প্রায়ই কি শরীরের হাড়ের জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধিগুলোতে তীব্র ব্যথা হয়? বিশেষজ্ঞরা বলেন, এটি শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়ার অন্যতম লক্ষণ। নির্দিষ্ট কিছু খাবার, যেমন মাছ, মাংস, চিনি, কোমল পানীয় ইত্যাদি সংশ্লেষণের ফলে শরীরে ইউরিক অ্যাসিড উৎপন্ন হয়। আর শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে তা অস্থিসন্ধিগুলোতে গিয়ে বাসা বাঁধে। তখনই শুরু হয় তীব্র ব্যথা। আমাদের রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের স্বাভাবিক মাত্রা প্রতি ডেসিলিটারে ৩ দশমিক ৫ থেকে ৭ দশমিক ২ মিলিগ্রাম। এর বেশি হলে অবশ্যই তা কমানোর চেষ্টা করতে হবে। স্বস্তির বিষয় হলো, প্রকৃতিতে এমন কিছু অতিপরিচিত উপাদান আছে, যা ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক। দেখে নিন ছয়টি পানীয়র খোঁজখবর ও প্রস্তুতপ্রণালি। এসব আপনি ঘরেই তৈরি করতে পারবেন আর নিয়মিত খেলে ইউরিক অ্যাসিড থাকবে নিয়ন্ত্রণে।
১. লেবু-পানি
লেবুতে আছে প্রচুর ভিটামিন সি, যা ইউরিক অ্যাসিড ভেঙে ফেলে এবং শরীর থেকে বাড়তি ইউরিক অ্যাসিড বের করে দেয়। অর্ধেকটা লেবুর রস এক গ্লাস গরম পানিতে মিশিয়ে লেবু-পানি তৈরি করুন। এভাবে তৈরি করা লেবু-পানি প্রতিদিন সকালে খান।
২. হলুদ মিশ্রিত দুধ
হলুদে আছে কারকিউমিন। এটি প্রদাহ দূর করতে এবং ইউরিক অ্যাসিড কমাতে অত্যন্ত কার্যকর। ঘুমানোর আগে এক গ্লাস গরম দুধে এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে খেয়ে ফেলুন। এই পানীয় আপনার শরীরে ইউরিক অ্যাসিড কমাবে।
৩. শসার জুস
গরমে স্বস্তি দেয় শসা। শসার প্রায় ৯০ শতাংশই পানি। এ কারণে শসা আমাদের শরীর থেকে ইউরিক অ্যাসিডসহ অন্যান্য দূষিত পদার্থ বের করে দিতে বেশ কার্যকর। শসায় বিভিন্ন রোগ সৃষ্টিকারী উপাদান পিউরিন নেই বললেই চলে। একটা আস্ত শসা সামান্য পানির সঙ্গে ব্লেন্ড করে জুস তৈরি করুন। গরমের দিনে এই জুস খেয়ে ইউরিক অ্যাসিড কমান, থাকুন চনমনে।
৪. তরমুজের জুস
তরমুজ কেবল প্রাণ জুড়ায়, তা–ই নয়; উচ্চমাত্রার ইউরিক অ্যাসিডের বিরুদ্ধে লড়াই করার বেলায় একে আপনি বলতে পারেন ‘গোপন অস্ত্র’। তরমুজের প্রধান উপাদান পানি। তাই তরমুজ খেলে কিডনির কার্যকারিতা বাড়ে এবং অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। তরমুজে ক্ষতিকর পিউরিনের পরিমাণ খুবই কম। তরমুজের মৌসুমে পারলে প্রতিদিন এক গ্লাস তরমুজের জুস খান। এতে শরীরে পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে, ইউরিক অ্যাসিড থাকবে নিয়ন্ত্রণে।
৫. আদা–চা
আদায় আছে প্রচুর প্রদাহরোধী উপাদান, যা ইউরিক অ্যাসিড কমায়। কয়েক টুকরা টাটকা আদা নিয়ে পানিতে সেদ্ধ করুন। তারপর ওই পানিতে সামান্য মধু মিশিয়ে চা তৈরি করুন। এই চা অস্থিসন্ধির ব্যথা দূর করবে।
৬. গ্রিন টি
গ্রিন টিকে বলা যেতে পারে ছোট্ট এক কাপ ওষুধ। গ্রিন টি শুধু শরীর ও মনকে প্রশান্তই করে না, এতে পাবেন প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট। এ কারণেই গ্রিন টি শরীর থেকে অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড বের করে দেয়। প্রতিদিন গ্রিন টি খেলে কিডনির কার্যকারিতা বাড়ে।
ঘরে বসে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা পরীক্ষা করার কোনো উপায় নেই। তবে শরীরে কিছু লক্ষণ দেখা দিলে বুঝে নিতে হবে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেছে। যেমন অস্থিসন্ধিগুলোতে ব্যথা হওয়া, ফুলে যাওয়া, লাল হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। বিশেষ করে পায়ের বুড়ো আঙুল ব্যথা, ফোলা, লাল হয়ে যাওয়া—এসব গেঁটেবাতের লক্ষণ। ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে গেঁটেবাত দেখা দেয়। বিশেষত সাতসকালে যদি অস্থিসন্ধিগুলোতে অস্বস্তিবোধ হয়, অবশ লাগে, তাহলে এ সবই ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ হিসেবে ধরে নেওয়া চলে। তবে লক্ষণ দেখলে নিজে থেকে কোনো ওষুধ খেতে যাবেন না, অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সূত্র: ওয়েবএমডি