ রক্তচাপকে নীরব ঘাতক বলা হয়। আর ঠিক এ কারণেই মাঝেমধ্যে রক্তচাপ মাপবেন।
এখন জেনে নিন উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়লে কী করবেন:
১.আলগা লবণ বা বাড়তি লবণ খাওয়া কমাতে হবে। রান্নায়ও কম লবণ দিতে হবে।
২. ধূমপান পরিহার করতে হবে।
৩. চর্বিজাতীয় খাবার পরিহার করে শাকসবজি, ফল বেশি করে খেতে হবে।
৪. ব্যায়াম/শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে অথবা প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটতে হবে।
৫. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, বিশেষ করে মেদভুঁড়ি যাতে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৬. চিন্তামুক্ত থাকার অভ্যাস করতে হবে।
৭. নিয়মিত ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।
এখন আসা যাক, ওষুধের প্রসঙ্গে। উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ বিষয়ে অনেকেরই অনীহা আছে। আবার অনেকে চিকিৎসক না দেখিয়ে এর ওর কাছ থেকে শুনে বা ফার্মেসি থেকে নিজে কিনে ওষুধ শুরু করেন। উচ্চ রক্তচাপের জন্য অনেক ধরনের ওষুধ পাওয়া যায়। কিন্তু কোনো ব্যক্তির বয়স এবং আনুষঙ্গিক অন্য কোনো রোগ যেমন: হাঁপানি, ডায়াবেটিস, হার্ট বা কিডনির রোগ আছে কি না, তার ওপর নির্ভর করে ওই রোগীর জন্য সঠিক ওষুধ কোনটি। রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রত্যেক ব্যক্তির শরীরের সঙ্গে মানানসই ওষুধ খাওয়া উচিত। ডায়াবেটিস, হার্ট বা কিডনির রোগ থাকলে সেই ওষুধগুলোও নিয়মিত খেতে হবে।
ডা. যতীন্দ্রনাথ সাহা: কনসালটেন্ট, কার্ডিওলজি আলোক হেলথকেয়ার, মিরপুর ১০, ঢাকা