কোনো পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তি যদি বলেন, তিনি পাশের দিকে দেখতে পারছেন না। কেবল সামনের দিকটাই স্পষ্ট দেখছেন। তা হলে বুঝতে হবে, ওই ব্যক্তির অনেকটা ক্ষতি হয়ে গেছে।
এই ক্ষতির কারণ গ্লুকোমা। আট থেকে আশি—যেকোনো বয়সী মানুষের চোখেই থাবা বসাতে পারে গ্লুকোমা। ঠিক সময়ে ধরা না পড়লে এবং চিকিৎসা শুরু না করলে চিরতরে দৃষ্টিশক্তিও কেড়ে নিতে পারে এই রোগ। তাই চিকিৎসকেরা একে ‘সাইলেন্ট থিফ’ বলে থাকেন।
চোখের মধ্যে যে অংশ দিয়ে তরল চলাচল করে, তার পথ বন্ধ হয়ে গেলে তরল জমে চোখের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। বিশেষ করে অপটিক স্নায়ুতে চাপ বাড়তে থাকলে ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হতে থাকে। পরে এটাই অন্ধত্ব ডেকে আনে।
প্রাথমিকভাবে ক্ষতিটা শুরু হয় পরিধির চারপাশ থেকে। তাই গ্লুকোমায় আক্রান্ত রোগীদের ‘সাইড ভিশন’ নষ্ট হতে থাকে। চোখের ভেতর পানি তৈরি হতে থাকে, অথচ বেরোনোর জায়গা পায় না।
এর ফলেই তা দুর্বল জায়গায় চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের গ্লুকোমা হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। এ ছাড়া দীর্ঘদিন কোনো স্টেরয়েড–জাতীয় ওষুধ সেবন করলে, চোখে কোনো আঘাত পেয়ে থাকলে গ্লুকোমায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
প্রাথমিক লক্ষণগুলো কী
দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যাওয়া।
চোখ থেকে অত্যধিক পানি পড়া।
চোখ লাল হয়ে যাওয়া।
আলোর দিকে তাকালে চোখে ভীষণ ব্যথা হওয়া।
চোখের পাতা এঁটে যাওয়া, চোখ খুলতে না পারা।
চোখের চিকিৎসক একবার পাওয়ার সেট করে দেওয়ার পরে সাধারণত আর এক-দেড় বছরের মধ্যে তা বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে না। তবে যদি মাস কয়েক যাওয়ার পর থেকেই দেখতে অসুবিধা হয়, কিংবা ঘন ঘন পাওয়ার বাড়ে, তাহলে সন্দেহ করতে হবে, তা গ্লুকোমার কারণে হতে পারে। এই রোগে আক্রান্ত হলে সম্পূর্ণ সারানো সম্ভব নয়। তবে সময়মতো ধরা পড়লে চিকিৎসার মাধ্যমে অসুখের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
অধ্যাপক ডা. ইফতেখার মো. মুনির, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ আই হসপিটাল, মালিবাগ, ঢাকা