বাইরে গেলে মাস্ক পরুন
বাইরে গেলে মাস্ক পরুন

বায়ুদূষণের শহরে নিজেকে যেভাবে সুরক্ষিত রাখবেন

দিন দিন খারাপ হচ্ছে ঢাকা শহরের বায়ুর মান। আশঙ্কার বিষয় হলো, দূষিত বায়ুর ক্ষতিকর প্রভাবে শ্বাসনালি ও ফুসফুসের নানা সমস্যায় পড়ছেন এই শহরের বাসিন্দারা। কেন জানেন? কারণ, বাতাসে ক্ষতিকর কণার উপস্থিতির কারণে শ্বাসনালির সুরক্ষা কোষগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়। তাই জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।

দীর্ঘ মেয়াদে অনেককেই আজকাল শ্বাসের কিছু সমস্যা ও কাশিতে ভুগতে দেখা যায়। বায়ুদূষণের কারণে অ্যাজমা ও ফুসফুসের অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি রোগ হওয়ার আশঙ্কাও সৃষ্টি হয়। আর যাঁরা আগে থেকেই এসব সমস্যায় আক্রান্ত, বায়ুদূষণের কারণে তাঁদেরও ভোগান্তি বাড়ে। বুঝতেই পারছেন, এত সব ঝক্কি থেকে নিজেকে বাঁচানো প্রত্যেকের জন্যই ভীষণ জরুরি। পরামর্শ দিয়েছেন ধানমন্ডির পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডা. সাইফ হোসেন খান।

অন্দরে বিশুদ্ধতা

যখন বাতাস তুলনামূলকভাবে বেশি অস্বাস্থ্যকর থাকে, তখন দরজা–জানালা বন্ধ রাখুন। যে সময়টায় মশা নিধনের জন্য ওষুধ প্রয়োগ করা হয় পথে পথে, সেই সময়েও জানালা-দরজা বন্ধ রাখা উচিত। বাকি সময় জানালা ও বারান্দার দরজা খোলা রাখুন। বাড়িতে বাতাস প্রবাহের ব্যবস্থা রাখুন। আর রান্নাবান্নার সময় অবশ্যই রান্নাঘরের জানালা খোলা রাখুন।

  • মনে রাখবেন, যত বেশি সময় চুলা জ্বালানো হবে, ততই ঘরের বাতাস দূষিত হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে। তাই প্রয়োজনের অতিরিক্ত পদ রান্না থেকে বিরত থাকুন।

  • কৃত্রিম সুগন্ধির ব্যবহার সীমিত রাখুন।

  • মশা তাড়াতে কয়েল না জ্বালিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।

  • ঘরে, বারান্দায়, ছাদে কিংবা বাড়ির আশপাশে গাছ লাগান। যত বেশি গাছ থাকবে, বাতাস তত বেশি বিশুদ্ধ হবে।

  • ঘরে বা ঘরের কাছে কোথাও বর্জ্য পোড়াবেন না।

  • বিছানার চাদর, সোফা, শতরঞ্জি, কার্পেট, পাপোশ সবই পরিষ্কার রাখুন নিয়মমাফিক, যাতে এগুলোয় বাতাসের ধুলাময়লা না জমতে পারে। বিশেষ করে খুব সহজেই কার্পেটে ধুলাময়লা জমে যায়। এ থেকে রোগবালাইয়ের ঝুঁকি বাড়ে।

  • ঘরে বা ঘরের আশপাশে ধূমপান করবেন না।

  • ঘরে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন (ফ্রেশনার নয়)।

  • বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অপচয় রোধ করুন। এসব শক্তি উৎপাদন করতেও কিন্তু উৎপাদনস্থলের বাতাস দূষিত হয়।

ঘরের বাইরে যখন

প্রয়োজন ছাড়া বেরোবেন না। সম্ভব হলে ঘর থেকে কেবল সেই সময় বের হবেন, যখন বাতাসে দূষণ কম। তবে অধিকাংশ মানুষের পক্ষেই এই নিয়ম মেনে চলা সম্ভব নয়। তাই মাস্ক পরার অভ্যাস ফিরিয়ে আনুন। বাইরে গেলেই মাস্ক পরুন। হোক তা কাপড়ের মাস্ক। তবু বেশ সুরক্ষিত থাকবেন। মাস্কও রাখুন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন।

ছড়িয়ে দিন সচেতনতা

যেসব কাজে বায়ুদূষণ হয়, সেগুলো থেকে নিজে বিরত থাকুন, অন্যদেরও বিরত

রাখুন—

  • প্রকাশ্য ধূমপান একটি অপরাধ। কিন্তু কেন অপরাধ, তা হয়তো অনেকে উপলব্ধি করতে পারেন না। একজনের সিগারেটের ধোঁয়ার পরোক্ষ প্রভাবে অন্য একজন মানুষ অসুস্থ হচ্ছেন, এ বিষয়টি অনুধাবন করা জরুরি। অথচ এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদটুকুও হতে দেখা যায় না। কালেভদ্রে কেউ প্রতিবাদ করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তিনি হয়ে ওঠেন হাসি কিংবা বিরক্তির পাত্র। এই অবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন।

  • বর্জ্য পোড়ানো কিংবা ফিটনেসবিহীন যানবাহন চালনার ব্যাপারেও সচেতনতা আবশ্যক।

  • ব্যক্তিগত গাড়ির পরিবর্তে গণপরিবহন ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি হলে বায়ুদূষণ অনেক কমে যাবে।

  • কলকারখানা ও নির্মাণাধীন ভবন বায়ুদূষণের অন্যতম উৎস। এলাকায় এ ধরনের উৎস থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করুন। প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা নিন।

  • এলাকায় গাছ লাগানোর ব্যবস্থা করুন। উদ্ভিদ ও প্রাণীর প্রতি সংবেদনশীল আচরণের চর্চা গড়ে তুলুন। তাতে পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক থাকবে। দূষণ কম হবে।

  • এ ছাড়া ৬৫ বছর পেরোনো ব্যক্তিদের নিয়মমাফিক নিউমোনিয়া ও ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।