ঘুমের পাশাপাশি ত্বকে যে রূপচর্চার সামগ্রী নিয়মিত প্রয়োগ করেন, সেদিকে নজর দেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ
শীতকালে নিয়মিতই মুখে ব্রণ, চামড়ায় কালো ছোপ, চোখে ডার্ক সার্কেলের মতো সমস্যা তৈরি হয়। ত্বকের এসব সমস্যার সঙ্গে পারিপার্শ্বিক আবহাওয়া ও দূষণ দায়ী। তবে অনেক সময় হরমোনের ওঠানামাও এর পেছনে কাজ করে। নারীদের মধ্যে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা সামগ্রিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম, হাইপোথাইরয়েডিজম, বয়ঃসন্ধি, অন্তঃসত্ত্বা অবস্থা এবং ঋতুবন্ধের সময় হরমোনের ওঠানামার জেরে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা দেখা দেয়।
ত্বককে সুস্থ সজীব রাখতে হলে এর শত্রুগুলোকে চেনা দরকার। কী কী বস্তু বা বিষয় ত্বকের ক্ষতি করে জেনে নিন—
১. গবেষণায় দেখা গেছে, চিনি বা মিষ্টিযুক্ত পানীয় শরীরে ইনসুলিন অকার্যকারিতা বাড়ায়, বাড়িয়ে দেয় স্থূলতা, পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমের মতো জটিলতা। ত্বক ভালো রাখতে চিনি এবং সরল শর্করা বাদ দিন। শর্করা পেতে হলে এগুলোর বদলে প্রচুর ফলমূল খান।
২. অবসাদ আর মানসিক চাপ দ্বারা প্রভাবিত দুটি প্রধান হরমোন হলো কর্টিসল এবং অ্যাড্রিনালিন। কর্টিসলকে ‘স্ট্রেস হরমোন’ বলা হয়। অ্যাড্রিনালিন হলো ‘ফাইট-অর-ফ্লাইট’ হরমোন। শরীরকে তাৎক্ষণিক বিপদে সাড়া দেওয়ার জন্য শক্তি সরবরাহ করে। অবসাদের ফলে এই হরমোনের ওঠানামার প্রভাব পড়ে ত্বকেও। ক্লান্তি, নিদ্রাহীনতা ও অবসাদ ত্বককে নির্জীব করে।
৩. ত্বক ভালো রাখতে খাদ্যতালিকায় প্রোটিন থাকা অপরিহার্য। প্রোটিন অ্যামাইনো অ্যাসিড সরবরাহ করে, যা শরীর নিজে থেকে তৈরি করতে পারে না। প্রোটিন হরমোন নিঃসরণকে প্রভাবিত করে, ক্ষুধা এবং খাদ্যগ্রহণকেও নিয়ন্ত্রণ করে। পেশি, হাড় এবং ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য প্রতিদিন মাছ, ডিম, সবজি প্রভৃতি খাওয়া উচিত। ত্বককে সতেজ ও টানটান রাখতে যে কোলাজেন দরকার হয়, তা প্রোটিন দিয়েই তৈরি। তাই কেউ খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলেও যথেষ্ট প্রোটিন খাবেন।
৪. শরীরকে সঠিক পুষ্টি দেওয়ার পাশাপাশি ত্বকে যে রূপচর্চার সামগ্রী নিয়মিত প্রয়োগ করেন, সেদিকে নজর দেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ। প্যারাবেন, সালফেটের মতো ক্ষতিকর রাসায়নিক ইস্ট্রোজেন নামক হরমোনকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই এই ধরনের রাসায়নিকযুক্ত সৌন্দর্য পণ্যগুলোর থেকে দূরে থাকাই ভালো। বিশেষ করে যে সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করছেন, তা যেন শরীরকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে না পারে, সেদিকে নজর রাখুন। প্রসাধনী ব্যবহার করলে তা অবশ্যই দিনশেষে তুলে ফেলতে হবে। ত্বকের পরিচর্যায় অর্গানিক বা প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো।
লেখক:
সহকারী অধ্যাপক, চর্ম, যৌন ও হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল।