নবজাতককে কোলে তোলার সময় ঝোঁকা যাবে না। পিঠ সোজা রাখুন। শিশুকে বিছানায় রাখতে প্রয়োজনে কারও সাহায্য নিন।
সিজারিয়ান অপারেশনের পর নারীরা কোমরব্যথায় ভোগেন না, এমনটা খুব কমই হয়। এই ব্যথা কয়েক মাস, এমনকি বছরব্যাপীও থাকতে পারে।
গর্ভাবস্থায় হরমোনের নানা পরিবর্তন হয়। এর পাশাপাশি নানা ধরনের শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন দেখা দেয়। সন্তান জন্মদানের সময় রিলাক্সিন নামক হরমোন নিঃসৃত হয়। এই হরমোনের প্রভাবে শরীরের জয়েন্ট বা সন্ধি ও লিগামেন্ট কিছুটা আলগা হয়ে যায়, যাতে গর্ভের শিশুকে ধাক্কা দিয়ে বের করা সহজ হয়। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রসব হলেও এই হরমোন নিঃসৃত হয়।
জয়েন্ট ও লিগামেন্ট আলগা হলে একটু বেশি কাজকর্মে অনেক সময় কোমরে ব্যথা অনুভূত হয়। তবে স্বাভাবিক প্রসব হলে এটি বেশি দিন থাকে না। কিন্তু সিজারিয়ানের পর কোমরে চেতনানাশক দেওয়া ও অন্যান্য কারণে ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
সন্তান প্রসবের পর কোমরব্যথার অন্যতম কারণ হলো অতিরিক্ত ওজন বহন। গর্ভাবস্থায় ওজন বৃদ্ধির কারণে গর্ভবতী নারীর স্বাভাবিক চলাফেরায় যে ভারসাম্যের কেন্দ্রবিন্দু থাকে, তা স্থানান্তরিত হয়ে মেরুদণ্ড ও কোমরে চাপ পড়তে পারে।
সন্তান প্রসবের পর অনেকেই আর আগের ওজনে ফিরতে পারেন না। তাই ব্যথা রয়েই যায়। সন্তানকে সঠিকভাবে কোলে না নেওয়ার কারণেও কোমরে ব্যথা হতে পারে।
দীর্ঘ সময় ধরে স্তন্যপান করানোর কারণে মেরুদণ্ডে চাপ পড়ে এবং ঘাড়ব্যথা বা কোমরব্যথা হতে পারে। বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় যদি দেহভঙ্গি সঠিক না থাকে, বিশেষ করে যদি মায়ের কাঁধ বাচ্চার দিকে ঝুঁকে থাকে, তাহলেও কোমরব্যথা হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
সিজারিয়ানের সময় সাধারণত এপিডুরাল বা স্পাইনাল ব্লক দেওয়া হয়। এপিডুরাল বা স্পাইনাল ব্লক ব্যবহার করার একটি জটিলতা হলো, প্রসবের পর মেরুদণ্ডের কাছাকাছি অবস্থিত মাংশপেশিকে শক্ত হয়ে যাওয়া বা স্পাজম হওয়া। মাংশপেশির এই অস্বাভাবিকতা প্রসবের পর কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস থাকতে পারে। যার কারণে কোমরব্যথা হয়।
নবজাতককে কোলে তোলার সময় ঝোঁকা যাবে না। পিঠ সোজা রাখুন। শিশুকে কোল থেকে নামিয়ে বিছানায় বা সমতলে রাখতে প্রয়োজনে কারও সাহায্য নিন।
শিশুকে বুকের দুধ দেওয়ার সময় পিঠ সোজা রাখুন। এ সময় উপযুক্ত জায়গা বেছে নিন। সোজা হয়ে বসে কোলে বালিশ নিন। এরপর বালিশের ওপর সন্তানকে রেখে দুধ খাওয়াতে পারেন।
হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করলে মাংশপেশির টান খানিকটা কমে যায়। প্রয়োজনে কোমরে হট ওয়াটার ব্যাগ দিয়ে সেঁক দিতে পারেন।
খুব বেশি চলাফেরা করলে কোমরব্যথা আরও বেড়ে যেতে পারে।
বিশ্রাম নিন, যখনই সময় পাবেন, একটু ঘুমিয়ে নিন। বিশেষ করে প্রথম ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা বিশ্রাম জরুরি।
অস্ত্রোপচারের পর প্রচুর পানি খাবেন। ব্যথা যদি দীর্ঘমেয়াদি হয়, তাহলে একজন ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
এম ইয়াছিন আলী, চেয়ারম্যান অ্যান্ড চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল