ত্বকের দাদ রোগ

রিংওয়ার্ম বা একধরনের ছত্রাক সংক্রমণকে চলতি ভাষায় দাদ বলা হয়। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এটি ডার্মাটোফাইটোসিস। এটি একটি সংক্রামক রোগ। শিশু থেকে বয়স্ক—সবাই এতে আক্রান্ত হতে পারে। দাদ শরীরের যেকোনো অংশেই হতে পারে। শীতের শুরুতে ও শীতকালে এর প্রাদুর্ভাব বাড়ে।

ধরন

সংক্রমণের স্থান অনুসারে দাদের আলাদা আলাদা নাম রয়েছে। টিনিয়া ক্রুরিস হলো কুঁচকির দাদ। টিনিয়া ক্যাপাইটিস মাথার ত্বকে হয়। টিনিয়া কর্পোরিস পিঠ, বুক, পেট বা হাত–পায়ের দাদ। টিনিয়া পেডিস বা অ্যাথলেটস ফুট পায়ের পাতার দাদ। টিনিয়া আঙ্গুয়াম হয় নখে।

লক্ষণ

  • দাদ হলে সাধারণত চামড়ার ওপর গোলাকার ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এটি দেখতে অনেকটা চাকার মতো, যার কিনার সামান্য উঁচু হয়। যতই দিন যায়, চাকার পরিধি তত বাড়তে থাকে, আর কেন্দ্রের দিকে বা ভেতরের দিকে ভালো হয়ে যেতে থাকে।

  • ক্ষতস্থান কখনো খুশকির মতো হয়। কখনো কখনো পানিভর্তি দানা ও পুঁজভর্তি দানা দেখা দেয়। ক্ষতস্থান খুব বেশি চুলকায়।

  • মাথায় দাদ হলে আক্রান্ত স্থানের চুল পড়ে যায়।

  • কোমরে বা কুঁচকিতে হলে চামড়া সাদা ও পুরু হয়ে যায়।

  • নখে হলে নখ অস্বচ্ছ ও ভঙ্গুর হয়ে যায়।

  • দাদ চুলকালে সেখান থেকে কষ পড়তে থাকে।

কীভাবে ছড়ায়

সাধারণত ঘামে ভেজা শরীর, অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন ত্বক, দীর্ঘ সময় ভেজা বা আর্দ্র ত্বকে দাদ হয়। অতিসহজেই এটি রোগীর শরীর থেকে অন্যের শরীরে বিস্তার লাভ করতে পারে।

রোগীর চিরুনি, তোয়ালে, বিছানা ইত্যাদি ব্যবহার করলে বা আক্রান্ত রোগীর জামাকাপড় পরলেও এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আবার রোগাক্রান্ত পোষা বিড়ালের মাধ্যমে বেশি ছড়ায়।

কী করবেন

  • এ চর্মরোগ অত্যন্ত ছোঁয়াচে। তাই পরিবারের কারও দাদ হলে সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসা শুরু করতে হবে।

  • তবে জীবনধারার পরিবর্তন করে দাদ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। দৈনন্দিন জীবনে পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

  • সংক্রমিত স্থান স্পর্শ করার পর সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিন, যাতে সংক্রমণ দেহের অন্যত্র না ছড়ায়।

  • সংক্রমিত স্থান পরিষ্কার রাখতে বারবার ধুয়ে নিন। অন্যের জিনিস ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।

ডা. জাহেদ পারভেজ, সহকারী অধ্যাপক, চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল